
প্রফুল্ল রায় এর Sera Panchasti Galpa pdf সেরা ৫০টি গল্প pdf ডাউনলোড করুন ও Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।

Sera Panchasti Galpa pdf সেরা ৫০টি গল্প pdf সূচি
শিকড় ১৫
অনুপ্রবেশ ২৪
জন্মদাতা ৪১
বাজি ৫১
শেষযাত্রা ৬২
শেষ দৃশ্য ৮০
মানুষের মহিমা ৮৯
চেনা মানুষের অচেনা কাহিনি ১৬
সুদীপ এবং একটি খারাপ মেয়ে
অসাধারণ
১১২
দেশ নেই ১১৭
প্রদর্শনী ১৩৬
প্রার্থী ১৪৩
খাঁচা ১৪১
পাড়ি ১৬২
মলির জন্য
পাওয়া ১৮৭
রক্তকমল ১৯৩
তারা তিনজন 200
ওরা দু’জন ২১৬
কার্তিকের ঝড়, বন্যা এবং চুনাও ২২०
এক রমণীর গল্প 226
জুহু বিচের সেই মেয়েটা ২৩৬
নাগমতী ২৪২
চোর ২৬৫
শবরী ২৭৪ সিপি ২৮৭
জনক ২১১
ধুন্নিলালের দুই সঙ্গী ৩০৮ দুর্বোধ্য ৩২৪
ফিরে এলাম ৩২৮
নরকের পোকা ৩৩১
একটি সাধারণ মানুষের কাহিনি ৩৪৬ সীমান্ত ৩৬১
বাদশা বেগম ৩৬৮
জন্মদাত্রী ৩৮৬
বিরুদ্ধ পক্ষ ৪০১
বিদেশী ৪০৭
ডোনার জন্য ৪১১
দু’পিঠ ৪২৮
বর্ষায় একদিন ৪30
মল্লিকা ৪৪১
শমিতার উপাখ্যান ৪৫৪
ট্রেন ৪৭৭
স্বাদ ৪৮৬
কোনো একদিন ৪৯৯
প্রেম ৫১৪
শহিদের স্ত্রী ৫১৭
ফেরিওয়ালা ৫৩০
বেলাশেষে ৫80
Sera Panchasti Galpa pdf গল্প প্রসঙ্গে
এর আগেও নানা পত্রপত্রিকায় লিখেছি বা সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানিয়েছি, আমাদের আদি নিবাস অখণ্ড বাংলার ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। এখন সেটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের একটি অংশ।
দেশভাগের পর পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি থেকে শিকড় ছিঁড়ে লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে সীমান্তের এপারে চলে আসি। নিঃস্ব, সর্বস্ব-খোয়ানো এই মানবগোষ্ঠীর আমি একজন। আমাদের গায়ে একটি মোলায়েম তকমা সেঁটে দেওয়া হয়— ‘শরণার্থী’। শুরু হয় টিকে থাকার জন্য দাঁতে দাঁত চাপা যুদ্ধ। দিনের পর দিন। ‘জীবন সংগ্রাম’ শব্দটি তখন আমাদের হাড়ে-মজ্জায় ঢুকে গেছে। সেটা যে কী নিদারুণ লড়াই, প্রতি মুহূর্তে টের পাচ্ছি।
নিয়তি বলে কি কিছু আছে? হয়তো আছে, হয়তো নেই। অনেকেরই ধারণা মানুষের জীবন হল নিয়তির হাতের পুতুল নাচ। অদৃশ্য, প্রবল কোনও শক্তি সুতোর টানে মানুষকে হাঁটাবে, ছোটাবে, হাসাবে, কাঁদাবে, কখনও বা হাতের টোকায় মহাশূন্যে ছুড়ে দিয়ে লহমায় মাটিতে আছড়ে ফেলে চুরমার করে ফেলবে। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
নিয়তি মানি বা না-মানি, এমন কিছু ঘটেছিল আমার জীবনে যা আমার সুদূর কল্পনাতেও ছিল না। দেশভাগের পর সেই দুঃস্বপ্নের মতো দিনগুলোতে ‘কাল কী খাব’, এই আতঙ্কে শ্বাস আটকে আসত। মাসের শেষে কিছু টাকা পাব, এমন একটা কাজের খোঁজে আকাশ পাতাল চষে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ এক প্রবীণ খ্যাতিমান সাহিত্যিকের সঙ্গে আলাপ হয়ে গেল। বয়সের অনেক তফাত, তবু খানিকটা ঘনিষ্ঠতাও হল। আমার এখনকার বয়সে স্মৃতি ধূসর হয়ে আসছে। তবু মনে আছে, সেই লেখকের কোনও একটি লেখার কটু মন্তব্য করায় তিনি ভীষণ উত্তেজিত হন। বলেন, ‘আমার লেখা তো খারাপ বললে, একটা ভালো গল্প টল্প লিখে দেখাও, বুঝি তোমার কেরামতি। ফর ফর করে কমেন্ট করে দিলেই হল!’
