রূপক সাহার সমকালীন উপন্যাস Bish Pathar pdf বিষ পাথর pdf ডাউনলোড করুন ও Bish Pathar pdf বিষ পাথর pdf পড়ুন।
Bish Pathar pdf বিষ পাথর pdf নমুনাঃ
দোকানে ঢুকতেই বাবা ডাকল, টুম্পাই, এ দিকে এক বার আয় তো।
গলার স্বর শুনেই বুঝলাম, ভয়ের কিছু নেই। বাবা দাঁড়িয়ে আছে স্টোন সেকশনে শো-কেসের উল্টো দিকে। সামনে এক ভদ্রলোক। বোধহয় কিছু কিনতে এসেছে। স্টোন সেকশনে কাজ করে সুভদ্রা, অবন্তী আর রিমিতা বলে তিনটে মেয়ে। এদের ইনচার্জ বিষ্ণুকাকা। সুভদ্রার হাতে আধখোলা একটা কাঠের শৌখিন বাক্স। কোনও কাস্টমার কিছু কিনতে এলে ওই বাক্স থেকেই স্টোন বের করে তাঁকে দেখানো হয়। ভদ্রলোক সম্ভবত বাবার খুবই পরিচিত। না হলে নিজের মেজেনাইন ফ্লোরের অফিস থেকে বাবা নীচে নেমে আসত না।
ঘণ্টা দুয়েক ক্যারাটে প্র্যাক্টিস করে আমি সবে জোড়াবাগান থেকে ফিরেছি। সারা গা ঘেমেনেয়ে একসা। অন্য দিন প্র্যাক্টিসের পর ক্লাবেই স্নান-টান সেরে একেবারে ফ্রেশ হয়ে তার পর দোকানে ঢুকি। কিন্তু আজ বাড়ি থেকে বেরনোর সময় বউদি এমন একটা কাজ ধরিয়ে দিল, না করতে পারলাম না। সেই কাজ সেরে জোড়াবাগানে গেছি। বউদির জন্য এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন প্রায় সাতটা। এত দেরিতে দোকানে ঢোকা বাবার চোখে অপরাধ। বাবা অবশ্য দোকান বললে চটে যায়। বলে শো-রুম। সব সময়ে সেটা মনে থাকে না।
বাবার ডাকে শো-কেসের সামনে দাঁড়াতেই চোখ গেল বিষ্ণুকাকার দিকে। বিষ্ণুকাকা আমার ঠাকুর্দার আমলের লোক। খুব বিশ্বস্ত। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমার ঠাকুর্দা গোরাচাঁদ দত্ত যখন জুয়েলারি ব্যবসা শুরু করেন, বিষ্ণুকাকা সেই তখন থেকে আমাদের এই দোকানে। ঠকুর্দার দত্ত জুয়েলার্স এখন কলকাতার সেরা পাঁচ জুয়েলারি দোকানের একটা। দত্ত জুয়েলার্সের তিন তিনটে ব্রাঞ্চ। দুটো নর্থ ক্যালকাটায় এই বিবেকানন্দ রোড আর বিধান সরণিতে। আর একটা গড়িয়াহাটার মোড়ে। বিষ্ণুকাকা আমাকে খুব ভালবাসে। আমার উপর বাবা যখন খুব চোটপাট করে, তখন এই বিষ্ণুকাকাই সামলায়।
বিষ্ণুকাকার চোখ দেখেই আমি বুঝতে পারি, বাবার মেজাজ কেমন আছে। এই যেমন বুঝলাম, উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। বাবা বেশ ভাল মেজাজেই। অন্য দিন দেরি হলে বাবা আমাকে দেখেই প্রথমে বলে, ‘তোর কি কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই, টুম্পাই?’ শুরু করে এই ভাবে, কিন্তু তার পর বক্তব্যটা গিয়ে যা দাঁড়ায়, তাতে মনে হয়, আমার মতো অপদার্থ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আমার রিকশা টানা অথবা নতুন বাজারে গিয়ে ঝাঁকামুটের কাজ করা উচিত। বারো-তেরোজন কর্মচারীর সামনে বাবা যাচ্ছেতাই কথা শোনায়। ফলে আমার কোনও প্রেস্টিজ নেই। মালিকের ছেলে বলে কেউ আমায় মানে না। ব্যতিক্রম শুধু বিষ্ণুকাকা। ওই লোকটার জন্যই এখনও আমি রোজ দোকানে আসি।
