হাজার বছর ধরে প্রখ্যাত বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত একটি কালজয়ী সামাজিক উপন্যাস Hazar Bosor Dhore pdf। হাজার বছর ধরে জহির রায়হান PDF এ হাজার বছর ধরে উপন্যাসের সারাংশ জানতে বইটি পড়ুন। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের সেরা উক্তি কোনটি? এই প্রশ্নটি বহুল প্রচলিত। এর উত্তর জানতে হাজার বছর ধরে উপন্যাসের বিষয়বস্তু পড়ুন ও হাজার বছর ধরে উপন্যাস read online Hazar Bosor Dhore pdf থেকে পড়ে হাজার বছর ধরে উপন্যাসের চরিত্র জানতে পারবেন। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের শেষ লাইন কী? বা হাজার বছর ধরে উপন্যাসের লেখক কে জানতে পিডিএফটি পড়ুন।
Hazar Bosor Dhore pdf নমুনা
মস্ত বড় অজগরের মতো সড়কটা এঁকেবেঁকে চলে গেছে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে। মোগলাই সড়ক।
লোকে বলে, মোগল বাদশাহ আওরঙ্গজেবের হাতে ধরা পড়বার ভয়ে শাহ সুজা যখন আরাকান পালিয়ে যাচ্ছিলো তখন যাবার পথে কয়েক হাজার মজুর খাটিয়ে তৈরি করে। গিয়েছিলো এই সড়ক। দু-পাশে তার অসংখ্য বটগাছ। অসংখ্য শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে সগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই দীর্ঘকাল ধরে। ওরা এই সড়কের চিরন্তন প্রহরী।
কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা।
মাঝে মাঝে ধানক্ষেত সরে গেছে দূরে। দু-ধারে শুধু অফুরন্ত জলাভূমি। অথৈ পানি। শেওলা আর বাদাবন ফাঁকে ফাঁকে মাথা দুলিয়ে নাচে অগুনতি শাপলা ফুল ।
ভোর হতে আশেপাশের গাঁয়ের ছেলে-বুড়োরা ছুটে আসে এখানে। একবুক পানিতে নেমে শাপলা তোলে ওরা। হৈ-হুল্লোড় আর মারামারি করে কুৎসিত গাল দেয় একে অন্যকে। বাজারে দর আছে শাপলার। এক আঁটি চার পয়সা করে।
কিন্তু এমনও অনেকে এখানে শাপলা তুলতে আসে, বাজারে বিক্রি করে পয়সা রোজগার করা যাদের ইচ্ছে নয় ।
মণ্ডু আর টুনি ওদেরই দলে।
ওরা আসে ধলপহরের আগে, যখন পুব আকাশে শুকতারা ওঠে। তার ঈষৎ আলোয় পথ চিনে নিয়ে চুপিচুপি আসে ওরা। রাতের শিশিরে ভেজা ঘাসের বিছানা মাড়িয়ে ওরা আসে ধীরে ধীরে। টুনি ডাঙায় দাঁড়িয়ে থাকে।
মন্তু নেমে যায় পানিতে।
তারপর, অনেকগুলো শাপলা তুলে নিয়ে, অন্য সবাই এসে পড়ার অনেক আগে সেখান থেকে সরে পড়ে ওরা।
পরীর দীঘির পারে দুজনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। শাপলার গায়ে লেগে থাকা আঁশগুলো বেছে পরিষ্কার করে।
মন্তু বলে, বুড়া যদি জানে তোমারে আমারে মাইরা ফালাইবো।
টুনি বলে, ইস, বুড়ার নাক কাইটা দিমু না।
নাক কাইটলে বুড়া যদি মইরা যায় ।
মইরলে তো বাঁচি। বলে ফিক করে হেসে দেয় টুনি। বলে, পাখির মতো উইড়া আমি বাপের বাড়ি চইলা যামু। বলে আবার হাসে সে, সে হাসি আশ্চর্য এক সুর তুলে পরীর দীঘির চার পাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়।
