Bangla Kagojer Aaj O Kaal pdf writen by Amitabha Chowdhury বাংলা কাগজের আজ ও কাল pdf অমিতাভ চৌধুরী পড়ুন।
Bangla Kagojer Aaj O Kaal pdf সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
নামঃ Bangla Kagojer Aaj O Kaal pdf
লেখকঃ অমিতাভ চৌধুরী
সাইজঃ ৪ এমবি
পৃষ্ঠাঃ ৩৪
Bangla Kagojer Aaj O Kaal pdf সূচনাঃ
প্রথম আপ্যায়ন সুবিধের হয়নি। কলেজে পড়ানো ছেড়ে রিপোর্টারি করতে এসেছি। আনন্দবাজারে। ধুতির ওপর পাঞ্জাবি-কোট ও শাল জড়ানো চীফ রিপোর্টার বললেন, ‘দেখুন মশাই রিপোর্টারের কাজ করতে এসেছেন ভালোই, কিন্তু মাস্টারি ছেড়ে রিপোর্টারি করতে কোন ভদ্রলোক আসেন না। আচ্ছা, আপনার খুঁটি কে? কানাইবাবু না অশোকবাবু?
দমে গেলাম! তবে কি ভুল করলাম শান্তিনিকেতন ছেড়ে এই কাজে এসে? দোনামনা করে রসে পড়লাম নির্ধারিত চেয়ারে। চেনা ছিলেন গৌরকিশোর ঘোষ। তাঁকে দেখে কিঞ্চিৎ আশস্ত হলাম। নিজেই এগিয়ে এসে আলাপ করলেন মধুসূদন চক্রবর্তী। স্নেহশীল মানুষ। শান্তিনিকেতন থেকে এসেছি বলে একটু স্পেশাল খাতির করলেন। নইলে, ‘শান্তিনিকেতনী চিড়িয়া’, ‘ছাতিমতলার মাল’ ইত্যাদি মধুর সম্ভাষণে ভূষিত হতাম। অন্যদের কাছে হয়েছিও। আমাদের টেবিলের সারির ওপাশে সার সার টাইপরাইটার বসানো। টাইপিস্টরা বসেন নাকি ওখানে? ভুল ভাঙল সন্ধের পর। ওটা হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডের ‘সাহেব’ রিপোর্টারদের জায়গা।
বত্রিশ বছর আগেকার কথা বলছি। তখনও বাংলা কাগজের কর্মীরা সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন। তাঁদের কাগজের সার্কুলেশন বাংলা কাগজের তুলনায় নগণ্য, তবু তাঁদের মাইনে বেশি, শহরের বাইরে কোন বড় এসাইনমেন্টে তাঁরাই যান এবং তাঁদের লেখা রিপোর্টের কার্বন কপি অনুবাদ করতে হয় আমাদের।
এই হল গিয়ে তখনকার চেহারা। তিরিশ বছরের ওপর এই লাইনে থেকে প্রায়ই পেছন ফিরে তাকাই। এই স্বল্পসময়ে কত বেশি তফাত। ইতিমধ্যে আমি একজন পেটমোটা স্মৃতিভুক প্রাণী। প্রায়ই বলি, জানেন তো, এত সালে কী হয়েছিল, ঠিক একই কথা অত সালে আমাকে বলেছিলেন অমুক ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ কিনা বুড়ো হওয়ার সব লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং আমার বুড়োটেপনার খবর পেয়ে ফরমাশ আসে পুরনো কথা লেখার। অনুরোধ-কর্তাদের ধারণা, বর্তমানে আমি এখন আস্ত একখানা হিস্ট্রিবুক, সন-তারিখসমেত অতীতের ছবি তুলে ধরতে পারি।
ব্যাপারটা সত্যি। আমি যখন সাংবাদিকতায় আসি. এমন কিছু প্রাচীনকাল নয়, অদূর অতীত, কিন্তু হালের সঙ্গে তুলনায় চালচলনে ধরনে ধারণে প্রাগৈতিহাসিক।
