মহাশ্বেতা দেবীর Shalgirar Dake pdf শালগিরার ডাকে pdf ডাউনলোড করুন ও Shalgirar Dake pdf শালগিরার ডাকে pdf পড়ুন।
Shalgirar Dake pdf শালগিরার ডাকে pdf নমুনাঃ
১৭৫০ সালে দেশের অবস্থা কেমন ছিল তার কিছু জানত না ভাগলপুর থেকে রাজমহল অবধি জঙ্গল এলাকার মানুষরা। তারা সাঁওতাল, তারা পাহাড়িয়া, তারা মালপাহাড়িয়া। আন্দোলিত প্রান্তর, ঘন জঙ্গল, ছোট ছোট পাহাড়। বড় প্রাচীন এ অরণ্যভূমি। ভারতের ইতিহাসের বহু কথার নীরব সাক্ষী ভাগীরথীর পশ্চিমে রাজমহল থেকে জঙ্গল এলাকার বিস্তার ওদিকে হাজারীবাগ ও মুঙ্গের অবধি—উত্তরে ভাগলপুর থেকে দক্ষিণে বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পশ্চিমে মেদিনীপুর থেকে উড়িষ্যায় ময়ূরভঞ্জ অবধি।
তখনো সাঁতাল পরগনা, দামিন-ই কোহ্ নামগুলি অজানা। বর্গী ফৌজের বার বার হানাদারিতে বিপর্যস্ত বাংলা সুবা। কিন্তু কে তার খবর রাখে?
সাঁওতালরা রাখত না, পাহাড়িয়ারা রাখত না, মালপাহাড়িয়ারা রাখত না। জঙ্গল আছে, শিকার আছে। পাহাড়িয়া ও মাল- পাহাড়িয়াদের আছে জঙ্গল জ্বালিয়ে জুন চাষ। সাঁওতালদের আছে অঙ্গলহাসিলী জমিতে ধান, ভাল, সর্ষে। মহুয়া তেলে বাড়ি জ্বালো। রিঠার ৰিচিতে কাপড় কাচো। লবণের দরকারে চলে যাও দূর গ্রামের হাটে। লবণ কেনো, কেনো কাপাস তুলো। সুতো কাটো, তাঁতে বুনে নাও কাপড়। কে নবাব আলিবর্দি, কে রঘুজী ভোঁসলে, কোথায় ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির লালমুখো বেনেরা, কে তার খবর রাখে?
কেউ খবর রাখে নি। ১৭৫০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তখনো তীব্র গীত। সাঁওতাল গ্রামটিতে ঘরে ঘরে দিনেই জ্বলছিল আগুন।
পথে হলো দেরি pdf – প্রতিভা বসু Pathe Holo Deri pdf – Pratibha Basu
একটি ঘরের সামনে মেয়েরা অপেক্ষা করছিল মুমু দের ঘরে। মুর্মু, হাঁসদা, সরেন, হেমব্রম, কয়েক গোত্রের সাঁওতাল গ্রাম। বাড়ির বড় বউয়ের ছেলে হবে। সন্তান হবার জন্যে অপেক্ষা করার মধ্যে আছে আনন্দ। বিশেষ সুদ্ৰা মুর্মুর ঘরে। সুন্দ্রা বীর, শিকার উৎসবের সময়ে কেমন করে যেন তারই হাতে চলে যায় নেতৃত্ব। মুদ্রার ওপর সকলের অগাধ বিশ্বাস ।
সুন্দ্রা এই জঙ্গল, বির-এর আশ্রয় ছেড়ে সাহস করে লখা সরেন ও আটোয়ারি মুমুকে নিয়ে চলে গিয়েছিল গিরিয়া। সেখানে এক রাজপুত সামস্তের জমিতে চাষবাস দেখেছিল। গিয়েছিল অবশ্য স্বভাবের ছটফটানিতে। থেকে থেকেই মুদ্ৰা বলত, যাই—ধারভিটা কত বড় দেখে আসি খানিক।
