প্রাণেশ চক্রবর্তীর ভ্রমণ বিষয়ক বই Bhoyonkor Sundor Himalaya pdf ভয়ংকর সুন্দর হিমালয় pdf ডাউনলোড করুন ও Bhoyonkor Sundor Himalaya pdf ভয়ংকর সুন্দর হিমালয় pdf পড়ুন।
Bhoyonkor Sundor Himalaya pdf ভয়ংকর সুন্দর হিমালয় pdf লেখকের কথাঃ
আমার এই বই-এর কিছু লেখা বিভিন্ন সময়ে প্রতিক্ষণ, যুবমানস, দেশ, সানন্দা ও আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। নতুন কয়েকটি লেখার সঙ্গে সেগুলি পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হয়ে ‘ভয়ংকর সুন্দর হিমালয়’ নামে বই প্রকাশিত হ’ল। শ্রদ্ধেয় শ্রীমতী অর্চনা রায়ের সক্রিয় সাহায্য ও আগ্রহাতিশয্যে এই পুস্তকের প্রকাশ। তাঁর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। শ্রীমতী ইন্দ্রাণী রায় মিত্রের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য আমি তাঁর কাছে বিশেষভাবে ঋণী।
Bhoyonkor Sundor Himalaya pdf ভয়ংকর সুন্দর হিমালয় pdf নমুনাঃ
ভারতীয় ভূখণ্ডের উত্তরতম প্রান্তে কণ্ঠহারের মতো অভ্রভেদী হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টিকর্তার এক অত্যাশ্চর্য সৃষ্টি। ভুবনমোহিনী এর সৌন্দর্য। অপূর্ব তার ‘লাবণ্য-কিরণ- ছটা’, যেন ‘মহীয়সী মহিমার আগ্নেয় কুসুম’। তার উত্তুঙ্গ মহামৌনী স্ফটিকস্বচ্ছ শৃঙ্গরাজি বাক্যাতীত আনন্দের অব্যক্ত আবেগ। সে বহুর মধ্যে ব্যাপ্ত, সমগ্রতার গৌরব। তার মাহাত্ম্য ও মহিমা উপলব্ধি করা যায় কেবল বোধে, প্রেমে, ধ্যানে ও দর্শনে। নক্ষত্রের মতো নিত্যদীপ বিভাসিত অনির্বচনীয়তা যুগ যুগ ধরে মানবচিত্তকে আকৃষ্ট ও বিমুগ্ধ করে রেখেছে। রিক্ত আভরণহীন দিগম্বরের সর্বত্রগামিতা বিস্ময়কর। অপরিমিত শক্তির আধার এই হিমালয় ভারতাত্মার সৃষ্টিকর্তাও। পশ্চিমে সিন্ধুনদ থেকে পুব দিকে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত এর পনেরোশো মাইল গগনচুম্বী গিরিশৃঙ্গমালা উত্তর শিয়রে কল্পকল্পান্ত ধরে অতন্ত্র প্রহরায় নিযুক্ত। শুধু তাই নয়, তিব্বতের হিমবায়ুর ঝাপটা থেকেও আগলে রেখেছে ভারতভূমিকে।
অন্য দ্বীপ pdf – নবনীতা দেবসেন Anya Dweep pdf – Nabaneeta Dev Sen
আবার উত্তর-পশ্চিম মৌসুমীবায়ু সেখানে প্রতিহত হওয়ার ফলে গোটা দেশ হয়ে উঠেছে প্রাণময় শস্যশ্যামল। উত্তর-দক্ষিণে একশো থেকে দেড়শো মাইল চওড়া এর পার্বত্য ভূভাগেই কেবলমাত্র পাওয়া যাবে অগণিত গিরিপথ, গভীরতম গিরিখাদ, দুষ্প্রাপ্য ফুল-ফল, গাছপালা, নদী-নালা ও ঝরণা। এখানেই দেখা যায় হিমবাহ, বরফগলা জলের মনোরম হ্রদ, বিচিত্র সমস্ত পশুপাখি ও অভয়ারণ্য। অসীম রহস্য এর ভাঁজে ভাঁজে, মনকে প্রবলভাবে প্রলুব্ধ করে।
ভারতবর্ষের আবহমানকালের ধর্ম-সংস্কৃতির সঙ্গে হিমালয় নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট। হিন্দুধর্মে একে বলা হয় ‘শিবভূমি’। প্রাজ্ঞরা বলেন, শিবালয়ের মাহাত্ম্য ও মহিমা অপার। স্বয়ং রামচন্দ্রও হিমালয়ে গিয়েছিলেন তীর্থদর্শনে। আনন্দ রামায়ণে উল্লেখ আছে, হিমাচলের জ্বালামুখী, দেবপ্রয়াগ, কেদাবদরী, মানসসরোবর ও কৈলাস দর্শন শেষে তিনি ফিরে যান হরিদ্বারে। তারপরে অযোধ্যায়। কথিত আছে, অযোধ্যাপতি গড়াতে পিতৃশ্রাদ্ধ করলেও অলকানন্দা-ভাগীরথীর সঙ্গমে দেবপ্রয়াগে পিণ্ডদান করেছিলেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরে পঞ্চপাণ্ডবও তীর্থ করতে গিয়েছিলেন হিমালয়ে। মহাভারতের বনপর্বে আছে, পাণ্ডবেরা হরিদ্বার থেকে বদরীনাথ, কৈলাস, বিশালপুরী ও পুষ্পাবতী (অধুনা নন্দনকানন – ফুলো কা ঘাঁটি) দর্শন সেরে ফিরে যান হরিদ্বারে। সেখান থেকে পরে যমুনোত্রী। দ্রৌপদীকে নিয়ে পঞ্চপাণ্ডব হিমালয়ের পথেই স্বর্গারোহণ করেন। -এ কথা কে না জানে।
