সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়র এর বিখ্যাত ও জনপ্রিয় উপন্যাস আড়ালে আতায়ী Arale Atataye pdf ডাউনলোড করুন।
Arale Atataye pdf নমুনা
সকাল প্রায় দশটা। অ্যাপক্যাবে চেপে ঝিনুক দীপকাকুর সঙ্গে চলেছে একবালপুরে। নতুন কেস এসেছে দীপকাকুর। ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছেন। এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। ক্লায়েন্ট একজন হোমিও প্যাথি ডাক্তার। নাম অলকেশ রায়। উনিই দীপকাকুকে বলেছেন ভাড়াগাড়িতে আসতে। নিজের গাড়িতে নয়। দীপকাকুর নিজের গাড়ি বলতে মোটরবাইক। তদন্তের প্রয়োজনে কখনও ঝিনুকদের গাড়িটা ব্যবহার করেন। আজ দুটো গাড়িই কাজে লাগল না।
গতরাতে ডিনার সেরে ঝিনুক যখন শুতে যাবে, দীপকাকুর ফোন এল ওর মোবাইলে। জিজ্ঞেস করেছিলেন, কাল সকালে ফ্রি আছ?
কেসে অ্যাসিস্ট করার গন্ধ পেয়েছিল ঝিনুক। বলেছিল, হ্যাঁ, একদম ফ্রি। এখন তো পুজোর ছুটি চলছে কলেজে। খুলবে সেই ভাইফোঁটার পর।
-ওকে। তা হলে বউদিকে বলে দাও ব্রেকফাস্ট তোমাদের বাড়িতে সারব। তারপর তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাব ক্লায়েন্টের বাড়ি। দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে যেতে হবে সেখানে। ছাড়ছি। গুড নাইট। Arale Atataye pdf
দীপকাকু ফোন কাটতেই ঝিনুক শূন্যে ডান হাতটা এমন ভাবে ঝাঁকিয়ে ছিল, যেন স্কোর করল কোনও খেলায়। সব কেসে তো দীপকাকু তাকে অ্যাসিস্ট করার জন্য ডাকেন না। মাকে গিয়ে দীপকাকুর আসার খবরটা জানিয়েছিল ঝিনুক। ব্রেকফাস্টে কী বানানো যায়, তা নিয়ে ভাবতে বসে গেলেন মা। দীপকাকু মায়ের রান্নার মস্ত বড় ফ্যান। তার উপর পুজোর পর দীপকাকু প্রথম আসছেন। এটা বিজয়ার খাওয়া। Arale Atataye pdf
বাইক চালিয়ে সকাল আটটা নাগাদ দীপকাকু এলেন। বিজয়ার প্রণাম, কোলাকুলি সারা হল। দাবার বোর্ড সাজিয়ে রেখেছিলেন বাবা। দীপকাকু খেলায় বসতে আগ্রহ দেখালেন না। এড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত হিসেবে বলেছিলেন, একমাত্র রোববার দাবায় আমার মাথা ভালো কাজ করে। আজ খেলতে বসলে হেরে ভূত হয়ে যাব।
সাধারণত রবিববারই দীপকাকু বাবার সঙ্গে আড্ডা মারতে আসেন। দাবা খেলেন। আজ না খেলার কারণ, হাতে সময় কম। অ্যাপয়ন্টমেন্ট আছে ক্লায়েন্টের সঙ্গে। এদিকে মায়ের হাতের জলখাবারটাও তারিয়ে তারিয়ে সারতে চান। মা পিৎজা খাওয়ালেন গরম গরম। আর কাস্টার্ড বানিয়ে রেখেছিলেন কাল রাতেই। খাওয়া চলাকালীন বাবা দীপকাকুকে জিজ্ঞেস করলেন, এবারের কেসটা কী নিয়ে?
