তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর Kobi pdf কবি pdf ডাউনলোড করুন ও Kobi pdf পড়ুন।
Kobi pdf কবি pdf ভূমিকা
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’
বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের নয়, কিন্তু এর ইতিহাস সমৃদ্ধ। আধুনিক যুগের সাহিত্যসৃষ্টির সঙ্গে এর যথার্থ সম্পর্ক, পাশ্চাত্য প্রভাবে তা বিকশিত, গদ্যের পথরেখায় তা সম্প্রসারিত। আধুনিক যুগে ইংরেজি সাহিত্যের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্রের প্রেক্ষিতে ইংরেজি নভেলের আদর্শে বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসের সূচনা। অপরদিকে আধুনিক যুগে বাংলা গদ্যের চর্চা ও বিকাশের সাথে বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে বাংলা সাহিত্যের যে সংযোগ তাতে উপন্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও তার তাৎপর্য অত্যধিক। উপন্যাসের প্রাথমিক প্রচেষ্টার দিকবিদিক বিবরণের পর যখন একটি সঠিক আদর্শ আবিষ্কারে বাংলা উপন্যাস সক্ষম হল তখন তার জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে।
একশ বছরের সেরা হাসি pdf – অরুণ মুখোপাধ্যায় Eksho Bacharer Sera Hashi pdf : Arun Mukhapaddhay
সেখানে বাঙালি জীবনের সাথে উপন্যাসের বিষয়ের সম্পৃক্ততা জনপ্রিয়তার যথার্থ কারণ হিসেবে বিবেচনার যোগ্য। বাঙালি জীবনের বৈচিত্র্যময় আলেখ্য পরম আকর্ষণীয় হয়ে ফুটে উঠেছে শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকগণের লেখনীর মাধ্যমে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখেরা বাংলা উপন্যাসে যে বিচিত্র বিষয় ও অনুভূতি সঞ্চার করেছিলেন সে পথ ধরেই অগণিত ঔপন্যাসিক বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ ও গৌরবান্বিত করে তুলেছেন। সমকালীন বাংলা উপন্যাসের ঐতিহ্য আরো সমৃদ্ধ এবং বিশ্বজনীন চেতনায় মহিমান্বিত হয়ে উঠেছে।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮-১৯৭১) বাংলা সমকালীন উপন্যাসে সবচেয়ে সমাজ সচেতন শিল্পী হিসেবে নিজেকে মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করে রেখে গেছেন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অসংখ্য গল্প ও উপন্যাসে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে অগ্রসরমান ধনতন্ত্রের দ্বন্দ্বসংঘাতটি খুবই সার্থকভাবে চিত্রিত হয়েছে। এছাড়া মানব চরিত্রের নানা জটিলতা, সমাজ বাস্তবতার বিভিন্ন অনুষঙ্গ বিশেষত, রাঢ় অঞ্চলের জীবন ও প্রকৃতি তারাশঙ্করের সাহিত্যে জীবন্ত হয়ে আছে।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম লাভপুর গ্রামে, বীরভূম জেলায় পশ্চিমবঙ্গে ১৮৯৮ সালের ২৩শে আগস্ট। বীরভূমের জীবন ও প্রকৃতি তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিতে যে অনবদ্য রূপ লাভ করেছে তার কারণ তাঁর মাতৃভূমির সাথে নিবিড় একাত্মতা। তাঁর জীবনও ছিল বৈচিত্র্যময়। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে আই. এ. পড়ার সময় ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ গ্রহণের জন্য কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৩০ সালে রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগদানের জন্য এক বছর কারাগারে আটক থাকেন। কর্মজীবনে তিনি প্রথমে কয়লার ব্যবসায়, পরে সে ব্যবসায় পরিত্যাগ করে বাজপুরে কিছুদিন চাকরি করেন। পরবর্তীকালে তিনি আটবছর পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভায় এবং ছয় বছর রাজ্যসভায় সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন।
