সাগরিকা রায় pdf যারা পড়েছেন যারা জানেন তার বইয়ের মৌলিকতা ও লেখার মন কতটা শক্তিশালী। সাগরিকা রায় এর জনপ্রিয়তা বই Dwitiya Sandhya pdf আবার আমাদের শেয়ার করা হলো। দ্বিতীয় সন্ধ্যা pdf লেখিকার অন্যতম হরর থ্রিলার উপন্যাস। সকল পাঠক লেখিকার প্যান্ডোরার বাক্স পড়েছেন নিশ্চয়ই তাদের লেখিকা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। আধো ভৌতিক হরর রচনা টাইপের লেখা Dwitiya Sandhya pdf টি পড়ে পিলে চমকে যাওয়ার মতো।
Dwitiya Sandhya pdf ভূমিকাঃ
“দ্বিতীয় সন্ধ্যা” একটি হরর আধিভৌতিক উপন্যাস। পার্থিব জগতের সঙ্গে অপার্থিব জগত মিলেমিশে গিয়ে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এই উপন্যাসে এক প্রেতলোকের কথা বলতে চেয়েছি, যার বাসিন্দারা চিরকালই চেয়েছে শুভকে নষ্ট করতে। ফ্যান্টাসি, হরর, মিশ্রিত হয়ে চেনা দুনিয়ার বাইরের অচেনা অন্ধকার দুনিয়াকে দেখা এই উপন্যাসের মূল রস। দীপ প্রকাশনকে অজস্র ধন্যবাদ। ধন্যবাদ প্রিয় কিছু মানুষকে, যাঁরা সবসময় পাশে থাকেন।
দ্বিতীয় সন্ধ্যা pdf নমুনাঃ
জীবনের ছোট ছোট ঘটনাগুলো এক জায়গায় জড়ো করলে দেখি, সে এক বিরাট অভিজ্ঞতার পাহাড় হয়ে উঠেছে। হয়তো প্রত্যেক মানুষের জীবন এইরকম বিচিত্র অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। কে জানে এইসব অভিজ্ঞতা একজনের ক্ষেত্রে যেমন ঘটে, ঠিক তেমনই অন্যের ক্ষেত্রেও একইভাবে ঘটে থাকে কি না? সেই প্রশ্নের উত্তর পাইনি আজও। মনে তার অন্তহীন খোঁজ চলছে। অতীতের দিকে তাকালে সব স্পষ্ট দেখতে পাই। প্রেত-পিশাচ নিয়ে ভাবিনি সে অর্থে, কিন্তু নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা করতে পারি না। আজও। দেড় বছর আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মানসপটে ভেসে ওঠে। সে কথাই বলব।
হরর ও গোয়েন্দা উপন্যাস পার্ট ১ পিডিএফ ডাউনলোড Horror Goyenda Uponnas pdf download
সে ছিল একটা সময়, যখন মাঝে মাঝে বাইরে বেরিয়ে পড়তে বেশ লাগত। অজানা অচেনা গ্রামের মধ্যে কিছুদিন থেকে গ্রামীণ জীবনকে উপভোগ করা, বা কোথাও কোনও পুরোনো নির্জন বাংলোবাড়িতে দুটো রাত কাটিয়ে আসা এমন শখে শৌখিন আমি। আমার সঙ্গে কখনও থাকে নিলয়। কখনও থাকে দীপু। দীপুর পক্ষে ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ কম। বাড়িতে অসুস্থ মা, আর একজন আছেন। তিনি দীপুর মায়ের দূর সম্পর্কের ভাই। বীরুমামা। তিনিও বেশ বয়স্ক এবং অসুস্থ। বীরুমামাকে দেখে মনে হয় তিনি হাসছেন, কথা বলছেন, কিন্তু মন যেন অন্য কোথাও আটকে আছে। মাঝে মাঝে মেঝের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকেন। হয়তো শরীর ভালো থাকে না। কাউকে বলে বিরক্ত করতে চান না। অর্থাৎ এসব নিয়ে দীপু বেশ চাপেই থাকে। তবে ওদের বাড়িতে গিয়ে আমার ভালোই লেগেছে। ছোট বাড়ি।
