অনিলিখা ও গন্ধরহস্য – অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী Anilikha O Gondha Rahassa by Abhijnan Roychowdhury

অনিলিখা ও গন্ধরহস্য - অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী Anilikha O Gondha Rahassa by Abhijnan Roychowdhury
অনিলিখা ও গন্ধরহস্য - অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী Anilikha O Gondha Rahassa by Abhijnan Roychowdhury

অভিজ্ঞান রায়চৌধুরীর অনিলিখা সিরিজের আরো একটি বড় গল্প অনিলিখা ও গন্ধরহস্য পড়ুন।

অনিলিখা ও গন্ধরহস্য - অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী Anilikha O Gondha Rahassa by Abhijnan Roychowdhury
অনিলিখা ও গন্ধরহস্য আসল কভার নয়।

অনিলিখা ও গন্ধরহস্য বড় গল্পঃ

এরকম অসাধারণ ডেভিলের টেস্ট পাচ্ছিস না। তোর কোভিড়ও হতে পারে। প্রতীকের দিকে তাকিয়ে রাগত দৃষ্টিতে বিশ্বজিৎদা বলে উঠল। তারপরে এ নিয়ে আর কোনো বাক্যব্যয় না করে আবার নিজের প্লেটে থাকা ডেভিলে মনঃসংযোগ করল।

আমরা আজ কোভিডের ভয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দূরে দূরে বসে আছি। মুখে মাস্ক। সেটা পরে এরকম ডেভিল উপভোগ করা এমনিতেই বেশ শক্ত। তার উপরে বিশ্বজিৎদার এমন মন্তব্য শুনে আমরা সবাই প্রতীকের থেকে আরও দূরে সরে বসার চেষ্টা করলাম। বাড়ি থেকে প্রচুর বকাবকি খেয়ে বেরিয়েছি। কিছু হলে আর দেখতে হবে না।

লোকটা আগে আগে যাচ্ছিল – অভিজ্ঞান রায় চৌধুরী Lokta Age Age Jachchilo by Abhigyan Roy Choudhury

গত তিন মাসে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে শনিবারের আসরও। আমরা সবাই ঘরবন্দী। লকডাউন বাড়ছে তো বাড়ছেই। প্রথমে ভেবেছিলাম কয়েকদিন। এখন সেটা কয়েক মাসে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল রাতে হঠাৎ মেসেজ পেলাম বিশ্বজিৎদার কাছ থেকে। এই শনিবার আবার আড্ডা হবে। সঙ্গে কিছু নিয়মাবলী মাস্ক পরতে হবে, টেম্পারেচার বা অন্য কোনোরকম কোভিডের সিম্পটম থাকলে আসা চলবে না, মুখে হাত দেওয়া চলবে না, হাঁচি বা কাশির আগে হাত তুলতে হবে—এরকম আঠেরোটা নিয়ম।

ব্যস। আর কে দেখে। সত্যি কথা বলতে কি আমরা সবাই হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। এ কয়েক মাসে যা অবস্থা হয়েছে, তাতে এরপরে চিড়িয়াখানায় গেলে জীবজন্তুদের কষ্ট অনেক বেশি অনুভব করতে পারব।
তাছাড়া একটা বড় সুবিধে ছিল। প্রতীকদের এই রামতনু বোস লেনের বাড়িতে এমন কিছু ঘর আছে, যেখানে রীতিমতো কনফারেন্স করা যায়। এক-একটা ঘরের সাইজ এখনকার ফ্ল্যাটের থেকে বড়।
সময়ের আধ ঘণ্টা আগেই আমরা সবাই এসে জমায়েত হয়েছি। বিশ্বজিৎদার পাঠানো আঠেরোটা নিয়মাবলি সতর্কভাবে মেনে দুরে দূরে বসে আছি। সব কিছু কন্টাক্টলেস। মাসিমা অর্থাৎ প্রতীকের মা ডেভিল করেছেন। সবার জন্য আলাদা প্লেট। সেটা খেয়েই প্রতীক মাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, কোনো টেস্ট নেই মা।

শারদীয়া পত্রিকা ১৪২৪ (২০১৭) পিডিএফ Sharodia Patrica 1424 (2017) pdf

সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজিৎদার এই মন্তব্য। আমিও অবশ্য বিশ্বজিৎদার সঙ্গে সহমত। এরকম ভালো ডেভিলকে টেস্টলেস বলা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
সবাই এসে গেছে। এক অনিলিখাদি বাকি। অনিলিখাদি জেনারালি ঘড়ি ধরে ঠিক সময়ে আসে। তাই আর আসবে না ধরে নিয়ে আমরা বেশ হতাশ। অনিলিখাদি না থাকলে যেন শনিবারের আসরের অর্ধেক আনন্দ থাকে না।