এছাড়া চল্লিশের দশকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎস্মৃতি পুরস্কার ও জগত্তারিণী স্মৃতি পদক, রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমী ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন। তিনি কলকাতা, যাদবপুর ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর তারিখে মারা যান।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত গ্রন্থসংখ্যা একশ ত্রিশটি, তার মধ্যে সাতান্নটি উপন্যাস। তাঁর প্রথম গল্প ‘রসকলি’ কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সাহিত্য জীবনের প্রথম দিকে তিনি কবিতাও লিখতেন। পরে অবশ্য তা পরিত্যাগ করেন। ১৯৪০ সালের দিকে তিনি ‘বঙ্গশ্রী’ ও ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় গল্প রচনায় প্রবীণতার পরিচয় নিয়ে দেখা দেন। তাঁর লেখনীতে প্রথমে গল্প এবং পরে গল্প উপন্যাস নাটক রচিত হয়েছিল। তাঁর সমকালীন একজন লেখকের সাথে তাঁর বেশ মিল লক্ষ্য করা যায়। তিনি শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে ডঃ সুকুমার সেন তাঁর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, “তারাশঙ্করকে শৈলজানন্দের সহযাত্রী বলিতে পারি।
শৈলজানন্দ বয়লাকুঠির সাঁওতাল জীবন লইয়া সীমাবদ্ধ অঞ্চলের কাহিনী রচনার পথ প্রদর্শন করিয়াছিলেন। তারাশঙ্কর লইলেন তাঁহার দেশ দক্ষিণপূর্ব বীরভূমের সাধারণ লোকের জীবন—পুরানো গ্রামের জমিদার ঘর হইতে নদীচরের মাল বেদেপাড়া পর্যন্ত। অনতিপ্রাচীন স্থানীয় ঐতিহ্য গল্প-কাহিনী ও কিংবদন্তী ইনি ভাল করিয়াই কাজে লাগাইয়াছেন। এবং এইখানেই তারাশঙ্করবাবুর রচনার প্রধান বিশিষ্টতা। তারাশঙ্কর বাবুর দৃষ্টি শৈলজানন্দের মত উদাসীন ও নিরাবিল নয়। সে দৃষ্টিতে হৃদয়াংশ যুক্ত আছে এবং তাহাতে অতীতের প্রতি টান অননুভূত নয়। সেই সঙ্গে হৃদয়াবেগের প্রশ্রয় দিয়া সাধারণ পাঠকের মনস্তুষ্টির চেষ্টাও আছে। এ বিষয়ে তারাশঙ্করের রচনা শরৎচন্দ্রের রচনার সঙ্গে যৌন আবেদনটুকু বাদ দিয়া তুলনা করিতে পারি। তারাশঙ্করের গল্প-উপন্যাসে কল্পনার প্রাচুর্য নাই, বিষয়বস্তুর অর্থাৎ আধেয়ের ক্ষীণতা নাই, আধায়ের অর্থাৎ স্টাইলের শ্লথতা ও প্রগলভতা আছে। প্রধানত এই কারণে ইহার গল্প যতটা জমাট, উপন্যাস ততটা নয়।”
সমকালীন কথা সাহিত্যের ইতিহাসে তারাশঙ্করের আসন যে অত্যুচ্চ শীর্ষবর্তী তা তাঁর উপন্যাস ও ছোটগল্পের অবদানে সম্ভব হয়েছে। ‘কালিন্দী’, ‘গণদেবতা’, ‘পঞ্চগ্রাম’, ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ ইত্যাদি উপন্যাসে এপিকধর্মী রচনার এক অতুল্য ধারার প্রবর্তন করে বাংলা সাহিত্যের পাঠক সমাজে তিনি সশ্রদ্ধ বিষয় উৎপদান করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শৈলী- সৌকর্যের বিচারে ছোটগল্পের সৃজনভূমিতেই বুঝি তাঁর প্রতিভার শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তি। নিজের সৃষ্টির ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য করে পরিণতমনস্ক শিল্পী দ্বিধাহীন কণ্ঠে যা স্বীকার করেছিলেন তা ভূদেব চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, তাঁর সৃষ্টির মধ্যে তাঁর চেনা জগতের একান্ত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার লোকেরাই নিতান্ত পরিচিত জীবনভূমিতে ভীড় করে এসেছে। তাদের মধ্যে শিল্পীর রায়প্রান্তবর্তী জন্ম গ্রামের পরিমণ্ডল ও সেখানকার স্বজনেরাই আনাগোনা করেছে বারবার, আর তাদের মধ্যেও নিজের লেখার গতিতে ব্যক্তি তারাশঙ্কর নিজেই এসে ধরা দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে কোনো শিল্পীরই ব্যক্তিত্বকে তাঁর স্বজন প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা সম্ভব নয় – তারাশঙ্করের মত আত্মসচেতন ব্যক্তিকে তো কখনোই নয়। তাই নিজের রচনার মধ্যে বারেবারে এসে ধরা দিয়েছেন যে তারাশঙ্কর, তিনি কেবল ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা ভাণ্ডারের স্তূপীকৃত বস্তু সঞ্চয় নিয়েই হাজির হননি, সেই সঙ্গে এনেছেন সেই জীবন সম্পর্কে নিজের প্রত্যয়, হৃদয়াবেগ ও সৌন্দর্যবোধের পসরা সাজিয়ে — গল্পের শরীরে খড়ের উপরে একমাটি দুমাটির মূর্তি গড়েছেন সেই বস্তুপুঞ্জের সঞ্চিত সম্ভারে।
Kobi pdf download link
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.