ঝরা বসুর উনিশ শতকের বাঙলা সাহিত্যে কেশবচন্দ্র pdf ডাউনলোড করুন। Unish Shataker Bangla Sahitye Keshabchandra pdf free download link is here.
Unish Shataker Bangla Sahitye Keshabchandra pdf ভূমিকা
ঊনবিংশ শতাব্দীর পরিধিতে বাংলাদেশে ধর্ম-আন্দোলন প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে। ধর্মের অন্তর্নিতি ব্যাখ্যা, প্রচার, প্রথা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তির প্রয়াস এবং সাংস্কৃতিক জীবনের পুনরুজ্জীবন, সাহিত্য সৃষ্টি এবং সামাজিক আন্দোলন, ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। অভসিকে খ্ৰীষ্টীয় ধর্মপ্রচারকগণ জনসাধারণের মধ্যে ভীতি ও ধর্মে দীক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন।
রাজা রামমোহন তাঁর ‘ব্রাহ্মণসেবধি’ পত্রিকায় খ্রীষ্টীয় ধর্মপ্রচারকগণের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি তাদের মুসলমান-অধ্যুষিত দেশসমূহে খ্রীষ্টীয় ধর্মের আদর্শ প্রচারে উপদেশ দেন। প্রলোভন প্রদর্শন করে তাদের রাজা রামমোহন ‘ব্রহ্মসভা’ প্রতিষ্ঠা করেন ১৮২৮ খ্রীষ্টাকে। এর পূর্বে শাস্ত্রীয় আলোচনা, বেদপাঠ এবং ব্রহ্মসংগীতের জন্ম ‘আর্মীয় সভা’ ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত হয়। রামমোহন তাঁর ব্রহ্মসভাকে সকল ধর্মের মিলন- ক্ষেত্ররূপে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। রামমোহনের আদর্শে দেবেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করেন। তাঁর সঙ্গে কেশবচন্দ্র সেন তাঁর অসাধারণ কর্মদক্ষতা, ধর্মবিশ্বাস এবং বাগ্মিতা নিয়ে যোগদান করেন।
১৮৬৫ খ্রীষ্টাঙ্গে ব্রাহ্মিকা সমাজ স্থাপিত হয়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে কোন কোন বিষয়ে মতভেদ হওয়ায় তিনি নূতন ব্রাহ্মসমাজ স্থাপিত করেন। কেশবচন্দ্রের আদর্শের মূলে ছিল ধর্ম ও সমাজের সংস্কারসাধন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজ নববিধানরূপে পরিচিত। পৃথিবীর লকল বিধান যাহার মধ্যে নিহিত তাহাই নববিধান।’ নববিধানে ভক্তি, যোগ ও কর্মের সামগ্রস্ত ঘটেছে। সকল ধর্মের যা কিছু শ্রেষ্ঠ, তিনি তা গ্রহণে দ্বিধা করেন নি। তাই নববিধান একাধারে ভারতীয় ও বিশ্বজনীন। ঈশ্বরকে এখানে পিতা রূপে কল্পনা করা হলেও বিশ্বজননীর ভাব এখানে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে।
কেশবচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল গোঁড়া বৈষ্ণব পরিবারে। সুতরাং ভক্তির ভাব ছিল তাঁর মধ্যে সহজাত। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ জ্ঞানোঅর্পিত বিষ কার এবং আত্মপ্রত্যাসিত জ্ঞানকে ব্রাহ্মর্মের ভিত্তি রূপে প্রচার করেন কেশবচন্দ্র তার মধ্যে যুক্ত করেন ভক্তির যাত্রা।
বাংলা সাহিত্যে কেশবচন্দ্রের দান বিশিষ্ট। ধর্মকে কেন্দ্র করে একব বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ঘটলেও পরবর্তী কালে তা মানা শাখা-প্রশাখার ব্যাপ্তি লাভ করেছে। রাজা রামমোহন বেদান্ত গ্রন্থ রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে গ্রানিট প্রভরের ওপরে স্থাপন করেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের ধর্মসম্পর্কিত নানা আলোচনা, অক্ষয়কুমার দত্ত ও রাজনারায়ণ বহুর গল্প প্রবন্ধসমূহ বাংলা গদ্য ভাষাকে বিকশিত করে তুলতে সাহায্য করে।