এ দীঘি এককালে এখানে ছিলো না।
আশেপাশের গাঁয়ের ছেলে-বুড়োদের প্রশ্ন করলে তারা মুখে-মুখে বলে দেয় এ দীঘির – ইতিহাস। কেউ চোখে দেখেনি, সবাই শুনেছে। কেউ শুনেছে তার বাবার কাছ থেকে।
তার বাবা জেনেছে তার দাদার কাছ থেকে। আর তার দাদা শুনেছে তারও দাদার কাছ থেকে।
সে অনেক বছর আগে।
তখন গ্রাম ছিলো না। সড়ক ছিলো না। কিছুই ছিলো না এখানে। শুধু মাঠ, মাঠ আর মাঠ। সীমাহীন প্রান্তর।
বৈশাখী পূর্ণিমা রাতে, পরীরা নেমে আসতো এই পৃথিবীতে। ওরা নাচতো গাইতো খেলতো।
লালপরী, নীলপরী আর সবুজপরী। পরীদের অনেকের নামও জানা আছে এ গাঁয়ের লোকের। পুঁথিতে লেখা আছে সব।
একদিন হঠাৎ পরীদের খেয়াল হলো, একটা দীঘি কাটবে। যার পানিতে মনের আনন্দে সাঁতার কাটতে পারবে ওরা। ডুব দিয়ে, পানি ছিটিয়ে ইচ্ছেমতো হৈ-হুল্লোড় করতে
পারবে। Hazar Bosor Dhore pdf
যেই চিন্তা সেই কাজ।
আকাশ থেকে খন্তা কোদাল আর মাটি ফেলবার ঝুড়ি নিয়ে এলো ওরা।
বৈশাখী পূর্ণিমার রাত।
রুপোলি জোছনার স্নিগ্ধ আলোয় ভরে ছিলো এই সীমাহীন প্রান্তর। দক্ষিণের মৃদু বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছিলো পরীদের হাসির শব্দে ।
কথায় গানে আর কাজে।
রাত ভোর হবার আগে দীঘি কাটা হয়ে গেলো।
পাতাল থেকে কলকল শব্দে পানি উঠে ভরে গেলো দীঘি।
সেই দীঘি। Hazar Bosor Dhore pdf
তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গ্রাম। এক নয়, অনেক। গভীর রাতে ধপাস ধপাস ঢেঁকির শব্দে গমগম করে গ্রামগুলো।
জোড়া-বউকে ঢেঁকির উপরে তুলে দিয়ে রাত জেগে ধান ভানে বুড়ো মকবুল। পিদিমের শিখাটা ঢেঁকির তালে তালে মৃদুমৃদু কাঁপে।
মকবুল ধমকে ওঠে বউদের, কি, গায়ে শক্তি নাই? এত আস্তে ক্যান। আরো জোরে চাপ দাও না, হুঁ। এমনভাবে গর্জে ওঠে মকবুল যেন ক্ষেতে লাঙল ঠেলতে গিয়ে রোগা লিকলিকে গরু-জোড়াকে ধমকাচ্ছে সে। হুঁ, হুট হুট । হুঁ, আরো জোরে। আরো জোরে।
ধমক খেয়ে ঢেঁকিতে আরো জোরে চাপ দেয় ওরা। টুনি আর আমেনা। পাশের বাড়ি থেকে আম্বিয়ার গান শোনা যায়। ‘স্বপ্নে আইলো রাজার কুমার, স্বপ্নে গেলো চইলারে। দুধের মতো সুন্দর কুমার কিছু না গেলো বইলারে।’ Hazar Bosor Dhore pdf
ঢেঁকিতে চড়েই গান গাওয়ার শখ চাপে আম্বিয়ার। সতেরো আঠারো বয়স হয়েছে, কিন্তু এখনো বিয়ে হয়নি ওর। আঁটসাঁট দেহের খাঁজে খাঁজে দুরন্ত যৌবন, আট-হাতি শাড়ির বাঁধন ভেঙে ফেটে পড়তে চায়। চেহারায় মাধুর্য আছে। চোখজোড়া বড় বেশি তীক্ষ্ণ। ঢেঁকিতে চড়লে, ঢেঁকিকে আর সুখ দেয় না ও। এত দ্রুত তালে ধান ভানতে থাকে, মনে হয় ঢেঁকিটাই বুঝি ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। Hazar Bosor Dhore pdf
ধান ভানা শেষ হলে গায়ে দরদর ঘাম নামে ওর। একটা চাটাইয়ের ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে জোরে শ্বাস নেয় আম্বিয়া।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.