শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজ adbhuture series by shirshendu mukhopadhyay pdf অদ্ভুতুড়ে সিরিজ ৩২ pdf মোহন রায়ের বাঁশি pdf Mohon Rayer Bashi pdf ডাউনলোড করুন।
Mohon Rayer Bashi pdf নমুনাঃ
ময়নাগড়ের দিঘির ধারে সন্ধেবেলায় চুপটি করে বসে আছে বটেশ্বর।
চোখে জল, হাতে একখানা বাঁশি। পুরধারে মস্ত পূর্ণিমার চাঁদ গাছপালা ভেঙে ঠেলে উঠবার চেষ্টা করছে। দিঘির দক্ষিণ দিককার নিবিড় জঙ্গল পেরিয়ে দখিনা বাতাস এসে দিঘির জলে স্নান করে শীতল সমীরণে পরিণত হয়ে জলে হিলিবিলি কাঁপন তুলে, বটেশ্বরের মিলিটারি গোঁফ ছুঁয়ে বাড়িবাড়ি ছুটে যাচ্ছে। চাঁদ দেখে দক্ষিণের জঙ্গল থেকে শেয়ালেরা ‘ক্যা হুয়া, ক্যা হুয়া’ বলে হিন্দিতে পরস্পরকে প্রশ্ন করছে। বেলগাছ থেকে একটা প্যাঁচা জানান দিল। ‘হাম হ্যায়, হাম হ্যায়। ‘ বটেশ্বর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের বাঁশিটার দিকে তাকাল। বুহকালেল পুরনো মস্ত বাঁশি, পায়ে রুপোর পাত বসানো, তাতে ফুলকারি নকশা। দিনতিনেক আগে সকালবেলায় ঝোলা কাঁধে একটা লোক এসে হাজির। পরনে লুঙ্গি, গায়ে ঢলঢলে জামা, মুখে দাড়িগোঁফের জঙ্গল, মাথায় ঝাঁকড়া চুল।
রোগাভোগা চেহারার লোকটা বলল, কোনও রাজবাড়ির কিছু জিনিস সে নিলামে কিনেছে, আর সেইগুলোই বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করছে। পুরনো আমলের রুপোর টাকা, জরিবসানো চামড়ার খাপে ছোট্ট ছুরি, অচল পকেটঘুড়ি, পেতলের দোয়দানি, পাশা লেখার ছক, হাতির দাঁতের পুতুল, এরকম বিস্তর জিনিস ছিল তার সঙ্গে আর ছিল এই বাঁশিটা। বটেশ্বর জীবনে কখনও বাঁশি বাজায়নি, তবে বাজানোর শখটা ছিল। লোকটা বলল, যেমন তেমন বাঁশি নয় বাবু, রাজবাড়ির পুরনো কর্মচারীরা বলেছে, এ হল মোহন রায়ের বাঁশি।
মোহন রায়টা কে?
তা কি আমিই জানি! তবে কেষ্টবিষ্ট কেউ হবেন। বাঁশিতে নাকি ভর লোকটা দুশো টাকা দাম চেয়েছিল। বিস্তর ঝোলাকুলি করে একশো টাকায় যখন রফা হয়েছে তখন বটেশ্বরের বউ খবর পেয়ে অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে এসে রণরঙ্গিনী মূর্তি ধারণ করে বলল, টাকা কি খোলামকুচি? একটা বাঁশির দাম একশো টাকা! বলি জীবনে কখনও বাঁশিতে ফুঁ দাওনি, তোমার হঠাৎ কেষ্টঠাকুর হওয়ার সাধ হল কেন? ও বাঁশি যদি কেনো তা হলে আমি হয় বাঁশি উনুনে গুজে দেব, না হয় তো বাপের বাড়ি চলে যাব। Mohon Rayer Bashi pdf
ফলে বাঁশিটা তখন কেনা হল না বটে, কিন্তু ঘণ্টাখানেক বাদে বটেশ্বর যখন বাজারে গেল তখন দেখতে পেল বুড়ো শিবতলায় লোকটা হা-ক্লান্ত হয়ে বসে আছে। অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে সে বাঁশিটা কিনে ফেলল। ফেরার সময় খিড়কির দরজা দিয়ে ঢুকে গোয়ালঘরের পাটাতনে বাঁশ-বাখারির ভিতরে গুঁজে রেখে দিয়ে এল। Mohon Rayer Bashi pdf
আশ্চর্যের বিষয়, সেদিন রাতে তার ভাল ঘুম হল না। তার কেবলই মনে হচ্ছিল বাঁশিটা যেন তাকে ডাকছে। নিশির ডাকের মতো, চুম্বকের মতো। কেবলই ভয় হতে লাগল, বাঁশিটা চুরি যাবে না তো!