পাহাড়িয়ারা পাহাড়ের গায়েই থাকে। থাকে মালপাহাড়িয়ারা। একবার তো মুদ্রা ভরা শীতে মাঘী অমাবস্যায় চলে গিয়েছিল এক মালপাহাড়িয়া গ্রামে। সেখানে তখন ওদের গাওদেওতার পুজো হচ্ছে। সুন্দ্রার বাবা ধমক দিয়েছিল, মালপাহাড়িয়ারা পরব করছে নিজের মনে। গাঁয়ে সবাই ভাল থাকবে, তাতে গাঁওলি সাত বোন দেবতার পূজা করছে। আমাদের আখন পরব, সারজোম বাহা পরবে ‘তারা আসে? নিজের মনে পরব-পূজা করবে মানুষ, তুই অমনি কাড় ধনুক নিয়ে সেথা হাজির। যে যার গোতে থাকে, পরবে থাকে, গায়ে থাকে, পরবে দোষও লেগে যায় বা-বাতাসে – এমন কাজ করতে নাই।
সুন্দ্রা কথাটি না বলে কাঠ ফাড়তে লেগে গিয়েছিল। তারপর, যেন কতই শান্ত ছেলে, এমনি গলায় বলেছিল বাবাকে, শেন আপুং, হাটে গিয়ে বসে থেকে নাহেল-কুড়ি-টাংগা মেরামত করানো কি সম্ভব?
জাহেল কুড়ি টাংগা- লাঙল-কোদাল কুড়াল তো বরাবর সেভাবেই সারানো-গড়ানো হচ্ছে। বাবা ভেবে পায়নি ছেলে কি বলতে চায় ? তবে নাহেল-কুড়ি-টাংগাকে বলে দিই? নিজে নিজে মেরামত হয়ে আয় তোরা।
না আপু, তুমি সমাজকে নিয়ে বোন, কথা বলে দেখ। গ্রাম সমাজে কি বলে।
তুই কি বলিস?
আমি বলি, সার্জোম হাটে সাত গ্রামের সমাজ মিলে রাজমহল থেকে কামার এনে বসত করিয়েছে। আমরা কেন না কামার-কুমার- ছুতার এনে জমি দিয়ে বসত করাই না? সেই তো হাটে ধান-চাল- সর্ষে বেচে সব কিনি?
জমি দিয়ে বসত করাব?
তুমি আমাদের সমাজে প্রধান, মাঝি। যা ঠিক হবে তাই করবে। আমি তা বলতে পারি?
তারা আসবে?
সমান জমিনের দেশেও তো তাদের বসত করিয়েছে জমি দিয়ে। ভাতেই যদি সকলের চলে যেত তা হলে দিনমণি কামার হাটতলায় বসত? বলে দেখতে হবে।
না, এ কথাটা ভেবে দেখি। পাঁচজনকে বলি।
খিদে পেয়েছিল শুন্দ্রার।
খেতে বসেছিল তাড়াতাড়ি। বাথুয়া শাক, ভাত, বেগুন পোড়া, খরগোশের মাংস, করমচার আচার। খেতে দিয়ে মা বলেছিল, কেমন পরব দেখলি ?
সে কি বলি আয়ু, আগে পায়রা, তারপর পাঁঠা, তারপর মোরগ বলি দেয়। দোর, ওদের পুরুত সব করে । রক্তমাখা চাল যে যার ঘরে নিল।
কেন?
লক্ষণ একটা। এ চাল ঘরে থাকলে বিপদ নাই আর। তারপর সিন্দুর লেপা ডিম একটা। থানের সামনে ভাঙল। দেখে দেখে আমি চলে এলাম।
মুদ্রার বউ সোমী বলল, খাওয়া-দাওয়া নাই আছে। পাঁঠার মাথা দিয়ে খিচুড়ি হবে, মাংস হবে, বেটাছেলেরা খাবে। তা বাদে কি বল?
নাচ আর গান।
Shalgirar Dake pdf শালগিরার ডাকে pdf download link
Download / Read Online
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.