কৌশিক মজুমদারের সূর্যতামাসির পরের খন্ড Nibarsaptak pdf নীবারসপ্তক pdf ডাউনলোড করুন এবং Nibarsaptak pdf নীবারসপ্তক pdf পড়ুন।
Nibarsaptak pdf নীবারসপ্তক pdf নমুনাঃ
উপসংহার
প্রিয়নাথ মুখােপাধ্যায়ের জার্নাল
২৮ জুন, ১৯১১, বৈকাল ৫ ঘটিকা।
অতঃপর বাক্সের ভূতকে আয়ত্তে আনা সম্ভব হইল। এই জগতে এমনবিধ কাণ্ড যে ঘটিতে পারে, তাহা প্রত্যক্ষ করিলেও তাে মনে এমন স্থান দেওয়া যায় না! পাপের কী কুহকময়ী শক্তি! ক্ষমতার কী অপরিহার্য ভয়ানক সংক্রমণ গুণ! লােভের কী ভয়াবহ পরিণাম! কখনও দেখিলাম না এই কুহকে পতিত হইলে কেহ তাহা হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিতে পারে। নরকের এই পঙ্কিলময় হ্রদ হইতে পুনরুত্থান কি এতই কঠিন!
এক সুতীব্র শীতল অমানিশায় পালকিবাহিত হইয়া চিনাপাড়ার উদ্দেশে আমার যে যাত্রা শুরু হইয়াছিল, ভাবি নাই তাহার শেষ পরিণতি এই প্রকার ভয়ংকর দাঁড়াইবে। যে সকল মহা মহা পাপকে মহান আত্মাদের কলুষিত করিতে দেখিলাম, তাহার উপযুক্ত শাস্তি হইল কি? বহু নিরপরাধের প্রাণ গেল, বহু পরিবার সর্বস্ব হারাইল, ভূতের দাপটে ইংরাজ সরকারের অটল সিংহাসন অবধি ভাঙিয়া পড়ার উপক্রম হইল। এই সকলই আমি আমার এই বিবৃতিতে বিশদে লিপিবদ্ধ করিয়াছি। পুনরায় বলিবার প্রয়ােজন দেখি না। প্রবাদে শুনিয়াছি নৃপতিদের যুদ্ধ হইলে নাকি উলুখাগড়াগণের প্রাণনাশ ঘটে। এই সামান্য সময়কালে তেমন কত উলুখাগড়ার রক্তাক্ত দেহ পড়িয়া থাকিতে দেখিলাম, তা ভাবিলে ভয়ানক এক নরক-চিত্র হৃদয়ে অঙ্কিত হয়। দুঃস্বপ্নের ন্যায় কলিকাতা মহানগরী তাহাকে ভুলিতে চায়। কিন্তু পারিবে কি?
ভবিষ্যতের পাঠক, যিনি আরম্ভের সাবধানবাণী উপেক্ষা করিয়াও এই। জার্নাল সম্পূর্ণরূপে পাঠ করিলেন, তাঁহার প্রতি এক অসামান্য দায়িত্ব বর্ষিত হইল। তিনি এক্ষণে জানিয়াছেন, সকল অপরাধের পশ্চাতে যে দীর্ঘ ছায়া দণ্ডায়মান, তিনি কোনও সাধারণ মানব নহেন। তাঁহাকে সন্দেহ করা যায়, কিন্তু তাঁহার কেশাগ্র স্পর্শ করা কাহারও সাধ্যের বাহিরে। পরবর্তীতে এই ঘটনার উল্লেখ মাত্রে টমসন সাহেব হইতে সাইগারসনের মুখমণ্ডলে এমন আতঙ্কের বহিঃপ্রকাশ দেখিয়াছি, যাহা ভাষায় ব্যক্ত করা অসম্ভব। আমার বিশ্বাস এই রােমহর্ষণকারী গণহত্যার নায়ক চিরকাল পর্দার আড়ালেই থাকিয়া যাইবেন। ক্ষমতা দুর্নীতির জনক।