একটু রাগও হচ্ছে অনিলিখাদির উপরে। অমন একটা ডানপিটে মেয়ে কোভিডকে এত ভয় পায়।
লকডাউনের ঠিক আগে আগে অনিলিখাদি সুইডেন থেকে ফিরে এলেও চোদ্দোদিন কোয়ারান্টাইনে ছিল। তখনও দেখা হয়নি।

বিশ্বজিৎসা ডেভিলে একটা বড় কামড় দিয়ে মাসিমা মানে, প্রতীকের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, অসাধারণ হয়েছে মাসিমা। কোভিড নয়, আসলে সর্দি-কাশির জন্য নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতীক স্বাদ পাচ্ছে না।
বুঝতে পারলাম কোভিড কথাটা উল্লেখ করে মাসিমাকেও একটু নার্ভাস করে ফেলেছে বিশ্বজিৎদা। এখন পরিস্থিতি একটু হালকা করার চেষ্টা করছে।

ইতিমধ্যে এক অত্যন্ত পরিচিত হাঁটার শব্দ, ঘরের বাইরে চটি খোলার আওয়াজ ও চুড়ির আওয়াজ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি অনিলিখাদি ঘরে ঢুকছে। নীল জিন্সের উপরে লাল টপ। বেশ পরিপাটি, সাজ। মুখে অবশ্য মাস্ক। ধীরেসুস্থে ঢোকার ধরন দেখে বোঝা যায়। আজ অন্যদিনের মতো তাড়া নেই।

মুহুর্তে ঘরের পরিবেশ বদলে গেল। গরমে হাঁসফাঁস পরিবেশের মধ্যে যেন হঠাৎ এক ঝলক ঠাণ্ডা নির্মল হাওয়া। অনিলিখাদির সঙ্গে এক মাস দেখা না হলেও এর মধ্যে ফোন করে করে আমাদের প্রত্যেকের খোঁজখবর নিয়েছে। সবার সঙ্গে ‘কে কেমন আছি এরকম গোছের কিছু প্রশ্ন করে একটু দূরে রাখা একটা সোফায় বসে অনিলিখাদি বলে উঠল, উফ, এখানেও কোভিড নিয়ে আলোচনা! আমার মতে ভারতীয়দের খুব ভয়ের কিছু নেই। ভারতীয়দের ইমিউনিটি, জিনের গঠন বৈচিত্র্য এবং এবং যা কিছু কিছু খাদ্যভাস আছে, তাতে ডায়াবেটিসের মতো কিছু জটিলতা না থাকলে খুব সিরিয়াস কিছু হবে না। সেজন্যই ডেথ রেট এত কম। এটাকে সঙ্গে নিয়েই এখন আমাদের বাঁচতে হবে।

এতদিন বাদে জমজমাট আড্ডা। তারমধ্যে আবার অনিলিখাদি। যা হয় আর কি। নেক্সট এক ঘন্টা কোচিহ্ন আপনা থেকে । কী করেছি—এরকম নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা হল। অনিলিখাদি মাঝে মধ্যে কথা বললেও মূলত সবার কথা শুনা অনিলিখাদির একটা বৈশিষ্ট্য। চপ করে বসে সবার কথা শোনে। কিন্তু কথা যখন বলে, তখন সেটা না শুনে উপায় থাকে না। কোভিডের জন্য শুনেছি বিশ্বজিৎদার চাকরি গেছে। কিন্তু বিশ্বজিৎদার চীনের প্রতি কেন জানি এক অজানা দুর্বলতা আছে। এমনকী চায়না বলে একটা কুকুরও আছে।

বিশ্বজিৎদা বলে উঠল, জানি না কেন কোভিডের জন্য স চীনকে দোষ দিচ্ছে। বেচারারা নিজেরাও তো ভূগছে। যে কোনে দেশ থেকে এটা ছড়াতে পারত। হ্যাঁ, মানছি ওদের ওখানে যেরকম ওপেন মার্কেট, সেখানে বিভিন্ন প্রাণীর রক্ত মিশে মিউটেট করে নতুন ভাইরাস হওয়ার চান্স থাকে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে ওরা ইচ্ছে করে কিছু করেছে।

আমরা প্রায় সবাই এখন চীন বিরোধী। কোভিড আর লাদাখে চীনের আক্রমণের পরে চীন নামটা শুনলে আমরা খেপে উঠি। বেচারা চীনা এর পরে যা হয় আর কি! আমরা সবাই মিলে বিশ্বজিৎদারে অভিমন্যুর মতো ঘিরে ধরে আক্রমণ শুরু করলাম।
বিশ্বজিৎদার শোচনীয় অবস্থার মধ্যে অনিলিখাদি হঠাৎ ধরে বলে উঠল, এবারে এমন বিষয় নিয়ে একটা ঘটনা বলি, যেটা নিয়ে বিশ্বজিৎ কিছু আগে বলছিল।
—কী নিয়ে? অবাক হয়ে তাকাল বিশ্বজিৎদা।

