অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এর পশ্চিমবঙ্গের উপন্যাস Nadir Sange Dekha pdf নদীর সঙ্গে দেখা pdf ডাউনলোড করুন ও নদীর সঙ্গে দেখা pdf পড়ুন।
Nadir Sange Dekha pdf নদীর সঙ্গে দেখা pdf নমুনাঃ
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল কাঞ্চনের। মা খুক খুক করে কাশছে। কাশলেই তার আতঙ্ক। কখন না আবার মা-র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাড়াতাড়ি জামাটা গলিয়ে বারান্দায় বের হয়ে এল।
মাসির চোপা শুরু হয়ে গেছে। সকাল বেলায় চোপা কার ভাল লাগে! মেজাজ খাট্টা। ঠিক ওষুধ খেতে ভুলে গেছে মা। অথবা রাত জেগে ডিউটি সেরে ফিরেই শুয়ে পড়েছে। বুক ভারী ভারী লাগলে পিল খেতে হয় । টানটা আর উঠতে পারে না। মাসি চা-এর জল চাপিয়ে বারান্দায় আগেই বের হয়েছিল বলে রক্ষা।
এত করে বলি, কথা কে শোনে! আমি কে? এত করে বললাম, ওষুধ খেয়েছ, বললে খেয়েছে। খায়নি, বুঝলি খোকা। তোর মা আমার সঙ্গে আজকাল এত মিছে কথা বলে! খাওনি—বেশ করেছ, এখন কষ্টটা কে পাবে। আমি না খোকা। নাও ওঠো।
হাঁদা ভোঁদা সমগ্র pdf – নারায়ণ দেবনাথ Hada Vhoder Somogro pdf – Narayan Debnath
মাসি, মাকে গরম জল আর পিল হাতে দিয়ে বলল, দ্যাখ তো খোকা উনুনের জল গরম হল কি না। চা-টা করে ফ্যাল।
আমাকেও চা দাও । কিছু হয়নি। চা খেলেই কাশি কমে যাবে। কিছু হয়নি তো কাশছিলে কেন?
কাশি উঠলে কী করব।
খোকা। আমি দেখছি ।
খোকাকে পাঠাচ্ছ, ওর দু-দিন বাদে পরীক্ষা। তুই যা কাঠ কয়লার ধোঁয়া সহ্য হয় না মার। মাসির হাতে মেলা কাজ। বাবা মারা যাবার পর, মা একদম আর কাজকম্ম করতে পারে না। মার কষ্ট হয়, এমনকি সে দেখেছে, ফুঁপিয়ে কাঁদলেও কাশি উঠে যায়। বেশি কথা বললে কাশি উঠে যায়। বেশি হাসলেও মা তার হাসতে পারে না। কাঁদতেও পারে না।
কোনওরকমে হাসপাতালের ডিউটি সেরে এসেই শুয়ে থাকে। কিংবা বারান্দায় টিনের চেয়ারে বসে থাকে। মাসি মাকে কাজও করতে দেয় না। দরকারে মাসির ফুট ফরমাস তাকেই করতে হয় ।
সে বলল, চা করতে কতক্ষণ লাগবে। করে দিচ্ছি। আমি তো পারি মা।
মার কাতর গলা—পারিস তো সবই। পারলেই করতে হবে। আমি কি মরে গেছি। মাসি বুঝল, ঝাঁজ। ছেলেকে কুটো গাছটি নাড়তে দেবে না। নিজেই হয়তো উনুনের ধারে চলে যাবে।
থাক খোকা। যাচ্ছি। ওষুধটা খেয়ে নাও দিদি। সামনে না থাকলে ওষুধও খাও না। খোকা তুই এখানে এসে দাঁড়া।
কাঞ্চন বুঝল, তাকে পাহারায় রেখে যেতে চায় মাসি। মা যদি আবার ওষুধটা না খেয়ে বলে খেয়েছি। কিছুতেই সময় মতো ওষুধ খাবে না। ওষুধ খেতে ভুলে যাবে। মা কি ইচ্ছে করেই ওষুধ খেতে ভুলে যায়। না, ওষুধের খারাপ প্রতিক্রিয়া আছে ভেবে খেতে চায় না। তক্ষণ না খেয়ে পারা যায়। এমনও আশ্বাস খুঁজে পেতে পারে নিজের মধ্যে, দেখি না, না খেয়ে। ওষুধ না খেয়ে যতক্ষণ ভাল থাকা যায়।
নাও খাও।
খাচ্ছি তো।
যা তার দিকে তাকাল। ছেলে তার বেশ লম্বা, তবে গায়ে মাংস নেই। মা তাকে দেখে এমনও ভাবতে পারে। এই এক আফসোস মার। পোড়াকপাল আমার, হয়তো বলল বলে। পুত্রটি তার মতোই রোগা, দুর্বল। হাতে পায়ে এত ঢ্যাংঙা ঠিক যেন তালপাতার সেপাই। সে নিজেও তার শরীর নিয়ে বড় লজ্জায় থাকে। নিজের ঘর ছাড়া সে কখনও খালি গায়ে বের হয় না। বারান্দায় বের হবার সময়ও সে জামা গলিয়ে নিয়েছে। পৃথিবীর সব চেয়ে ক্ষীণকায় মানুষ সে, জামা গায়ে না থাকলে সবাই টের পেয়ে যেতে পারে।
মা পিল খেয়ে জল খেল।
পিল খেয়ে দশ বিশ মিনিট শুয়ে থাকতে হয়। সামান্য পালস বিট বেড়ে যায়। বুক ধড়ফড় করে। শুয়ে থাকলে শরীর সয়ে নেয় ।
নাও ওঠো। ধরব!
পূজনকে বল, ঘরে যেন চা দেয়। উঠছি।
মাসিমা ঘরে চা দিতে বলল ।
কিছুটা নিশ্চিন্তি।
ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। মা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না, সারাজীবন এমন একটা অসুখ তার সঙ্গী হবে। আগে সিজন চেঞ্জের সময় দু একবার অ্যাটাকটা হত। ইদানীং আর সিজন চেঞ্জ নেই— —সময় অসময় নেই অ্যাটাক হচ্ছে। মাও লড়ছে। না, আমার হচ্ছে না। হাঁপায়, কাজ করে। কষ্ট পায় তবু ডিউটি কামাই হয় না। অসুখটাকে মা যে কখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে ফেলেছে, আর তাকেই শায়েস্তা করার জন্য মাঝে মাঝে ওষুধ না খেয়ে বলছে, খেয়েছি। ওষুধ না খেলে শরীরের উপর কতটা জুলুম সহ্য হয় যেন দেখার ইচ্ছে। জুলুম সহ্য করতে গিয়ে মাঝে মাঝেই বিছানা নেয়। শেষে অসহ্য ঠেকলে ওষুধ ফের নিয়মিত খেতে শুরু করে।
নদীর সঙ্গে দেখা pdf Download link
Download / Read Online
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.