আরোহী অন্ধ প্রহর pdf – রবিন জামান খান Arohee Andho Prohor pdf – Robin Zaman Khan
ভদ্রলোককে বাবা নীলা দেখাচ্ছে। রক্তমুখী নীলা। শো-কেসের আলোয় বেগুনি আভা ফুটে বেরচ্ছে। নীলার খুব দাম। বাবার হাতে যে টুকরোটা ধরা আছে, সেটা শ্রীলঙ্কান নীলা। এক এক ক্যারাট পঁচিশ হাজার টাকা। বাবা সেই টুকরোটাই গছানোর চেষ্টা করছে ভদ্রলোককে। চোখাচোখি হতেই আমায় বলল, টুম্পাই, বাবা দ্যাখ তো, এই স্টোনটার একজ্যাক্ট ওজন কত হবে?’ বলেই পাথরটা আমার দিকে এগিয়ে দিল।
আমার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে, সেটা বাবাও জানে যে কোনও স্টোন হাতে নিয়েই আমি বলে দিতে পারি, সঠিক ওজন কত। কোথাকার স্টোন—আসল না নকল। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আমি নিয়মিত দোকানে আসি। তখন থেকেই স্টোন ঘাঁটাঘাঁটি করা আমার অভ্যেস। ঠাকুর্দা আমায় এই স্বাধীনতাটুকু দিয়েছিল। আমার মধ্যে তাই এই ক্ষমতাটা এসে গেছে। ওজন এক সেন্টও কম-বেশি হবে না। বাবার কাছ থেকে নীলার টুকরোটা নিয়ে হাতের তালুতে রেখে, ওজন আন্দাজ করে আমি বললাম, ‘দশ ক্যারাট, তিন সেন্ট।’
বাবা বলল, ঠিক বলছিস তো? গিরিজাবাবুর কিন্তু দরকার ঠিক দশ ক্যারাট।’
আমি নিশ্চিত। বললাম, ‘মেপে দেখে নাও না!’
ভদ্রলোক আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন। আমি হাসলাম। আমাকে হাসতেই হবে। বাবার ট্রেনিং। দোকানে কাস্টমারদের সঙ্গে সব সময় হেসে কথা বলতে হবে। একটুও বিরক্ত হলে চলবে না। আমাদের কারবার হিরে-চুনি-পান্না- জহরত নিয়ে। যারা কিনতে আসেন, তাঁরা বেশ উচ্চবিত্ত। তাঁরা যেন কোনও কারণেই ক্ষুণ্ণ না হন। দোকানের সব কর্মচারীর ওপরেই বাবার কড়া নির্দেশ। কাস্টমার নতুন হলে তো কথাই নেই। তাঁর জন্য আরও খাতির।
আমাদের এই দোকানে যাঁরা আসেন, তাঁদের প্রায় সবাইকেই আমি চিনি। কিন্তু বাবা থাকে গিরিজাবাবু বলে উল্লেখ করল, তাঁকে আগে কখনও আমি দেখিনি। বয়স ষাটের কাছাকাছি। সৌম্যকান্তি। উজ্জ্বল গায়ের রঙ। পরনে ফিনফিনে চলোট করা ধুতি আর হাফহাতা পাঞ্জাবি। গলায় দুটো ছোট বড় সোনার চেন। গিরিজাবাবুর ডান হাতের মধ্যমায় হিরের আংটি। বেশ জ্বলজ্বল করছে। এক পলক তাকিয়েই বুঝে গেলাম, দু’ক্যারাটের।
Bish Pathar pdf download link
Download / Read Online
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.