পিছনে ছোট পুকুর। গাছপালায় ভরা চারপাশ। তিনটে ছোট ছোট শোবার ঘর, বারান্দার একটা সাইডে পাটখড়ির পার্টিশন দিয়ে রান্নার এবং বারান্দায় পিঁড়ি পেতে খাওয়ার ব্যবস্থা। উঠোনের একধারে ফুলের গাছ। অন্যধারে প্রাচীন এক কাঁঠালগাছ। তার ছায়া মেখে দাঁড়িয়ে আছে খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর। যেন একজন শ্যামলবর্ণা যুবতী ছেলেমানুষের মত কাঁঠালের ছায়ায় লুকিয়ে আছে। নিজেকে ঢেকে রেখেছে। মাটির ঘরের বারান্দায় একজনের শোবার মতো ছোট চৌকি। কিন্তু, কেউ সেই ঘর ইউজ করে না। চৌকিতে কেউ বসে না। মোট কথা হল, ওদিকে কেউ পা দেয় না। অন্তত আমি দেখিনি। একটি ঘরে দীপুর মা আর অতসীকাকি থাকে। অন্য ঘরের একটিতে থাকে দীপু, অন্যটিতে বীরুমামা। বীরুমামার ঘরে বসে খুব গল্প হত।
গ্রামেরই অতসীকাকি এসে রান্নাবান্না করে দিয়ে যেত আগে। এখন সে কিছুদিন ধরে এই বাড়িতেই থাকে। হঠাৎ করে এসে হাজির, সে নাকি শ্বশুরবাড়িতে থেকে দীপুর মায়ের জন্য সেবা করতে পারছে না। আমাদের চা দিয়ে গেল সেই কাকিমা। গ্রামের মানুষ চায়ে চিনি বেশি খায়। অতসীকাকিকে সে কথা বলাতে হেসে বলল, “কাল ঠিকঠাক দেব। আমি নিজেও বেশি মিষ্টি খাই কিনা। বুঝতে পারিনি তাই।” অতসীকাকিকে হাসলে ক্রুর মনে হয়। অদ্ভুত।
চা খেতে খেতে বীরুমামার গল্প শুনছি। মামার অনেক অভিজ্ঞতা। অদ্ভুত সব গল্প। পরাবাস্তব জগতের গল্প মামা চমৎকার বলেন। যেন নিজের এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলছেন। বলেছিলেন একচোখো দিদিমণি নামের এক পিশাচিনীর কথা। সেই মহিলা বীরুমামার ছেলেবেলায় দেখা সত্যিকারের রক্তমাংসের শরীরের একজন সে নাকি একটিমাত্র চোখ দিয়ে এমনভাবে তাকাত, সামনে যে থাকত সে পাথর হয়ে যেত। মেডুসার মতো। বীরুমামা বলেছিল, মেডুসা এখনও আছে। টুকরো টুকরো হয়ে ঢুকে আছে বিভিন্ন শরীরে। সে বেছে নিয়েছে পছন্দের শরীর। মামা বলেছিল, ডিটেইলসে বলবে, কিন্তু নানান কাজে আর শোনা হল না ।
জমিয়ে দু’দিন থেকে ফিরে এসেছি। কিন্তু মন টানছে। ভাবছি আর-একবার যাব। সে কথা ভেবে দীপুকে ফোন করেছি। দীপু বোধহয় ট্রেনে আছে। রিং শুনতে পাচ্ছে না। রাতে সবে খেয়ে নিয়ে গল্পের বই হাতে বিছানায় ঢুকেছি, অমনি দীপুর ফোন। আমার ইচ্ছেটা প্রকাশ করতেই বলল, “বেশ তো, চলে আয়।’ ঠিক হল, নেক্সট ফ্রাইডে এখান থেকে সন্ধের ট্রেনে উঠে যাব। পৌঁছোতে পৌঁছোতে রাত ন-টা হবে। দীপু স্টেশনে থাকবে। ব্যস। আর কী চাই?