ওই যে বলছিলে না, যে স্বাদ চলে গেছে প্রতীকের। এটা নিশ্চয়ই জানো স্বাদের আশি শতাংশ আসে ঘ্রাণশক্তির থেকে। ইনফ্যাক্ট আমাদের স্বাদের অনুভুতি খুব দুর্বল। সেখানে ঘ্রাণশক্তি তেমনই প্রবল। তাই ঘ্রাণশক্তি হারালে আমরা সেন্স অফ টেস্ট হারাই, সেটা জানো নিশ্চয়ই। সুইজারল্যান্ডে একটা লোকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেই ঘ্রাণশক্তি নিয়েই আজকের গল্প।
আমরা সবাই অনিলিখাদির গল্পের অপেক্ষায় ছিলাম। জানি টপিক যাই হোক না কেন, সব ঘটনাই খুব ইউনিক আর রোমহর্ষক হয়। একটা ম্যাগনেটিক আকর্ষণ থাকে।
একসঙ্গে চিৎকার করে উঠলাম, শিগগির বলো।’

বিশ্বজিৎদা শুধু ঠোটের কোণে একটু হাসি ফুটিয়ে বলল, লকডাউনে অনিলিখার গল্পের স্টক শেষ হয়ে গেছে দেখছি। শেষে ঘ্রাণশক্তি!
অনিলিখাদি কথাটা শুনে মুচকি হেসে বলতে শুরু করল- ব্যান হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী। কিন্তু অনেকেই সে শহরকে চেনে না। সুইজারল্যান্ড বলতে ভাবে শুধু জুরিখ, বা জেনেভার কথা। ব্যার্ন শহরের ইতিহাসের সঙ্গে আমার সবথেকে প্রিয় বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের অনেক কাজ জড়িয়ে আছে। তাই ব্যার্ন শহর দেখার একটা প্রবল আগ্রহ ছিল। সে সুযোগ হঠাৎ পেয়ে গেলাম।
এটা বছর দুয়েক আগের ঘটনা।

লিফ স্টর্ম pdf – গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস Leaf Storm Bangla PDF – Gabriel Garcia Marquez

বিকেল চারটে নাগাদ আমার জুরিখের কাজ শেষ হয়ে গেল। পরের দিন আবার বারোটায় মিটিং জেনেভায়। নেসলে কোম্পানির চিফ টেকনোলজি অফিসারের সঙ্গে। সকালে যাওয়া যায়, কিন্তু সুপার ফাস্ট ট্রেনেও তিন ঘণ্টা লাগবে। ব্যার্ন জুরিখ আর জেনেভার প্রায় মাঝামাঝি। সেদিন রাতে ব্যার্নে চলে গেলে আইনস্টাইনের বাড়ি, সেই বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার ইত্যাদি দেখে নেওয়া যাবে। সকালে ওখান থেকে ঘণ্টা দেড়েকের ট্রেনে জেনেভা চলে যাওয়া যাবে। মিটিং-এর অনেক আগে পৌঁছে যাব।

সেই প্ল্যানমাফিক ধ্যানে পৌঁছলাম সন্ধে সাতটা নাগাদ। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক। ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। ব্যার্ন যোগবান হয় বা সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে হাঁটাপথ আমার হোটেল। হোটেল না যেন এক ক্যাসল। আশেপাশের সব বাড়িও প্রায় মধ্যযুগের। নিরপেক্ষ দেশ হওয়ার জন্য দুই বিশ্বযুদ্ধই ব্যার্নের সৌন্দর্যে কোনো আঘাত হানেনি।

হোটেলে জিনিসপত্র রেখে প্রথমেই গেলাম আইনস্টাইনের বাড়ি দেখতে। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবু বাইরে থেকে দেখলাম। ওঁর বাড়ি থেকে ক্লক টাওয়ার মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ।
জিটব্লগ ক্লকটাওয়ার। ১৯১৩ সাল নাগাদ তৈরি। রাস্তার দু-ধারে সুইস ফ্ল্যাগ লাগানো। ছোট ছোট পাথরে সাজানো রাস্তা। রাস্তার মাঝ বরাবর ট্রামলাইন গেছে। দু-ধারে সামান্য উঁচু ফুটপাথ পাথরের রাস্তার সঙ্গে প্রায় মিশে গেছে। রাস্তার ঠিক মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যযুগীয় রুকটাওয়ারটা দূর থেকে দেখা যায়। দু-ধারে ব্যারোক স্টাইলের বাড়ি। এই পথে হাঁটতে হাঁটতে আইনস্টাইনের মাথায় এসেছিল থিওরি অফ রিলেটিভিটির কথা। E = mc2 এই সূত্রও এখানে থাকতেই লেখা। এই পথটাও খুব বিখ্যাত, বলা হয় কামগ্যাসে। এটাই ছিল পুরোনো ব্যার্নের সেন্টার।