তাহলে ইতিহাস শুরু হল কবে ? ১৯৫৮ সালের শেষদিকে ইংরেজী সাংবাদিকতা ছেড়ে সন্তোষকুমার ঘোষের বাংলা সাংবাদিকতায় আসার পর। তার আগে বাংলা সাংবাদিকতায় রাজত্ব করতেন দক্ষিণারঞ্জন বসু। একদল উৎসাহী তরুণদের নিয়ে, তিনিই তাঁদের উৎসাহ দিয়ে এবং নতুন সব কিছুতে আগ্রহ দেখিয়ে যুগান্তর পত্রিকাকে আধুনিক করার দিকে নজর দেন নজর কাড়েনও। তারও আগে চল্লিশের দশকে পার্টির কাগজ হয়েও ‘স্বাধীনতা’ নতুনত্ব এনেছিল রিপোর্টিংয়ে। মূলত সুভাষ মুখোপাধ্যায়, ননী ভৌমিক ও প্রফুল্ল রায়চৌধুরীর ঝরকারে বাংলা লেখার গুণে। কিন্তু সে ডিম্বাবস্হা, ডিম পাখি হয়নি। পাখি ডানা মেলে উড়ল সন্তোষকুমার ঘোষের হাতে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলা সাংবাদিকতার হীনম্মন্যতা থেকে তিনি আমাদের উদ্ধার করলেন।
আমি ১৯৫৬ সালের মার্চ মাসে অধ্যাপনা ছেড়ে পুরোপুরি সাংবাদিকতায় আসি। তার আগে শান্তিনিকেতনে থাকতে অতুল্য ঘোষ মশাইয়ের জবরদস্তিতে তাঁর সম্পাদিত জনসেবক’ কাগজের নিজস্ব সংবাদদাতা ছিলাম, ছিলাম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার ম্যানেজার
নৃপেন্দ্রনাথ ঘোষের অনুরোধে পি টি আইয়ের স্হানীয় প্রতিনিধি। ইন্টারন্যাশনাল কন্ট্রোল কমিশনের কনফারেন্স সেক্রেটারি হয়ে ক্ষিতীশ রায় চলে গেলেন লাওস, তাঁর বদলি হলাম আমি। সার্কুলেশন কম ও দলীয় কাগজ বলে জনসেবকে খবর পাঠাতে ইচ্ছে করত না, আর ইংরেজী লিখতে গেলে বারবার অ্যাপ্রোপ্রিয়েট প্রিপোজিশন নিয়ে গণ্ডগোল হত বলে পি টি আইয়ের জনো লিখতে কলম সরত না। কিন্তু এমনই কপাল, তালেগোলে আমাকে অধ্যাপনা ছেড়ে চলে আসতে হল সাংবাদিকতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার কনিষ্ঠ রিপোর্টার হয়ে।
আমাদের তখন লিখতে হত ‘ইতঃপূর্বে’ ‘ইতোমধ্যে’। সব কিছুতে ‘অভিযোগ প্রকাশ’ ও ‘নাকি’ শব্দ জুড়ে দিতাম। ওতে নাকি মামলা মোকদ্দমা থেকে বেরিয়ে আসার জানালা খোলা থাকে। এই নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি হত যে, একজন রিপোর্টার কোন একটি ঘটনার কথা বলতে গিয়ে লিখেছিল, ‘অভিযোগে প্রকাশ যে, অমুক নাকি অমুকের পুত্র। ‘ সাঙ্ঘাতিক কথা, এই নিয়েই মামলা হয় আর কি! আমরা তখন দেখতাম না, ‘পরিদর্শন’ বা ‘পর্যবেক্ষণ’ করতাম, তেরঙ্গা ঝাণ্ডা না বলে বলতাম ‘ত্রিবর্ণলাঞ্ছিত পতাকা’, আকাশকে নভোমণ্ডল, মাটিকে মৃত্তিকা ইত্যাদি লিখে পরিতৃপ্তি পেতাম। আগুন লাগলে লিখতাম ‘বৈশ্বানরের তাণ্ডবলীলা’ জলে ডুবলে ‘সলিল সমাধি’।
পেতাম কী?
Bangla Kagojer Aaj O Kaal pdf Download link.
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.