শিশির বিশ্বাস এর কর্নেল সুরেশ বিশ্বাসের ছায়ায় গড়া একটি দুঃসাহসী অভিযাত্রী এবং অপরটি এক হার-না-মানা খেলোয়ারের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প Burmar Ondhokare pdf বর্মার অন্ধকারে pdf ডাউনলোড করুন ও পড়ুন।
Burmar Ondhokare pdf বর্মার অন্ধকারে pdf দুটি উপন্যাস
টাঙ্গুর অরণ্যে
অপারেশনটি ওয়ান
Burmar Ondhokare pdf বর্মার অন্ধকারে pdf নমুনাঃ
ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে যেতেই সুরেশের হাতটা তড়িৎ গতিতে চলে গেল বালিশের নীচে স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসনের দিকে। টাঙ্গুর এই সেগুন জঙ্গলে আসার আগে বোম্বাই বর্মা টিম্বার কোম্পানির রেঙ্গুন অফিসের বড়ো কর্তা ম্যাকডোনাল্ড সাহেব ওর হাতে আগ্নেয়াস্ত্রটা দিয়ে বলেছিলেন, “ঘুমের মধ্যেও অন্তত একটা কান খোলা রেখ হে ছোকরা।” সাহেব আরো কিছু বলেছিলেন। এক বঙ্গসন্তানের কাছে তা সুখকর নয়। চাপা আওয়াজটা তাই কানকে ফাঁকি দিতে পারেনি। ট্রিগারে আঙুল রেখে অতি সন্তর্পণে তাঁবুর দরজার দিকে ঘাড় ফেরাল ও। পর্দার ফাঁক দিয়ে হালকা আলোর আভাস। শেষ রাতে চারপাশ সবে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। এই সময় বাইরে কোনো গাছে একটা পাখির গলা সাধা শুরু হয়। অনেকদিন সেই আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলে বেশ লাগে শুনতে। নাথপুরে বাড়ির কথা কখনো মনে পড়ে যায়।
হলদে গোলাপ pdf – স্বপ্নময় চক্রবর্তী Holde Golap pdf – Swapnamoy Chakraborty
ওদের ঘরের পাশে কদম গাছের ডালেও এই সময় একটা দোয়েল মাঝে মধ্যেই এমন শিস দিত। আজ পাখিটা নেই। চারপাশটা ভয়ানক নিস্তব্ধ। ঝিম মেরে আছে বাতাস। সম্ভবত বৃষ্টি নেমেছে কোথাও। বাতাসে সেই আভাস। সঙ্গে অন্য এক অনুভূতি। মাত্র মাস কয়েক হল টাঙ্গুর এই সেগুন জঙ্গলের সঙ্গে পরিচয়। কিন্তু অভিজ্ঞতা বেড়েছে ঢের বেশি। নিঃশব্দে বিছানা ছেড়ে পায়ে পায়ে তাঁবুর পর্দা সরিয়ে বাইরে উঁকি মারল। রাতের পরিষ্কার আকাশে হালকা মেঘের আস্তরণ পড়তে শুরু করেছে। খানিক দূরে কুলিদের টেন্ট। পাশেই মাহুত-সর্দার মাং ফো হানের আস্তানা। অত লম্বা নাম উচ্চারণে অসুবিধে বলে ক্যাম্পের সবাই ওকে ‘সিন হেতিন’ বলে ডাকে। মাহুত সর্দার এখানে সিন হেতিন। সেটাই আরো সংক্ষিপ্ত হয়ে হেতিন। গোড়ায় সুরেশও ওকে ওই নামে ডাকত। তবে এখন আর হেতিন নয়, ‘আকো’ অর্থাৎ দাদা বলে।
পোড় খাওয়া অনেক দিনের অভিজ্ঞ মানুষ এই হেতিন। এই কয়েক মাসে অনেক কিছু শিখেছে ওর কাছে। বর্মার এই জঙ্গলে সেগুলো মেনে চলতে না পারলে বিপদ প্রতি পদক্ষেপে। চাপা আওয়াজটা ঘুমের মধ্যে একবারই শুনতে পেয়েছিল। তারপর আর সাড়া পায়নি। তবু হাতের অস্ত্র উঁচিয়ে পায়ে পায়ে বাইরে এসে দাঁড়াল। জঙ্গলে ভোর হবার আগের এই সময়টাই সবচেয়ে বিপজ্জনক।
টাঙ্গুর ঘন অরণ্যের মাঝে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে সিতাং নদী। দু’ধারে পাহাড় বেয়ে নেমেছে অসংখ্য ধারা। তাদের একটা যেখানে সমতলে পড়ে ঘোড়ার খুরের মতো বাঁক নিয়ে সিংয়ের দিকে বয়ে গেছে তারই অদূরে বোম্বাই বর্মা টিম্বার কোম্পানির এই চার নম্বর ক্যাম্প। চারপাশ কেটে সামান্য সাফ করা হলেও অদূরেই ঘন জঙ্গল। আধো অন্ধকারে চারপাশে সাবধানে চোখ বুলিয়ে তেমন কিছুই নজরে পড়ল না। সাবধানে বড়ো একটা শ্বাস টানল। হেতিনের কাছেই শিখেছে, জঙ্গলে শুধু চোখ-কান নয়, নাকের ভূমিকাও যথেষ্ট। জঙ্গলে প্রতিটি প্রাণীর গায়ের গন্ধ আলাদা। সময় ভেদে সে গন্ধ পালটেও যায়। জানা থাকলে গন্ধেও বুঝে নেওয়া যায় অনেক কিছু। কিন্তু চেষ্টা করেও আজ তেমন কিছু আভাস পেল না। কিন্তু হাল ছাড়ল না। মাত্র এই ক’মাসে কতটুকুই আর শিখেছে! সুরেশের সন্দেহটা তাই যায় না।
ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল pdf – চিত্রা দেব Thakurbarir Andarmahal pdf – Chitra Deb
চোখ দুটো চারপাশ ফালাফালা করে ঘুরতে থাকে। আর তখনই নজরে পড়ে অদূরে গাছপালার ফাঁকে ছোটোমত কিছু নড়ছে।
আধো অন্ধকারে চোখ দুটো ততক্ষণে সয়ে এসেছে। মুহূর্তে সারা শরীর কেঁপে ওঠে ওর। মস্ত এক বাঘের লেজের ডগা। সারা শরীর মাটিতে ঘাস-পাতার ভিতর মিশিয়ে দিয়ে স্থির হয়ে রয়েছে প্রাণীটা। লেজের ডগাটাই শুধু তিরতির করে নড়ছে। ওদের নাথপুরের বাড়িতে একটা বেড়াল ছিল। শিকারের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ার আগে এভাবেই নড়ত তার লেজটা। তাই বাঘের লক্ষ্যটিকে দেখতে না পেলেও বুঝতে অসুবিধা হল না সুরেশের। গতকাল ফাঁদ পেতে মগ কুলিরা বড়ো একটা শূকর ধরেছে। গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি একটা খোয়াড়ে সেটাকে আটকে রাখা হয়েছে। প্রাণীটার লক্ষ সেই খোঁয়াড়।
শিকারের গন্ধে এগিয়ে এলেও বাধা পেয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে। বুঝে নিতে চাইছে ব্যাপারটা। লেজের ডগাটাই নড়ছে তিরতির করে। এত কাছে প্রাণীটা, অথচ গন্ধ পায়নি কিছুমাত্র! ভাবতে গিয়ে রহস্যটা টের পেল সুরেশ। ভোরের বাতাস বইছে উলটো দিক থেকে। শেখার কত কিছুই যে বাকি আছে এখনো! কিন্তু অনুকুল বাতাসে ওর গন্ধও কি পায়নি প্রাণীটা! নিশ্চয় পেয়েছে। কিন্তু বনের রাজা পরোয়া করেনি। আর নয়ত শিকারের ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে বাকি কোনো কিছুতেই আর হুঁশ থাকে না ওদের।
এভাবে এক রয়াল টাইগার সুরেশ আগে কখনো দেখেনি। গায়ের দুর্দান্ত হলুদ রং, কালো ডোরা শেষ রাতের আধোঅন্ধকারেও যেন ঝলসে উঠছে। হাতের অস্ত্রটার দিকে সামান্য তাকাল সুরেশ। ১৮৭০এর আনকোরা পিস্তল। যথেষ্টই শক্তিশালী। কিন্তু অরণ্যে এ অস্ত্র নিছক আত্মরক্ষার জন্য। তার বেশি নয়। ভাবতে গিয়ে হঠাৎ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল। ভাগ্যিস, ক্যাম্পের ছোটো সাহেব পিটার নেই। ও ক্যাম্পে জয়েন করার পরে সেই যে ছুটি নিয়ে ক্যাম্প ছেড়েছে, আর ফেরেনি। থাকলে সর্বক্ষণের সঙ্গী ‘ওয়েস্টলে রিচার্ড’ রাইফেলটা এতক্ষণে কাজে লাগিয়ে ফেলত। এমন বড়ো আকারের বাঘের চামড়ার ভালই দাম রেঙ্গুনের বাজারে। যুদ্ধের পরে রেঙ্গুন এখন অনেকটাই থিতু। বিলেত থেকে নানা কাজে তো বটেই, ইদানীং বেড়াতেও আসছে অনেকে। এসব জিনিস পেলেই লুফে নেয় তারা। ভাল দাম পাওয়া যায়। করিতকর্মা পিটারের অতিরিক্ত রোজগার তাই মন্দ ছিলনা।
সাতপাঁচ ভাবতে-ভাবতে সামান্য অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল সুরেশ। হুঁশ হতে দেখল ইতিমধ্যে কখন উঠে দাড়িয়েছে বাঘটা। বুঝে ফেলেছে, শিকার নাগালের বাইরে। মুহূর্তে সতর্ক হল ও। পিছন থেকে হলেও বেশ বুঝতে পারে, প্রাণীটা যতটা হতাশ তার থেকে বেশি বিরক্ত। ধীরেসুস্থে প্রাণীটা ঘাড় ফেরাল এবার। চাপা গর্জনে তীক্ষ্ণ দাঁতের ফাঁক দিয়ে লালা ছিটকে বেরোল। কিন্তু সে কয়েক মুহূর্তের জন্য। বনের রাজা ওই সামান্য সময়ের মধ্যেই বুঝি পরিমাপ করে নিল সামনের নতুন শিকারটিকে। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে গজেন্দ্র গমনে পা ফেলে মিলিয়ে গেল বনের আড়ালে।
Burmar Ondhokare pdf download link
Download / Read Online
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.