রাস্তার মধ্যে সাইকেলের জন্য আলাদা নির্দিষ্ট লেন আছে। চারদিকের মধ্যযুগীয় পরিবেশের মধ্যে দিয়ে সাপের মতো এগিয়ে চলেছে সুইস ফ্ল্যাগের রঙের মতো লাল রঙের অত্যাধুনিক চার-কামরার ট্রাম। শহরের কেন্দ্রের এই পুরো জায়গাটা ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইটের মধ্য পড়ে। এর পরেই শপিং প্রমিনেড, সেখানে অনেক সুইস চকলেট আর ঘড়ির দোকান।

হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা যাওয়ার পরে একটা বড় চত্বর খুঁজে পেলাম। খাবার টেবিল ছড়িয়ে রাখা আছে। তার চারদিকে নানান পাব-রেস্টুরেন্ট। তার মধ্যে একটা ভারতীয় রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিলাম। দেখলাম ব্যার্নের নিজস্ব জার্মান ভাষা আছে। সেটা অন্য জার্মান ভাষা থেকে একটু আলাদা।
খেয়ে উঠে আবার ঘুরে দেখতে শুরু করলাম। ততক্ষণে সূর্যাস্ত হয়ে গেছে। কিছুটা দূরে শহরের মাঝখান দিয়ে সবজেটে নীল রঙের নদী বয়ে যাচ্ছে। ‘আরা’ নদী।

পথে একটা ক্যাথেড্রাল দেখে ইটিতে হাঁটতে যে জায়গায় শেষে এসে পৌঁছলাম, সেটা একটা বিশাল বড় খোলা চতুর। সামনে অনেকগুলো ফোয়ারা। সামনে ভারি সুন্দর পুরোনো দিনের এক প্যালেস। খেয়াল করে দেখলাম আসলে ওটা সুইজারল্যান্ডের পার্লামেন্ট। তবে সেরকম কোনো সিকিউরিটি চোখে পড়ল না। অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। প্রায় দশটা। পার্লামেন্ট বন্ধ থাকলেও তার পিছন দিকে একটা ভারি সুন্দর বিশাল বাগান। বাগানটা পাহাড়ের একদম ধারে। দূরে অন্য পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে থাকা বাড়ির আলো যেন জোনাকির মতন জ্বলছে। মাঝখানে অনেক নীচ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী আরা। সব মিলিয়ে এক মোহময়ী পরিবেশ। যেন কোনো শিল্পীর ক্যানভাস।

বাগানে গিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসলাম। ঠাণ্ডা বাড়ছে। অনেক দূরে একটা প্যালেস দেখা যাচ্ছে।
শুনেছি ‘সুইস ফ্যামিলি রবিনসন’-এর লেখক ইউহান ডেভিড উইসও এখানেই থাকতেন।
এর মধ্যে হাওয়া দিতে শুরু করল। কনকনে হাওয়া। একটা বিশ্রী গা-গোলানো গন্ধ ভেসে এল বাতাসে। মনে হল যেন কিছু মরে পড়ে গেছে। ওই বেঞ্চি থেকে দূরে সরে অন্য দিকের একটা বেঞ্চিতে।
এসে বসলাম।

সামান্য ঠান্ডা লাগলেও এরকম মনোরম দৃশ্য চট করে দেখতে পাওয়া যায় না। বাগানের কিছু আলো জ্বলে উঠেছে, তবে সে আলো চারধারের অন্ধকারের অধিকার বজায় রেখেই যেন তার নিজের জায়গা করে নিয়েছে। সে দৃশ্য বিভোর হয়ে দেখছি, হঠাৎ লক্ষ করলাম আমার বেঞ্চে আমার পাশে এক মাঝবয়সি ভদ্রলোক এসে বসেছেন।

মদের গন্ধ ভুরভুর করছে সারা গা দিয়ে। চোখে ভারি ফ্রেমের চশমা। জিনসের উপরে না গোঁজা একটা সাদা নোংরা শার্ট। এসব সত্ত্বেও দেখে মনে হয় শিক্ষিত।
আমার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই হেসে বললেন, আর ইউ ফ্রম বোল?
একটু অবাক হলাম। আমাকে দেখে ইউরোপে অন্তত চট করে কেউ বাঙালি ভাবে না। বরঞ্চ স্প্যানিশ ভেবে অনেকে ভুল করে। তাও এটা জুরিখ হলে বুঝতাম। কিন্তু ব্যার্নে?

সম্মতি জানিয়ে জিগ্যেস করলাম, আপনি কি বাংলাদেশে বা ভারতে গিয়েছেন? কী করে বুঝলেন?
উনি হেসে মাথা নাড়লেন। বললেন, না, যাইনি। তবে কী কারণে বুঝলাম, সেটা তোমাকে বললে তুমি অবাকই হবে। ওই যে ওদিকের বেঞ্চি ছেড়ে এদিকে এসে বসলে না। সেটা দেখে বুঝলাম ওই ক্যালিসাস ফুলের গন্ধ তোমার সহ্য হচ্ছে না। যে কোনও বাঙালিরই একই অবস্থা হত। অথচ অন্য সবার ওই ফুলের মিষ্টি গন্ধ খুব ভালো লাগবে।
—মানে? এর সঙ্গে কোনো জেনেটিক সম্পর্ক আছে নাকি?