কেমন যেন জেদ চেপে গেল আমার মাথায়। তিন রাত জেগে তিনটি গল্প লিখে ফেললাম। তার একটি ছাপা হল তখনকার সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায়। অন্য দু’টি ‘পরিচয়’ এবং ‘নতুন সাহিত্য’-এ। সেটা উনিশ শো চুয়ান্ন সাল। ‘নতুন সাহিত্য’ ছিল পঞ্চাশের দশকের এক চমৎকার, রুচিশোভন মাসিকপত্র। সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্বন্ধে সচেতন। বহু উৎকৃষ্ট গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ তাতে ছাপা হয়েছে। অনেকদিন হল তার প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেছে। অকালমৃত এই পত্রিকাটির জন্য এখনও বেদনা বোধ করি।
জীবনের লম্বা দৌড় প্রায় শেষ করে এক মেরু থেকে অন্য মেরুতে পৌঁছে বর্ষীয়ান লেখকটির সঙ্গে অকিঞ্চিৎকর তর্কাতর্কির কথা ভাবলে এখন হাসি পায়, প্রথম যৌবনের সেই জেদকে ছেলেমানুষি মনে হয়। তবে স্বীকার করতেই হবে, সেই লেখকটি উসকে না দিলে কোনও দিন লেখালিখির কথা ভাবতাম না। পরবর্তী সময়ে উদার স্নেহে তিনি আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন। তিনি প্রয়াত হয়েছেন প্রায় তিরিশ বছর আগে। এই সুযোগে তাঁকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
একটি চাকরির জন্য ধাবমান একরোখা ঘোড়ার মতো ছুটছিলাম। গল্প তিনটি বেরুবার পর সেই দৌড় থেমে গেল। আমার লক্ষ্য এবং গন্তব্য পুরোপুরি পালটে যায়। নিয়তিই খুব সম্ভব আমার ঘাড়ে চেপে একের পর এক গল্প লিখিয়ে নিতে লাগল। লিখছি, সেই সব গল্প ছাপা হচ্ছে মাসিকে, সাপ্তাহিকে, দৈনিক পত্রিকার রবিবারের পাতায়। বহু পাঠক এবং তখনকার কীর্তিমান কোনও কোনও সাহিত্যিকেরও ভালো লাগছে। তাঁরা অকুণ্ঠভাবে তা জানিয়েও দিচ্ছেন। সে যে কী বিপুল উন্মদনা! ঘোরের মধ্যে সময় কেটে যাচ্ছে।
শুরুর দিকে বেশ কয়েক বছর লেখক হিসেবে আমি ছিলাম হোল-টাইমার। পরে নানা কারণে আমাকে চাকরি নিতে হয় কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ।
স্বভাবের দিক থেকে আমি চরম বাউণ্ডুলে। বিশেষ করে যৌবনের শুরু থেকে শেষ অবধি। তখন আমার পায়ের তলায় সরষে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে এপারে চলে আসার পর বিশাল ভারতবর্ষকে নিজের চোখে দেখার এবং তার হৃৎস্পন্দন অনুভব করার অদম্য এক ইচ্ছা আমাকে পেয়ে বসেছিল। মাথায় পোকা নড়ে উঠল তো ঝুলিতে জামাকাপড় পুরে ছুটলাম হাওড়া কি শিয়ালদায়। স্টেশনে পৌঁছুবার পর কয়েক পলক ভেবে নিলাম। যে জায়গার নামটি পছন্দ হল সেখানকার টিকিট কেটে ট্রেনে চড়ে বসলাম। গোটা বছরে তখন তিন চার মাসের বেশি কলকাতায় থাকা হতো না।
আমাদের এই বিশাল দেশ, তার প্রাচীন স্থাপত্য, তার মন্দির মসজিদ গীর্জা গুরুদ্বার, সুরম্য ঐতিহাসিক মিনার, কত অজস্র স্মৃতিস্তম্ভ, রাজা বাদশা সন্তদের সমাধিস্থল এবং কালজয়ী পুরাকীর্তি, তার মহিমান্বিত বনস্পতি, লতা-ফুল-গুল্ম, তার বিস্তীর্ণ পাহাড়মালা, নদী-সমুদ্র- জলপ্রপাত এবং সবার ওপরে তার বিচিত্র সব মানুষ, অগণিত জনজাতি, লক্ষ লক্ষ মানুষের বিস্ময়কর জীবনযাপন প্রণালী, তাদের দারিদ্র, মহত্ত্ব, সারল্য, নানাবিধ সংস্কার, অস্তিত্বের সংগ্রাম, ধর্মবোধ—সব একাকার হয়ে অদ্ভুত নেশার ঘোরে আমাকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়াত। ভারতবর্ষের আনাচ কানাচ ঘুরে এই দেশকে দেখার সুযোগ যে কারণে ঘটেছিল আমার সেই ভবঘুরে স্বভাবের কাছে আমৃত্যু কৃতজ্ঞ থাকব।