আমি শুক্রবার অফিস করে মেস-এ না ফিরে একবারে ট্রেনে উঠে বসেছি। ব্যাকপ্যাকে-একসেট ঘরে পরার মতো শার্ট আর পাজামা রয়েছে। একটা ছাতা আমার সঙ্গে থাকেই। আর জলের বোতল। কিছু দরকারি ওষুধ সঙ্গে নিয়েছি। গাঁ-গঞ্জ এলাকায় রাত বিরেতে দরকার হলে অসুবিধেয় যাতে পড়তে না হয়, সেই জন্য হুঁশিয়ার থাকা আর কি। ট্রেনে উঠে জানালার ধারে বসেছি। গরমের দিন। বর্ষার আভাস নাকে আসছে। গত হপ্তায় জোর বৃষ্টি হয়েছে। একটু জোলো বাতাস ট্রেনের সঙ্গে ছুটছে। বাতাসে ঘুমের ছোঁয়া আমাকে তন্দ্রালু করে তুলছে। এমনিতেই বেশ টায়ার্ড লাগছে। লাগারই কথা অবশ্য। সেই কোন ভোরে উঠে ট্রেন ধরে বর্ধমানে অফিস করতে যাওয়া। ফের দীপুদের গ্রামে যাওয়া মানে সম্পূর্ণ উলটোদিকে যাওয়া। যাক গে। দুটো দিন কাটিয়ে আসি। হাওয়া বদল যাকে বলে।
ট্রেন ঢিমে তালে চলছে। আমার ঘুম পাচ্ছে। কেমন একটা স্বপ্নাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যে ডুবে আছি যেন। যাত্রীদের কথাবার্তা সব আমার কানের পাশ দিয়ে ভেসে ভেসে যাচ্ছে। আমি দেখতে পেলাম শব্দগুলোর গায়ে হলদে ডানা লাগানো। পত পত করে বাতাসে সাঁতার কেটে তারা যাচ্ছে। কোথায় কে জানে!
কোদালকাটি গ্রামের হরিশজেঠা ছোট একটা কুচো মাছ ধরার জাল নিয়ে ছুটছে শব্দের পিছনে। আর চেঁচাচ্ছে, “বল হরি হরি বোল।” বোল ফুটছে না শব্দদের। তারা ইচ্ছেমতো ভেসে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে পিছন ফিরে ফিরে হরিশজেঠাকে দেখে নিচ্ছে। হরিশজেঠা ছুটতে ছুটতে একটা জলে ভরা গর্তে পড়ে গেল। উফ, আমার দম আটকে আসছে। জলে পড়ে কেমন নাকানি- চোবানি খাচ্ছে জেঠা। শ্বাস নেওয়ার জন্য আইঢাই করছে। ঠিক তখনই জেঠার হাতের জালটা কুচো মাছ ধরার মতো করে জেঠাকে জল ভরতি গর্ত থেকে ছেঁকে তুলল। ঝপ ঝপ করে জল পড়ছে। ওভাবেই ঘড়ঘড়ে গলায় জেঠা বলছে, “ও আবির, বল হরি হরি বোল।”
আমার নামটা বলেছে বলেই আমার চটকা ভেঙে গেল। আমি তাড়াহুড়ো করে উঠে বসছি, পাশের লোকটি বলল, “ট্রেন দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কেউ চাকার তলে পড়েছে। কতক্ষণে ছাড়বে, কে জানে। এ লাইনে এসব নিত্যকার ঘটনা। মরিবার কেন যে সাধ জাগে, কে জানে!’
ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লাগল। মুহুর্তখানেক মাত্র। বুঝতে বুঝতেই শরীর গুলিয়ে উঠেছে। কী বিশি স্বপ্ন দেখেছি এখন। আমার পাশে কেউ নিশ্চয় “বল হরি হরি বোল” বলেছে অ্যাকসিডেন্টের কথা শুনে। সেটাই আমার ব্রেনে ঢুকে জিলিপি পাকিয়েছে। আর অবচেতন টেতন মিক্সড হয়ে পাঁচমিশেলি চানাচুর হয়ে গিয়েছে। তবে, যা-ই হোক, খুব বিশ্রি স্বপ্ন দেখেছি। মনটা কেমন যেন অসাড় হয়ে রয়েছে।
জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। দূরে দূরে ছোট ছোট আলো জ্বলে উঠেছে। ঘোর অন্ধকারে কাদের বাড়ির এক টুকরো ঘরের লালচে আলোমাখা দরজাটা দেখতে পাচ্ছি। কে যেন অন্ধকার ফুঁড়ে ছোট্ট হ্যারিকেন দোলাতে দোলাতে ঢালু জমির দিকে নেমে গেল। কিছু দেখা, কিছু না দেখা মিলেমিশে অদ্ভুত ছবি হয়ে যায়। কে আজ চলে গেল ট্রেনের চাকার নীচে? কী এমন তাড়া ছিল তার? এই জীবন অসহ্য হয়ে উঠেছিল কি? আপন কেউ ছিল না তার বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে? কেউ বলেনি, আরও একটু দেখ! আরও একবার চেষ্টা কর? বলেনি, পাশেই আছি, এত ভাবছ কেন? বলে না। পিছন থেকে ডেকে বলে না, “চালভাজা আর ছোলাভাজা ভাজছি। বেরিয়ো না যেন। এক্ষুনি খাবি!”