-ঠিক বলেছ। আসলে এটা খুব রেয়ার একটা ফুল। বাঙালিদের সবার মধ্যে একটা বিশেষ জিন আছে, যার জন্য তারা এই গন্ধ সহ্য করতে পারে না। জেনেটিক মিউটেশনের জন্য এটা হয়েছে। কারণটা কী জানি না।
আমি হেসে বলে উঠলাম, হ্যাঁ, আমিও এরকম কিছু একটা সায়েন্স জার্নালে পড়েছিলাম যে একটা বিশেষ গন্ধ আফ্রিকানদের কাছে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু তাদের বাদ দিলে প্রায় সবার খুব ভালো লাগে। ওই বিশেষ গন্ধটা তৈরি করতে অ্যান্ড্রোস্টেনন নামের শুয়োরের ফেরোমন ব্যবহার করা হয়।

এটা নাকি জেনেটিক মিউটেশনের সঙ্গে কানেক্টেড। যবে থেকে মানুষ শুয়োর প্রতিপালন শিখল ও শুয়োর খেতে শিখল, তখন থেকে নাকি এরকম মিউটেশন হয়েছে, যার জন্য ওই গন্ধ আমাদের ভালো লাগে। কিন্তু আফ্রিকানদের মধ্যে সে পরিবর্তন হয়নি।
লোকটা আমার কথা শুনে উৎসাহিত হয়ে বলল, বাহ্! তোমার তো অনেক পড়াশোনা আছে দেখছি। হ্যাঁ, এটাও খানিকটা সেরকমই। —আপনি কি এ বিষয়ে রিসার্চ করেন? গন্ধ নিয়ে?
লোকটা একটু যেন অন্যমনস্ক হয়ে বলল, হ্যাঁ, তা বলতে পারো। আগে করতাম। এখন শুধু গন্ধ বিশেষজ্ঞ বলতে পারো।

-কিন্তু এ বিষয় নিয়ে কি খুব বেশি রিসার্চের সুযোগ আছে? যদিও জানি এ নিয়ে দু-বছর আগে দুই বিজ্ঞানী নোবেল প্রাইজও পেয়েছেন। কোথায় যেন পড়েছিলাম আমরা শুধু গন্ধ শুঁকে মলিকিউলার লেভেলে দুটো উপাদানের মধ্যে তফাত করতে পারি।
লোকটা খানিকক্ষণ বিড়বিড় করে ফের বলে উঠল, তোমাকে ক’টা গল্প শোনাই। আসলে সাধারণত এমন কাউকে পাই না যে এত কিছু খবর রাখে। তুমি কে জানি না। জানতেও চাই না। এক্ষেত্রেও গল্প শোনার একটাই শর্ত হবে— আমার পরিচয় তুমি জিজ্ঞাসা করতে পারবে না।

তুমি তো জানতে চাইছিলে গন্ধ নিয়ে কী এত রিসার্চ করা যায়, তাই না? একটু থেমে নাটকীয়ভাবে বলল লোকটা, গন্ধ দিয়ে পুরোনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনা যায়। এমনকী গন্ধ দিয়ে মানুষকে খুনও করা যায়।
লোকটা সামনের দিকে তাকিয়ে গল্প বলতে শুরু করল। পাশে বসে থাকলেও মনে হচ্ছিল যেন হঠাৎ করে লোকটা অনেক দুরে চলে গেছে। হারিয়ে গেছে অন্য কোনো জগতে। এমনকী মাঝেমধ্যে জার্মান ভাষাতেও বলছিল।

এই জায়গাটা অনেকটা উঁচুতে। একটা ঘন কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছিল আমাদের চারদিকে। লোকটা তারমধ্যে যেন মাঝে মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিল।
আজ নয়, আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে একজন বলেছিল যে, মানুষ প্রাণশক্তি দিয়ে অতি সূক্ষ্ম দুই কণার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। কে আন্দাজ করতে পারো? — ডেমোক্রিটাস।
-‘আস-গে-যাইনেট!’ অর্থাৎ অসাধারণ।
-দেখো আড়াই হাজার বছর আগে বলে গেলেও কুড়ি বছর আগেও আমরা ঘ্রাণশক্তি সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানতাম না। কিন্তু সেটাই বদলে দিল আমার এক বন্ধু। তার আবিষ্কার। মানুষের সবথেকে উন্নত অনুভূতি কী জানো?
— ঘ্রাণশক্তি।

—পারফেক্ট। মানুষের মতো উন্নত ঘ্রাণশক্তি খুব কম প্রাণীর মধ্যে আছে। এর পিছনে আছে ‘অলফ্যাক্টরি এপিথেলাম রিসেপটর’। প্রায় চারশ টাইপের রিসেপটর আছে, আর পাঁচ কোটির মতো রিসেপটর সেল আছে, যারা প্রত্যেকে আবার বিভিন্ন ধরনের গন্ধ চিহ্নিত করতে পারে। তার মাধ্যমে আমরা কত ধরনের গন্ধ পেতে পারি জানো তো?