রহস্য সন্ধানী দময়ন্তী সমগ্র ১ pdf – মনোজ সেন Rahashya Sandhani Damayanti Samagra 1 pdf – Manoj Sen
সেই সময় কত জায়গায় যে কাটিয়েছি তার লেখাজোখা নেই। কখনও আন্দামানে, কখনও নাগা হিলস মণিপুর আসাম এবং উত্তরপূর্ব ভারতের নানা অঞ্চলে, কখনও বিহারের রুক্ষ প্রান্তরে, ওড়িষায়, কখনও কোঙ্কন উপকূলে, গোয়ায়, মহারাষ্ট্রে, গুজরাটে, কখনও বিন্ধ্য পর্বতের ওধারে দক্ষিণ ভারতের প্রদেশগুলিতে। যে ক’জন নিখিল ভারতীয় বাঙালি লেখকের নাম আঙুলে গুনে বলা যায়, আমি তাদেরই একজন।
নিসর্গ, পুরাকীর্তি, শত শত বছরের প্রাচীন সৌধ আমাকে মুগ্ধ করেছে ঠিকই। এ-সবের চেয়ে মানুষের অফুরান মহিমায় আপ্লুত হয়েছি অনেক বেশি। অসামান্য বিচিত্র অগণিত মানুষ। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
লেখক জীবনের প্রথম দিকে বছরে যে অল্প কদিন কলকাতায় থাকা হতো, পত্রপত্রিকাতে সম্পাদকদের তাগাদায় পাঁচ সাতটা গল্প লিখে তাদের হাতে তুলে দিয়ে ফের এই শহর থেকে উধাও হতাম। যে-সব পত্রিকায় এই গল্পগুলো ছাপা হতো, কলকাতায় না থাকার কারণে তার কপি বেশির ভাগ সময়েই আমার হাতে আসেনি। ভুলো, চূড়ান্ত অগোছালো স্বভাবের জন্য কপিগুলো জোগাড় করে যে রাখব, প্রায়ই তা হয়ে উঠত না। তাছাড়া নিজের লেখা সম্বন্ধে চিরকালই আমার প্রচণ্ড উদাসীনতা। তার নীট ফল এই, আমার বহু গল্প হারিয়ে গেছে।
নাম করা পত্রপত্রিকা ছাড়াও বহু অখ্যাত কাগজে অনেক গল্প লিখেছি। দু-চারটে সংখ্যা কোনও রকমে ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকার পর রোগাটে চেহারার স্বল্পায়ু এই সব পত্রিকার অকালমৃত্যু ঘটেছে স্বাভাবিক নিয়মে। এই পত্রিকাগুলোর কী নাম, কোথায় ছিল তাদের ঠিকানা, কারাই বা সেগুলোর সম্পাদক, এতকাল পব আর মনে করতে পারি না। এগুলির সঙ্গে আমার বেশ কিছু গল্প চিরকালের মতো লুপ্ত হয়ে গেছে। গল্পগুলো উইদের ভোজে লেগেছে না ঠোঙায় পরিণত হয়েছে, বলতে পারব না।
পরে প্রকাশকদের আগ্রহে গল্পগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে গিয়ে রীতিমতো মাথায় হাত। অগত্যা বিখ্যাত যে-সব পত্রপত্রিকায় লিখেছি এবং এখনও যেগুলো মাথা উঁচিয়ে সগৌরবে টিকে আছে তাদের দপ্তরে দপ্তরে হানা দিয়ে বেশ কিছু গল্প উদ্ধার করা গেল। ন্যাশনাল লাইব্রেরি এবং কলকাতায় বেসরকারি প্রাচীন কিছু গ্রন্থাগার থেকে পাওয়া গেল আরও ক’টি গল্প। কয়েকজন অনুজপ্রতিম লেখক এবং আমার লেখার অনুরাগী দু-চারজন পাঠক আরও কিছু গল্প জোগাড় করে দিলেন। এইভাবে একশোরও বেশি গল্প পাওয়া গেল। সেই সব গল্প চারটি পর্বে ‘প্রফুল্ল রায়ের গল্প সমগ্র’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। আরও কয়েকটি পর্ব বের করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আমার গল্পগুলি থেকে একটি ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ এবং একটি ‘স্বনির্বাচিত গল্প’-এর সংকলন ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। তার পরও আমি বেশ কিছু গল্প লিখেছি। “স্বনির্বাচিত গল্প’ মোট আটাশটি গল্পের সংকলন। সেটি ফুরিয়ে গেছে। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