কেশবচন্দ্র বঙ্কিমচন্দ্রের সমসাময়িক, অথচ তাঁর সাহিত্য রচনায় বঙ্কিমের কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না। কেশবচন্দ্র নানা বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘জীবনবেগ’ নানা তত্ত্বের অবতারণার সমৃদ্ধ । এখানে তিনি প্রচার করেন যে, ঈশ্বর শুধু নিরাকার ব্রহ্ম নন, তিনি ভক্তের ভগবান। কবির আন্তরিক অনুভূতি নিয়ে তিনি গ্রন্থটি লিখেছেন। তাঁর গ্রন্থের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল প্রকৃতিপ্রেম। ‘মুলণ্ড সমাচারে’ তাঁর সাম্যবাদ- মূলক আলোচনা আমাদের বিস্মিত করে। বঙ্কিমচন্দ্র ‘কমলাকান্তের দপ্তরে ‘সাম্যবাদে’ এবং ‘বঙ্গদেশের কৃষকে’ বে-জাতীয় অর্থনৈতিক আলোচনা- করেছেন তার পুর্বাভাস আমরা কেশবচন্দ্রের রচনার মধ্যে পাই। উভয়ের সাম্যবাদ মানষিক অনুভূতির উপরে প্রতিষ্ঠিত। কেশবচন্দ্র দুঃখী দরিদ্র মানুষদের জন্য একটি সহজ ধর্ম গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
Unish Shataker Bangla Sahitye Keshabchandra pdf Review
কেশবচন্দ্র সেন ব্যতীত নববিধানের লেখকগোষ্ঠী নান! গ্রন্থ রচনা করেছেন। এগুলির মধ্যে আছে নাটক ও কাব্য, কীর্তন ও সংগীত, জীবনী ও আত্নজীবনী, চিঠিপত্র ও ডায়েরী এবং পত্রিকা সম্পাদনা । প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, গৌরগোবিন্দ রায়, সাধু অঘোরনাথ, গিরিশচন্দ্র সেন, মহেঞ্জনা বহু ও ত্রৈলোক্যনাথ সান্তাল, বাংলা সাহিত্যে এক নতুন গোষ্ঠীর সাধক। কিন্তু এঁদের রচিত সাহিত্য গোষ্ঠী নিরপেক্ষ। ত্রৈলোক্যনাথ সাখালের নববৃন্দাবন নাটকে মদ্যপানের ফলে সমাজ যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার জীবন্ত বর্ণনা আছে। নাটকটি মঞ্চে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। স্বয়ং কেশবচন্দ্র একটি ভূমিকা গ্রহণ করেন। প্রতাপচন্দ্র মজুমদার ছিলেন নানা শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তি। গিরিশচন্দ্র সেন আরবী ভাষায় রচিত বহু জীবনীগ্রন্থ অনুবাদ করেন। এই গোষ্ঠীর মধ্যে মনীষায় ও ব্যক্তিত্বে সর্বাপেক্ষা অসাধারণ ছিলেন কেশবচন্দ্র।
নববিধান সমাজের আদর্শ ও ধর্মজিজ্ঞাসার কথা আলোচনা করে, এই সমাজের ভক্তদের কথা প্রদ্ধাসহকারে রচনা করে ‘উনিশ শতকের বাঙলা সাহিত্যে কেশবচন্দ্র’-এর লেখিকা অধ্যাপিকা ড. শ্রীমতী খরা বহু আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হলেন। তাঁকে আমরা আন্তরিক শুভেচ্ছা জান করি। তবে তাঁর গ্রন্থে স্থানাভাব হেতু কেশবচন্দ্রের ইংরেজী রচনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয় নি। আশা করা যায় যে, দ্বিতীয় সংস্করণে এই ত্রুটি দূরীভূত হবে। ড. বহু সত্যই একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করে আমাদের ঋণী করে রাখলেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.