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে লোকটা নিজেই তার প্রশ্নের উত্তর দিল, প্রায় লক্ষ কোটি। এ এক অসাধারণ ক্ষমতা। একটা হেপ্টানল সাতটা কার্বনের চেন দিয়ে তৈরি। আমরা গন্ধ শুঁকে তার সঙ্গে একটা অক্টানল বা আট কার্বন চেন যুক্ত অ্যালকোহলকে আলাদা করতে পারি। এসবের পিছনে আছে ওই সব জিন রিসেপটর। আবার এই জিনে সামান্যতম পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার জন্য একটা লোকের ঘ্রাণশক্তি পুরো বদলে যেতে পারে।
আমার বন্ধু এসব নিয়ে রিসার্চ করছিল। প্রায় কুড়ি বছর কঠোর পরিশ্রমের পর সাফল্য আসে। সেই সব জিন রিসেপটরকে সে চিহ্নিত করতে পারে। বুঝতে পারে যে, এর উপরে নির্ভর করে বিভিন্ন ড্রাগ বিভিন্ন রোগীর উপরে প্রয়োগ করা যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে সাড়া ফেলে দেওয়ার মতো এ এক দারশ আবিষ্কার।

আমার বন্ধু শুধু একটা ভুল করেছিল। সে তার আবিষ্কারের সব খুঁটিনাটি কথা তার স্ত্রীকে বলত। রোজ বলত। তার স্ত্রীও বিজ্ঞানী ছিল। সে ছিল মলিকিউলার বায়োলজিস্ট। খুব মনোযোগ দিয়ে বন্ধুর সব কথা শুনত। এ বিষয়ে আলোচনা করত।

আমার বন্ধু কখনও পেটেন্ট-এর কথাও ভাবেনি। একদিন ওর সঙ্গে ওর স্ত্রীর ডির্ভোস হয়ে গেল। বন্ধু তখনও ভাবেনি ওর আবিষ্কার অন্য কেউ তার আবিষ্কার বলে দাবি করতে পারে। সে দিনরাত শুধু এই গন্ধের রহস্য সন্ধানে ব্যস্ত ছিল। একই সঙ্গে অন্ধভাবে তার স্ত্রীকে বিশ্বাস করেছিল। এমনকী ডিভোর্সের পরেও  কয়েকবছর বাদে এই আবিষ্কারের জন্য পেটেন্ট অ্যাপলাই করতে গিয়ে সে অবাক হল। তার আগেই এ বিষয়ে পেটেন্ট নিয়ে নিয়েছে দুজন। তার মধ্যে একজন তার প্রাক্তন স্ত্রী লিসা ক কী অবস্থা তখন তার ভাবতে পারো?

-কী করল সেই লোকটা?
-কী আবার করবে? সে চায়নি তার স্ত্রীকে ছোট করতে। আবার ক্ষমাও করতে পারেনি।
আমি আমার বন্ধুকে একদিন জিগ্যেস করেছিলাম কী করে সে এত বড় অপরাধ ক্ষমা করতে পারল। সে আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি।
—আপনার বন্ধু কি এখানেই থাকে?
—না, এখন সে লুসারনে থাকে। আগে সে ইউনিভারসিটি অফ ব্যার্নে পড়াত। কিন্তু এসব ঘটনার পর থেকে সে শহর ছেড়ে চলে যায়। এখন ওখানে একটা পারফিউম সংস্থার রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত।
তবে তার এখানে আসা-যাওয়া ছিল। আমার সঙ্গে এক পাবে নিয়মিত দেখা হত তার। এই শহরেই। সন্ধের পর সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই পাবে ড্রিংক করে যেত। মনে হত যেন তার বেঁচে থাকার সব ইচ্ছেই চলে গেছে। সে তার অস্তিত্ব ভুলে যেতে চায়।

আসলে সবার কাছেই তার কাজের স্বীকৃতি খুব জরুরি। অনেকটা নিজের সন্তানকে হারিয়ে ফেলার মতো। সেটা কোনো আর্থিক মূল্যের উপরে নির্ভর করে না। শুনেছি সে দু-দুবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল।
আজ অনেকদিন পর তার সঙ্গে পাবে দেখা হল। কিছুক্ষণ আগে। সে এখানে এসেছে তার স্ত্রীকে একটা উপহার দিতে। ওর নিজের হাতে তৈরি করা একটা পারফিউম উপহার দিতে।
-বলেন কি! এতো কিছুর পরেও?
-তাহলেই ভেবে দেখো। শুধু তাই না। ডিভোর্সের সময় যে কুকুরটাকে ও ওর সঙ্গে রাখার অধিকার পেয়েছিল, স্ত্রীর প্রিয় সেই ডোবারম্যান কুকুরটাকেও একমাস আগে স্ত্রীর কাছে রেখে গেছে। -তা আপনার বন্ধুর নাম কী?