এবছর ‘দে’জ পাবিলিশিং’- এর কর্ণধার শ্রীসুধাংশুশেখর দে’র পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার ‘সেরা ৫০টি গল্প’ প্রকাশিত হল। এই সংগ্রহে ‘স্বনিৰ্বাচিত গল্প’
থেকে কিছু গল্প রেখে বাকি অনেক গল্প যোগ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে অনেক নতুন নতুন গল্প যেগুলো গ্রন্থাকারে কখনও প্রকাশ করা হয়নি। না। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
‘সেরা ৫০টি গল্প’ প্রকাশের পর ‘স্বনির্বাচিত গল্প’ গ্রন্থটি আর ছাপা হবে’ সেরা ৫০টি গল্প’ সম্পর্কে দু-চার কথা খুব সম্ভব অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তার আগে ছোট্ট একটু ভূমিকা করে নেওয়া যাক। সেটি গল্পগুলির লেখক প্রসঙ্গে । নিজের সম্বন্ধে সাতকাহন ফাঁদতে আমায় খুবই সংকোচ । তবু সামান্য কিছু লিখতে হবে এই কারণে যে আমার জীবনের নানা বিচিত্র প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও দেশ এবং মানুষ সম্পর্কে ধ্যানধারণা এই সব গল্পে চারিয়ে আছে। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
আগেই জানিয়েছি আমি নিখিল ভারতীয় বাঙালি লেখক। অবিভক্ত বাংলার ঢাকা জেলায় পূর্বপুরুষদের গ্রাম ছেড়ে সর্বস্ব খুইয়ে একদিন খণ্ডিত বাংলার এই অংশে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছিলাম। তারপর শুরু হয়েছে জীবনের লম্বা দৌড়। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
চোখের পলক পড়তে না পড়তেই চুয়াত্তর বছর পেরিয়ে পঁচাত্তরে পা রাখলাম। এই পঁচাত্তর বছরে এমন সব ঘটনা ঘটেছে যা পৃথিবী নামে এই গ্রহটিকে আমুল তোলপাড় করে দিয়েছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষ এবং আমাদের এই বাংলাকে। এমন অজস্র বিধ্বংসী ঘটনার উল্লেখ হাজার বছরের ইতিহাসে বা পুরাকাহিনিতেও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
আমার ছেলেবেলায় এদেশে স্বাধীনতার জন্য মরণপণ সংগ্রাম দেখেছি। দেখেছি শত শত শহিদের আত্মত্যাগ। সমস্ত দেশের কারাগারগুলিতে এবং আন্দামানের সেলুলার জেলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে শেষ হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের শত সহস্র সেনানী। দেখেছি বেয়াল্লিশের আগস্ট আন্দোলন, দ্বিতীয় মুহাযুদ্ধ। মহাসমর এদেশে হয়নি, দু-চারটে ছুটকো ছাটকা বোমা পড়েছে—এই পর্যন্ত। কিন্তু তার বিষ ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের সকল স্তরে। মহাযুদ্ধের হাত ধরে এসেছে কালোবাজারি, মজুতদারি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কৃত্রিম অভাব তৈরি করার চেষ্টা। চোখের সামনে দেখেছি মুনাফালোভীদের চক্রান্তে সৃষ্ট পঞ্চাশের মহা মন্বন্তর।