খাবার মুখে থাকা অবস্থায় দীপকাকু বলেছিলেন, এখনও জানি না। ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা করে জানতে পারব।… এরপর ক্লায়েন্টের পরিচয় এবং ঠিকানা বললেন। বাবা একটু অবাক হয়ে বলেন, তোমার এজেন্সির অফিসে না এসে, কেসের ব্যাপারে কিছু না জানিয়ে, ভদ্রলোক তোমাকে ডেকে পাঠালেন, আর তুমি রাজি হয়ে গেলে দেখা করতে! এত অ্যাভেলেবল হওয়া তোমার পক্ষে উচিত নয়। তুমি এখন একজন প্রতিষ্ঠিত গোয়েন্দা। দীপঙ্কর বাগচী নামটা যথেষ্টই পরিচিত। অনেকেই জানে।
-ভদ্রলোকের ডেকে পাঠানোর ধরনটাতে রাজি হয়েছি। বলেছিলেন দীপকাকু। Arale Atataye pdf
ঝিনুক জানতে চেয়েছিল, ধরনটা কীরকম ছিল?
খেতে খেতে উত্তর দিলেন দীপকাকু। বলেছিলেন, ফোন করে ভদ্রলোক প্রথমে নিজের নাম, পেশা জানিয়ে বলেছিলেন, তিনি গোয়েন্দার শরণাপন্ন হচ্ছেন, এটা কাউকে জানতে দিতে চান না! ওঁর গাড়িতে আমার অফিসে এলে ড্রাইভার সাক্ষী থেকে যাবে। বাসে বা ট্যাক্সিতেও আসতে ভরসা পাচ্ছেন না। পাছে কেউ ফলো করে জেনে নেয় কোথায় যাচ্ছেন। এমনকি আমাকেও বারণ করলেন নিজের গাড়িতে ওঁর বাড়ি যেতে। কারণ, গাড়ির নাম্বারের সূত্র ধরে আমার পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাবে। ওঁকে এত সাবধানতা নিতে দেখেই আমার আগ্রহ বাড়ল। মনে হল কেসটায় মেটেরিয়াল থাকবে। ভাবলাম, যাই, দেখা করি। তা ছাড়া অসুস্থ অশক্ত ক্লায়েন্ট হলেও আমি দেখা করতে যাই। নিজের পজিশন, পরিচিতি নিয়ে ভাবি না।
এরপর বাবা জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমরা কী পরিচয় নিয়ে ওঁর বাড়িতে যাবে?
-উনি যেহেতু ডাক্তার, রুগির পরিচয় নিয়ে যেতে বলেছেন। চেম্বারটা ওঁর বাড়ির একতলায়। বলার পর একটু থেমে দীপকাকু ফের বলে উঠেছিলেন, আমি বলে নিয়েছি আমার সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবে। সে হবে পেশেন্ট, আমি তার গার্ডিয়ান। Arale Atataye pdf
ব্যবস্থাটা পছন্দ হয়নি ঝিনুকের। মুখে সেটা প্রকাশ করার ঝুঁকি নেয়নি। অ্যাসিস্ট করার সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। ঝিনুক বাধ্য ছাত্রীর মতো জানতে চেয়েছিল, পেশেন্ট সাজার জন্য বিশেষ কোনও ড্রেস পরতে হবে কি?
-না না, আলাদা কোনও ড্রেস লাগবে না। চেহারায় একটা ঝিমানো ভাব যেন থাকে। বলেছিলেন দীপকাকু। বাবা তখন বললেন, পেশেন্ট তুমিই সাজতে পারতে। ওই ভাবটা তোমার চেহারায় অটোমেটিক্যালি থাকে যখন ভাবনাচিন্তার জগতে থাকো। ফিজিকাল মুভমেন্টের সময় তোমার অবশ্য উল্টো রূপ! ঝিনুক কতটা অসুস্থতার অ্যাক্টিং করতে পারবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। যা ছটফটে মেয়ে!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.