-এই তো, আগেই বলেছিলাম আমার বা আমার বন্ধুর পরিচা জিজ্ঞাসা করা যাবে না। আসলে গল্পের মজাই এখানে। বেশি জানলেই মুশকিল।
-আচ্ছা, দু-বছর আগে দুজনে মিলে এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য নোবেল প্রাইজও পেয়েছিল, তাই না। তার মধ্যে -কি কেউ আপনার বন্ধুর স্ত্রী?
-হতে পারে। তুমি হয়তো ঠিকই আন্দাজ করছ। শুনেছি ওর স্ত্রী এখন চীনের একটা সংস্থার চিফ সায়েন্টিস্ট। অবশ্য এখানেই থাকে। এতটা বলে লোকটা খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকল। মনে হল যেন নেশার ঘোরে লোকটা ঘুমিয়ে পড়েছে। এমনিতেও কথা জড়িয়ে আসছিল। তার মধ্যেও আরও কিছু কথা বলতে থাকল, অস্পষ্ট স্বরে। আমি যদিও খুব মনোযোগ দিয়েই শুনছিলাম।

খানিকবাদে বলে উঠলাম, তা আপনি যে বলেছিলেন গন্ধ দিয়ে খুনও করা যায়। সেটার কী তাৎপর্য এখানে বুঝলাম না! লোকটা আস্তে আস্তে বলে উঠল, এই যে অলফ্যাক্টরি রিসেপটর তা কিন্তু ম্যানিপুলেট করা যায় বা পরিবর্তন করা যায়। গন্ধ এতটাই খারাপ লাগতে পারে যে তুমি তার জন্য কাউকে আক্রমণও করতে। পারো। এতটুকু বলে লোকটা কাশতে শুরু করল।

তার কাশি থামতেই জিজ্ঞাসা করলাম—মানে? আচ্ছা, আপনার ওই বন্ধু ওই পারফিউমটা কি……
আমাকে থামিয়ে ভদ্রলোক বললেন, আমি কিছু বলতে চাইনি। আজ উঠি। এখন ঠান্ডা পড়ছে। গুটে নাখত। ইথ বিটে ফুর ডিসে “অর্থাৎ ‘শুভ রাত্রি। আমি সেই মহিলার জন্য প্রার্থনা করি।’ বলে লোকটা উঠে দাঁড়াল। দেখলাম লোকটা মদের নেশায় টলমল করতে করতে বাগান থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি আরও খানিকক্ষণ বসে থেকে উঠে পড়লাম।
খবরটা পেয়েছিলাম দুদিন বাদে প্যারিসে গিয়ে। নিউ ইয়র্ক টাইমসে দেখি দুটো ভারি অদ্ভুত খবর। আমি অবশ্য সেটা সেদিনই আন্দাজ করেছিলাম।

বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী সায়েন্টিস্ট লিসা বাক কুকুরের আক্রমণে মারা গেছেন। বাড়ির ডোবারম্যান কুকুরটা তাকে হঠাৎ আক্রমণ করেছিল। উনি নাকি ড্রেসিংরুম থেকে বেরোনোর পরপরই বাড়ির কুকুর ওঁকে আক্রমণ করে। যেভাবে বারবার কামড় বসিয়েছে, সেই হিংস্রতা দেখে পুলিশও অবাক। কীভাবে বাড়ির পোষা কুকুর এরকম হিংস্র হয়ে উঠতে পারে, সেটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তবে এর পিছনে অন্য কিছুর যে হাত নেই, এ বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত।

সহেলী উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, তার মানে লোকটার দেওয়া ওই পারফিউমে এমন কিছু ছিল যা ওই কুকুরের মধ্যে পরিবর্তন এনেছিল। তাই তো? সেটাই কুকুরটাকে হিংস্র করে তুলেছিল। সহা
করতে না পেরে আক্রমণ করে।
—ঠিক বলেছিস। তাছাড়া আমার ধারণা ওই কুকুরের ‘অলফ্যাক্টরি রিসেপটর’-এও পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যাতে সে ওই গন্ধ একেবারে সহ্য করতে না পারে। হিংস্র হয়ে ওঠে। সেই সুযোগ ওই লোকটার বন্ধুর ছিল।
-কিন্তু ওই লোকটা কে ছিল?
-খুব সম্ভবত ওই ভদ্রলোক নিজেই। বন্ধুর নামে নিজের কথাই বলছিল।
তা তুমি পুলিসে জানাওনি?