লক্ষ লক্ষ অন্নহীন ক্ষুধার্ত মানুষ মাছির মতো অনাহারে অস্থিচর্মসার হয়ে মরে গেছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসে গেল দাঙ্গা, গণহত্যা, ধর্ষণ, আগুন। কলকাতা নোয়াখালি বিহার লাহোর অমৃতসর জুড়ে শুধু হত্যা আর হত্যা। পৃথিবী বোধহয় এমন বিভীষিকা আগে আর দেখেনি। আরও কয়েক লক্ষ অসহায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু হল। লুট হয়ে গেল হাজার হাজার তরুণী। তাদের বেশির ভাগকেই ধর্ষণ করে খুন করা হল; বাকিদের করা হল ধর্মান্তরিত। অবশেষে দেশভাগের চড়া দামে এল স্বাধীনতা। বাংলা পাঞ্জাব এবং সিন্ধুপ্রদেশের প্রায় দেড় দু’ কোটি মানুষ বহু পুরুষের ঘর-ভদ্রাসন ফেলে শুধু প্রাণটুকু নিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে এপারে এল, এপার থেকে গেল ওপারে।
স্বাধীনতার পর একষট্টি বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু দেশভাগের জের কাটেনি। ওপার থেকে শরণার্থীদের আসার বিরাম নেই। সেই সঙ্গে দেশের নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িক সংঘাত লেগেই আছে। তার পাশাপাশি চলছে সন্ত্রাসবাদী জঙ্গিদের আতর্কিত হানা। চলছে নাশকতা। দেশের যে-কোনও প্রান্তে যে-কোনও মুহূর্তে ঘটছে বিস্ফোরণ। ভারতকে ছিন্নভিন্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে। স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দুই প্রধান সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা আলাদা আইন। এ এক বিচিত্র ব্যবস্থা। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
পূর্ব বাংলার উদ্বাস্তুদের অনেককেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আন্দামানে, দণ্ডকারণ্যে এবং ভারতের নানা প্রদেশেও। অনেকে নিজেরাই অন্নের সন্ধানে দূর দূর অঞ্চলে চলে গেছে। তিনটে প্রজন্ম পার হতে চলল। এই ভিন্ন প্রদেশবাসী উদ্বাস্তুদের বংশধরদের কেউ আর বাঙালি থাকছে না। বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি থেকে উৎখাত হয়ে, ছিন্নমূল এই জনগোষ্ঠীর কেউ ওড়িয়াভাষী, কেউ হিন্দিভাষী। নামেই তারা বাঙালি। স্বাধীনতা এসেছে ঠিকই কিন্তু এখনও অনেক উদ্বাস্তু মাথা তুলে আত্মনির্ভর, মর্যাদাসম্পন্ন ভারতীয় নাগরিক হয়ে উঠতে পারেনি।
এদেশে শতকরা পঞ্চাশ ভাগেরও বেশি ভারতবাসী দারিদ্রসীমার নিচে। প্রতি একশো জনের মধ্যে হয়তো তিরিশ জনের অক্ষর পরিচয় হয়েছে। হাজার হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। বেশির ভাগ গ্রামেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। প্রাথমিক স্কুল নেই। শিক্ষা স্বাস্থ্য বিদ্যুৎ – সকল ক্ষেত্রেই শোচনীয় হাল। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
এদেশের অনেক জায়গাই মধ্যযুগের অন্ধকারে ডুবে আছে। এখনও সতীদাহ চলছে অবাধে চলছে বাল্যবিবাহ। কায়েম হয়ে আছে সহস্র বছরের পুঞ্জীভূত কুসংস্কার। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে হরিজনদের বস্তি, ধর্ষিত হচ্ছে গরিবের চেয়েও গরিব, অসহায় পরিবারের যুবতীরা।
একুশ শতকের প্রথম দশক পার হতে চলল। মধ্যযুগের বর্বরতার অবসান কবে ঘটবে, কে জানে।
জিনিসপত্রের দাম আগুন, কোটি কোটি মানুষ বেকার। হাজার হাজার কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন বেকারের। ভূমি সংস্কার হয়েছে যৎসামান্য।