দ্বিতীয় রাতেও ঠিক তাই হল। নিশুতি রাতে বার বার উঠে বাঁশির নীরব আহ্বান শুনতে পেল সে। কিন্তু বউয়ের ভয়ে বেরোতে পারল না। Mohon Rayer Bashi pdf
আজ তার বউ বিকেলে পাড়া-বেড়াতে গেছে। সেই ফাঁকে বাঁশিটি বের করে নিয়ে দিঘির ধারে এসে বসেছে বটেশ্বর। খুব নিরাপদ জায়গা। কালীদহ দিঘি ভূতের আখড়া বলে সন্ধের পর কেউ এধারে আসে না। উত্তর ধারে বাঁশবনের আড়াল আছে। Mohon Rayer Bashi pdf
বটেশ্বর বাঁশি বাজাতে জানে না বটে, কিন্তু বাঁশিটাকে সে বড় ভালবেসে ফেলেছে। কী মোলায়েম এর গা, কী সুন্দর কারুকাজ। হেসে খেলে একশো দেড়শো বছর বয়স হবে। এমন বাঁশির আওয়াজও মিঠে হওয়ার কথা। কিন্তু হায়, বটেশ্বর বাঁশিতে ফুঁ দিতেও জানে না।
নিজের অপদার্থতার কথা ভেবে তার চোখে জল আসছিল। জীবনে সে কিছুই তেমন পেরে ওঠেনি। ছেলেবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল হাঁদু মল্লিকের মতো বড়লোক হবে। হতে পারল কি? হরিপদ কানুনগোর মতো ফুটফুটে চেহারাও তো ভগবান তাকে দেননি। ব্রজকিশোর দাসের পেল্লায় স্বাস্থ্যের ওপর কি কম লোভ ছিল তার? কিছুদিন ব্যায়াম ট্যায়াম করে শেষে হাল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। তারক রায়ের মতো সুরেলা গলা কি তার হতে পারত না? আর কিছু না হোক গোটা মহকুমা যাকে এক ডাকে চেনে সেই শাজাহান, সিরাজদ্দৌলা বা টিপু সুলতানের ভূমিকায় দুনিয়া কাঁপানো অভিনেতা রাজেন হালদারের মতো হতেই বা দোষ কী ছিল? কিংবা লেখাপড়ায় সোনার মেডেল পেয়ে গরিবের ছেলে পাঁচুগোপাল যে ধাঁ করে বিলেত চলে গেল।
সেরকমটা কি একেবারেই হতে পারত না তার? পাঁচুগোপাল যে স্কুলে পড়েছে সে-ই নরেন্দ্রনারায়ণ স্কুলে তো সেও পড়ত। জামা নেই, জুতো নেই, খাবার জুটত না, তবু পাঁচু সোনার মেডেল পেল। আর বটেশ্বর? এক ক্লাস থেকে আর এক ক্লাসে উঠতে যেন দম বেরিয়ে যেত তার। মনে হত পরের ক্লাসটা কত উঁচুতে রে বাপ! পেটে বিদ্যে নেই, গলায় গান নেই, শরীরে স্বাস্থ্য নেই, মুখে রূপ নেই, বেঁচে থাকাটার ওপরেই ভারী ঘেন্না হয় তার।
Mohon Rayer Bashi pdf download link
Download / Read Online
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.