-যারা এভাবে অন্যকে বঞ্চিত করে তাদের আবিষ্কার চুরি করে নিজের নামে চালায়, তাদের জন্য আমার খুব একটা সহানুভূতি হয়। না। তাছাড়া আরেকটা কারণও অবশ্য ছিল, সেটা পরে বলছি।
এটা কিন্তু গরুর রচনার মতো হল। যে বিষয় নিয়েই জিজ্ঞাসা করা হোক না কেন, ঠিক সেই গরুর মুখস্থ করা রচনা লিখতে হবে। কোথায় কোভিড আর চীন নিয়ে কথা হচ্ছিল আর কোথায় কুকুরের খেপে যাওয়ার গল্প। এবারে বিশ্বজিৎদা অনিলিখাদিকে সরাসরি আক্রমণ করে বসল।

ভালোবাসা কারে কয় pdf – অভিজিৎ রায় Bhalobasa Kare Koy pdf – Avijit Roy

অনিলিখাদি একটু হেসে বলল, আসলে লোকটা অস্ফুটে খুব দরকারি কয়েকটা কথা বলেছিল। যেমন বলেছিল যে, ‘অলফ্যাক্টরি রিসেপটর’-এর মধ্যে মানুষের জেনেটিক পরিচয় লুকিয়ে থাকে। অর্থাৎ গন্ধর অনুভূতি দিয়ে মানুষ আলাদা করা যায়। ওর বন্ধুর স্ত্রীর কাছে নাকি চীন থেকে দুজন লোক এসেছিল কিছু তথ্যের সন্ধানে। ওরা নাকি জানতে চেয়েছিল যে, এমন ভাইরাস ডিজাইন করা যায় কিনা যা ঘ্রাণশক্তির বিচার অনুযায়ী মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। ওই ভদ্রমহিলা, লিসা বাক তাদের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এটা অবশ্য বছর দুয়েক আগের কথা। কথাটা মনে পড়তেই এ ঘটনাটা বললাম।
-মানে? তুমি বলতে চাইছ এমনভাবে ভাইরাস তৈরি করা যায়।

যাতে যার যেরকম ঘ্রাণশক্তি, তার উপরে নির্ভর করে ঠিক সেরকম ভাবে প্রভাব ফেলে।
বিশ্বজিৎদা সোশ্যাল ডিস্টান্সিং-এর সব নিয়ম ভেঙে মাস্ক খুলে অনিলিখাদির এক ফুট কাছে এসে বলে উঠল।

-সহজ কথায় বললে, ঘ্রাণশক্তির সঙ্গে সরাসরি জেনেটিক যোগাযোগ থাকার জন্য তা দিয়ে লোক আলাদা করা যায়। পুরো সম্পর্কটাই জেনেটিক লেভেলে। এবারে ধরো, তুমি চাইলে এমন একটা ভাইরাস তৈরি করতে যা যারা আরশোলা বা ব্যাঙ ভালো যায় তাদের উপরে কম প্রভাব ফেলবে, যারা স্কচ এগ, ডিমের ডেভিল বা রেড ওয়াইন বেশি পছন্দ করে, তাহলে উপরে অনেক বেশি প্রভাব ফেলবে, তাদের জন্য অনেক বেশি ডেডলি হয়ে উঠবে। কি এবার বুঝলে?

সর্বনাশ! তার মানে তুমি বলতে চাও কোভিড চায়নাতে তৈরি করা।
-দেখো যতক্ষণ চীনের বিরুদ্ধে পুরোপুরি প্রমাণ না পাওয়া যায়, ততদিন এটাকে শুধু একটা সম্ভাবনাই বলতে হবে। এটাও ঠিক ওই খুনেরই মতো।
একটু থেমে বিশ্বজিৎদা নার্ভাস হয়ে বলল, আচ্ছা, তুমি ডেভিল নিয়ে যে কথাটা বললে সেটা কি শুধুই উদাহরণ, নাকি ওই লোকটা বলেছিল?
অনিলিখাদি শুধু মিষ্টি হাসল, কোনো উত্তর দিল না।
উত্তর না পেয়ে বিশ্বজিৎদা ফের বলে উঠল, যাই হোক, তুমি একটা খুনিকে বাঁচিয়েছ। এর থেকে বড় অপরাধ আর কিছু হয় না।

অনিলিখাদি অন্যমনস্কের মতো বলে চলল, কখনও কখনও মানুষ আইনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। আমি সেজন্যই দুটো অদ্ভুত খবর পড়েছি বলেছিলাম। শুধু জানি না আমার সঙ্গে যখন দেখা হয়েছিল তখন তিনি ভূত না ভূতপূর্ব অবস্থায় ছিলেন।

সমাপ্ত

Be the first to comment

Leave a Reply