নিরক্ষরতা, কুসংস্কার, বেকারত্ব, সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ, সশস্ত্র আন্দোলন, জঙ্গি হামলার আতঙ্ক, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ– সব মিলিয়ে ভারতবর্ষ বারুদের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সারা দেশ জুড়ে যে-কোনও মুহূর্তে মহা বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
আদর্শবাদ, মানবিক মূল্যবোধ ইত্যাদি ব্যাপারগুলোকে ঘাড় ধাক্কা দিতে দিতে দেশের সীমানা পার করে দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতি নামে একটা প্রবল পরাক্রান্ত অস্ত্র ক্রমশ চলে যাচ্ছে রোবোটের মতো যান্ত্রিক হৃদয়হীন মাসলম্যান বন্দুকবাজদের হাতে। বহু ক্ষেত্রেই গণতন্ত্রের জিম্মাদার হয়ে উঠছে মাফিয়ারা। কেউ সামনে থেকে, কেউ একটি শিখণ্ডী দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে পুতুলনাচের সুতো টানছে। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
দেশজোড়া নৈরাশ্য, নৈরাজ্য এবং গভীর তমসার মধ্যে মানুষকে আমি তার স্বমহিমায় আবিষ্কার করতে চেষ্টা করেছি। এত ক্ষয় এবং ধ্বংসের মধ্যে যেখানে মনুষ্যত্বের এতটুকু স্ফুলিঙ্গ চোখে পড়ছে আমার লেখায় তা ধরতে চেয়েছি। কেননা মানবিকতা এবং মূল্যবোধের বিকাশ ছাড়া কোনও দেশ বাঁচতে পারে না। এই দু’টি দিকে নজর দিলে ভারতবর্ষ অনিবার্য পতনের হাত থেকে বেঁচে যাবে। Sera Panchasti Galpa pdf পড়ুন।
এই সংকলনে গৃহীত পঞ্চাশটি গল্পকে আমার সময়, আমার পঁচাত্তর বছরের অভিজ্ঞতা এবং আমার উপলব্ধির কিছুটা প্রতিফলন বলা যেতে পারে। টালমাটাল রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পটভূমিতে বিভিন্ন স্তরের, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঠিক অবস্থানটি কোথায়, তাদের অস্তিত্বের নানা সংকট, মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে বাইরের অভিঘাতে তারা কীভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে বা বিপর্যয়ের মধ্য থেকে কীভাবে ঘটছে তাদের উত্থান–বেশির ভাগ গল্প সেদিকে চোখ রেখে নির্বাচন করা হয়েছে।
গল্পগুলি সম্বন্ধে বিশদভাবে আলোচনা করার অভিপ্রায় আমার নেই। পড়ার পর যদি পাঠক এগুলোর মধ্যে নিহিত আমার বক্তব্য বা অভীষ্ট ধরতে না পারেন, বুঝতে হবে আমার প্রয়াস ব্যর্থ। গল্পগুলি নিজেরাই তাদের সম্পর্কে নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।
সংকলনের বেশ কয়েকটি গল্পের প্রথম প্রকাশের সাল-তারিখ জোগাড় করতে না পারায় সঙ্গতি রাখার জন্য কোনও গল্পের পাশেই প্রথম প্রকাশকাল দেওয়া হল না।
উনিশ শো চুয়ান্নয় আমার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। তার পর চুয়ান্ন বছর ধরে লিখেই চলেছি। এই সংকলনের গল্পগুলি প্রকাশিত হয়েছিল ‘দেশ’, ‘আনন্দবাজর পত্রিকা’, ‘আজকাল’, ‘বিভাব’, ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’, ‘বর্তমান’, ‘যুগান্তর’, ‘প্রসাদ’, ‘উল্টোরথ’, ‘মাতৃশক্তি’, ‘আমার সময়’, ‘বসুমতী’, ‘অমৃত’, ‘শনিবারের চিঠি’, ‘মুখপত্র’, ‘নবকল্লোল’, ‘পরিচয়’, ‘গল্পপত্র’ ইত্যাদি পত্রিকার কোনও বিশেষ বা শারদীয় সংখ্যায়।
Sera Panchasti Galpa pdf pdf download link
Download / Read Online
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.