শুধু রামায়ণ-মহাভারত নয়, হিমালয় ও তার তীর্থক্ষেত্রের উল্লেখ আছে আমাদের বেদ-উপনিষদেও পুরাণে, মহাকাব্যে। পুরাকালে হিমালয়কে বলা হতো ‘মহাহিমবস্তু’। গিরি-পর্বতমালার এই স্বর্গরাজ্যে আর্য ঋষিরা পরিভ্রমণ করতেন, নিভৃতে বসতেন তপশ্চর্যায়। হিমালয় থেকে উৎসারিত সিন্ধু-গঙ্গাকে তারা পূজার্চনা করতেন। মুনি- ঋষিদের ‘শ্রুতি’ ও ‘স্মৃতি’-তেও পাওয়া যায় হিমালয় প্রসঙ্গ। স্কন্দপুরাণে আছে, রাজা মিলিন্দর প্রশ্নের জবাবে মহামুনি নাগসেনা বলছেন — পৃথিবীর সমস্ত পর্বতমালার মধ্যে হিমালয় সর্বশ্রেষ্ঠ। ২,৭৮,২৫০ ক্রোশ পরিব্যাপ্ত ধ্যানগম্ভীর হিমালয়ের আশ্চর্য জগতে রয়েছে আটচল্লিশ হাজার পর্বতশৃঙ্গ আর পাঁচশো নদনদী। অসংখ্য রকমের সুন্দর সুন্দর জীবজন্তু, পাখি, নানান সুগন্ধ দ্রব্য ও জীবনদায়ী বহু রকমের বনৌষধি। নাগসেনা আরও বলেন – হিমালয়ে যে যায় সে তাঁর মায়ের কাছেই যায়। হিমালয় সন্দর্শনে ও তার নাম নিলে সমস্ত পাপতাপ নিমেষে মুছে যায়।
যেমন করে সূর্যালোকে নিশ্চিহ্ন হয় শিশিরবিন্দু। উদার হিমালয়ের মহত্ত্ব বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। ‘অনাঘ্রাতং পুস্পম্’-এর মতো মনোলোভা হিমালয়কে দেখে বিস্ময়াবিষ্ট রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন— ‘তুমি আছ হিমাচল ভারতের অনত্ত তপস্যার মতো’।
হিমালয়ের পথ অতি দুঃসাধ্য, দুরতিক্রম্য, পরিবেশ ও আবহাওয়া অত্যন্ত নিরুৎসাহকর। মানুষ সেখানে বড় অসহায়, কীটানুকীট। তৎসত্ত্বেও অসীম কৌতুহল ও জানবার তাগিদে, নিজেকে আবিষ্কার করার অদম্য বাসনায় চিরকাল মানুষ ছুটে গেছে দুর্গম পার্বত্যপ্রদেশে। এঁদের মধ্যে ছিলেন পরিব্রাজক, পর্যটক, সাধুসন্ন্যাসী, পুণ্যলোভাতুর সাধারণ তীর্থযাত্রী থেকে শুরু করে বণিক, গুপ্তচর, পরসাম্রাজ্যলোভী ও ধর্মপ্রচারক ছাড়াও বহু কবি, শিল্পী-সাহিত্যিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীও। প্রাণ দিয়ে, ত্যাগ দিয়ে, চিন্তা দিয়ে তাঁরা নানান রকমের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন।
এবং সকলের অবিশ্রাম অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের মধ্যে দিয়ে হিমালয়ের অজানা-অচেনা জগৎটা মানুষের কছে ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে। পূর্বসুরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেই অভিযাত্রা আজও অব্যাহত রয়েছে। হিমালয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ ভৌগোলিক বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে আনার ব্যাপারে ইউরোপীয়দের প্রচেষ্টা ও সাফল্যকে কিছুতেই অস্বীকার করবার উপায় নেই। বিশেষ করে ব্রিটিশদের, ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যাবে হিমালয়ের অনেক রহস্য উদ্ঘাটনের ব্যাপারে তাঁরাই পথিকৃৎ। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ যখন বাঙলার গভর্নর প্রকৃতপক্ষে তখন থেকেই এদেশে ব্রিটিশরা সার্ভের কাজ শুরু করেছিলেন। মেজর জেমস বেনেলকে দিয়ে তিনি অবিভক্ত বাংলার একটি ম্যাপ তৈরি করান। এর ঠিক দু’ বছর বাদে তাঁর উৎসাহে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সার্ভে অব বেঙ্গল’। পরবর্তীকালে এই সংস্থাটিরই নামকরণ করা হয় ‘সার্ভে অব ইন্ডিয়া’।
Bhoyonkor Sundor Himalaya pdf ভয়ংকর সুন্দর হিমালয় pdf download link
Download / Read Online
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.