যে ঐশ্বরিক ক্ষমতা তাঁহার তাহার বলে তিনি গােটা দেশকে পঙ্কিলতার হ্রদে নিমজ্জিত করিয়া: বিশ্বনিয়ন্তা পিতা গাে! ইহা হইতে পুনরুত্থানের কি কোনও উপায় না সাইগারসন সাহেব সম্প্রতি আমায় এক গােপন পত্র লিখিয়াছেন গােয়েন্দাগিরি হইতে অবসর লইয়া লন্ডন হইতে অদূরে ডাউনুস গ্রামে, খামারে মধুমক্ষিকা পালনে সময় অতিবাহিত করেন। তারিণীত গােয়েন্দাগিরি ছাড়িয়া সস্ত্রীক চুঁচুড়ায় আপন গৃহে ফিরিয়া গিয়াছে। যাই পর্বে দেখা করিতে আসিয়াছিল। তাহার চক্ষে জল। প্রিয়তম ব্যক্তির নাম হত্যার অভিঘাত সে এখনও কাটাইতে পারে নাই মনে হয়। অন্যদিকে গws আজ গােটা বঙ্গ তথা ভারতে এক পরিচিত নাম। প্রফেসর প্রিয়নাথ বােসে সার্কাসে তাঁহার ভৌতিক বৃক্ষ, কংসের কারাগার, ভূতুড়ে সিন্দুকের খেলা যাহারাই দেখিয়াছেন, তাঁহার মুনশিয়ানার তারিফ করিয়াছেন।
যে ভয়াবহ ঘটনাবলি ও ষড়যন্ত্রের জাল আমাদিগকে একবিন্দুতে আনিয়াছিল আজ সেই নিকষকৃষ্ণ মেঘজাল সাময়িক অন্তর্হিত হইবার কারণে সকলেই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছি। এ হৃদয়ের এক অনাবিল তাড়নায় এই সকল ঘটনা লিপিবদ্ধ করিলাম। জানি, উচিতকার্য হইল কি না। তবে যিনি ইহা পাঠ করিবেন, তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দিতে চাই, ভূত আমার আয়ত্তে বিশ্রামে রহিয়াছে, কিন্তু ধ্বংস হয় নাই। আমি ইহাকে ধ্বংসের সপক্ষে ছিলাম, কিন্তু সাইগারসনের পীড়াপীড়িতে ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সর্ববৃহৎ প্রমাণকে নিজ হাতে নষ্ট করিতে পারি নাই। ভূতের মুণ্ড তারিণীর নিকট, ধড় আমার দখলে রহিবে। এমন ব্যবস্থা করিয়া সাইগারসন দেশে ফিরিয়াছিলেন। ধড় মুণ্ড একত্র হইলে পুনরায় ভূত জাগিবে। কোনও দুষ্কৃতকারীর হস্তে তাহা পতিত হইলে তাে মহা সর্বনাশ।
ভবিষ্যতে যদি সেই ভূত জাগ্রত হয়, তবে যে ভয়ানক কাণ্ড ঘটিবে তা ভাবিতেই শােনিত শুখাইয়া আসে। আর আগ বাড়িব না। আমার সময় ফুরাইয়া আসিতেছে। ইচ্ছা বাকি জীবন সাহিত্যকর্মে ও দেবী সরস্বতীর সেবায় অতিবাহিত করিব। হে শান্তিময় পিতঃ! তােমার নিকট এখন এই প্রার্থনা যে, ভবিষ্যতে এইপ্রকার পাপের কুহকে কখনােই যেন আমাকে ভুলাইতে না পারে। আমার আন্তরিক ইচ্ছা জীবনের শেষ সময়ে যেন একাকী বসিয়া জগৎপিতাকে প্রাণভরে স্মরণ করিতে পারি। আমার জার্নাল এই স্থলেই সমাপ্ত হইল।
কৌশিক মজুমদারের Nibarsaptak pdf নীবারসপ্তক pdf এখান থেকে পড়ুন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.