আমি চুপ করে বসে আছি। দীপুকে ফোন করে বলে দিয়েছি যে দেরি হবে পৌঁছোতে। কখন গাড়ি ছাড়বে, জানি না।
দ্বিতীয় সন্ধ্যা বই রিভিউঃ
গল্প কথক আবির গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে না। তার সঙ্গী হয় নিলয় অথবা দীপু। তবে দিপুকে নিয়ে তিনি সবসময় পেতে পারেন না। দীপু, তার মা ও তার মামাকে নিয়ে তাদের সংসার। তার মা ও মামা থাকেন অসুস্থ। দীপুর মামা চমৎকার গল্প কাহিনী বলতে পারেন। একবার ট্রেনে করে রওয়ানা হলেন অজানার উদ্দেশ্যে। ট্রেনের মধ্যে আধো ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখেন। এতো বিশ্রী স্বপ্ন আগে কখনো দেখেনি। তাই মনের মধ্যে একটা অজানা অস্থিরতা কাজ করতে থাকে।
হঠাৎ করেই আবিরের গলার স্বর যেন পরিবর্তন হয়ে যায় যেমনটি একজন মানুষের ভিতরে অন্য একটি আত্মা ভর করলে হয়। আবির হঠাৎ করেই সুইসাইট নিয়ে ভাবতে শুরু করে। দিপু লক্ষ করে আবিরের যেন হঠাৎ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তন কোন স্বাভাবিক পরিবর্তন নয় এ যেন ভৌতিক কোন ইঙ্গিত। আবিরের কথাবার্তা ও চালচলনে যেন অলৌকিক ঘটনার ছায়া লক্ষ্য করছে দীপু।
তার পরও দীপু আর আবির ঘুরে বেড়ায় নানা গ্রাম, বন, জঙ্গল আর অজানা অচেনা জায়গায়। তাদের সাথে ঘটে বিচিত্র ও অলৌকিক সব ঘটনা। কোন এক সন্ধ্যায় দিপু ও আবির বের হয় অজানার উদ্দেশ্যে তারপর তারা মুখোমুখি হয় অদ্ভুত ও বিচিত্র সব ঘটনার। কখনো ঘুমের ঘোরে আত্মহত্যা কিংবা ভয়ংকর সব অভিযানের স্বপ্নে বিভোর হয়ে যাওয়া অথবা কোন একটি কেল্লা আর কেল্লার পাশেই রয়েছে নদী নদীতে রয়েছে নৌকা আবার সেই নৌকাকে পেঁচিয়ে ধরেছে বিশাল আকৃতির এক সাপ। এমন সব অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হতে থাকে তারা।
তাইতো লেখক বলেনঃ
এখন আমার রাতে ঘুম আসে না। অন্ধকার ঘরে শুয়ে দেখতে পাই এক বিষন্ন সন্ধ্যায় অমলতাস গাছের ছায়ায় ছায়ায় পাঁচটি লোকের সঙ্গে চলে যাচ্ছে নিলয়। চলে যাওয়ার খানিক আগেই ও এলোমেলো গলায় বলেছিল, “শরীরে যেন হাওয়া ভরে রাখা, জানিস আবির?”
কী হয়েছে নিলয়ের? জানা হবে না কখনও।
দীপু একটা সন্ধ্যার সাক্ষী, যে সন্ধ্যায় কোদালকাটি গ্রামের পাঁচটি লোক নিজেদের স্থান অন্য পাঁচজনের হাতে দিয়ে চলে গিয়েছিল কোনও এক অজানায়। আর, সেদিন আমি দ্বিতীয় সন্ধ্যা দেখতে পেয়েছি, যে সন্ধ্যায় পাঁচটি লোক এসেছিল নিলয়কে নিয়ে যেতে।নিলয় কি সত্যিই সেদিন এসেছিল আমার কাছে? মনে হয় সব ভ্রম। কিন্তু, ভেজা ভেজা সোয়েটার, কম্বল আমি সেপ্টেম্বর মাসে নিশ্চয় গায়ে দিইনি। বিছানাটাও ভেজা ভেজা ছিল। তাহলে?
কত প্রশ্নের জবাব নেই নিলয়। আমি নিশ্চিত, কেল্লাতেই আছে আবু হাসানের লেখা কালাজাদুর বই। সেই বইতে তোর ফিরে আসার পথ লেখা আছে। হয়তো কোনওদিন তুই ফিরে আসতে পারবি। যদি সেই বই পাওয়া যেত।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.