আনন্দলোক ম্যাগাজিন সিনেমা জগতের নানা খোঁজখবর নিয়ে সময়ে বিশেষ আয়োজন প্রকাশ করে থাকে। আনন্দলোক ম্যাগাজি নিয়ে যাওয়ার ফল পর্যন্ত সুচিত্রা সেনের যে সকল বিশেষ ঘটনা প্রবাহ সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য বিজয় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো নিয়েই আনন্দলোক সংকলন pdf সম্পূর্ণ সুচিত্রা Sompurno Suchitra Pdf সংরক্ষণ এবং ডাউনলোড করে পড়ে নিন। সুচিত্রা সেনকে বলা হয় সমসাময়িক তারকাদের মধ্যে বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে শক্তিশালী অভিনেত্রী। তিনি ওই সময়ের জনপ্রিয় নায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে তারকা জগতে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। সেই মহান নায়িকাকে নিয়ে বাংলা ম্যাগাজিন আনন্দলোক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্রোরপত্র, প্রবন্ধ, তথ্য সাময়িকী প্রকাশ করেছিল। দীর্ঘ সময় পর সেই সব সংকলনকে একত্রিত করে আনন্দলো সম্পূর্ণ সুচিত্রা: আনন্দলোক সংকলন pdf আকারে প্রকাশ করে।
Sompurno Suchitra Pdf সুজিত কাকা সেনের জীবনী নিয়ে প্রকাশিত সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন সংকলন। Sompurno Suchitra Pdf সংকলনটি তারকা জগতের নানান ঘটনাটি বিষয়ে জানার অপূর্ব সুযোগ। তাই দেরি না করে এখনই ডাউনলোড করে ফেলুন Sompurno Suchitra Pdf সংকলনটি।
Sompurno Suchitra Pdf সূচিপত্র
প্রাক্কথন, স্বপ্নপ্ৰয়াণ সুচিত্রিতা, সুচিত্রার আড়ালে রমা ম্যাজিকের নাম ‘উত্ম – সুচিত্রা’!, জেদের আমি জেদের তুমি…, উওমের চিঠিতে সুচিত্রার ছোঁয়া, আমি হেরে গেলাম উত্তম…, সুচিত্রা – উত্তম জুটি কি সত্যিই শাশ্বত কাব্য গীতি? পরদায় এবং পরদার বাইরে, উত্তম – সুচিত্রা শান্তিনিকেতনে সুচিত্রা, আরব সাগর পাড়ে, আঁধি-র নেপথ্যে, সুচিত্রার রহস্যময়তা, প্রাচ্যের গ্রেটা গার্বো, ফ্যাশন ও সুচিত্রা, যেন সমার্থক! সুচিত্রা কে যেমন দেখেছি, রমাদিকে মোটেই হিংসে করতাম না, সুচিত্রাদির সঙ্গে কোনও দিনই হৃদ্যতা হয়নি, “আপনি বললেই আমি ছবি করব” “জানেন, ওঁরা শুধু সেটের ছবি তুলছেন!” জাতীয় পুরস্কারটাও পেলেন না! আমার সুচিত্রা মাসি, বাড়িতে গুন্ডা লইয়া আইসেন ক্যান? রাঙাদির কথা, বৃষ্টিতে ভিজতে বাধ্য করত! দেখো, তোমার কী হাল করি! সুচিত্রার বাড়ি উদ্ধার করার ইচ্ছে আছে।
Sompurno Suchitra Pdf আরো কিছু সূচি
‘দেবী চৌধুরাণী’ নিয়ে কথা হয়ে ছিল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ‘চতুরঙ্গ’র শুটিং সুচিত্রার বাঁদিকের প্রোফাইলে খুঁত ছিল! সুচিত্রা সেনের শেষ নায়ক সুচিত্রার ‘পাগলি!’ ছায়াসঙ্গী, একান্ত আপন, গানে মোর ইন্দ্রধনু, মুগ্ধতার আকাশে দু’টি তারা: সুচিত্রা – সন্ধ্যা , আরাধিকা সুচিত্রা, সুচিত্রার জীবনদর্শন, ‘সেন’ পরিবার, মা’র জীবনী হয়তো আমিই লিখব! নেহাতই গুজব! প্রতারণার ফাঁদে! আমার জীবনে সুচিত্রা, উনি আমার প্রেরণা ওঁকে একটা প্রণাম করতে চাই, নার্সিং হোমের দিনগুলি সুচিত্রা এখন, মিসেস সেন যেন সাক্ষাৎ মাতৃমূর্তি!বিদায় সুচিত্রা…, বর্তমানের চোখে সুচিত্রাভিনেত্রী? পুরস্কার ও স্বীকৃতি, সুচিত্রা সেনের ফিল্মোগ্রাফি, নির্দেশিকা।
সম্পূর্ণ সুচিত্রা : আনন্দলোক সংকলন pdf নিয়ে প্রাক্কথন
চোখে-চোখে নির্নিমেষে প্রেম বিনিময়, অপাঙ্গে তাকিয়ে কটাক্ষ, প্রত্যাখ্যানে অশ্রুসজল, প্রতিশোধে দৃপ্ত… ক্যামেরায় যে অ্যাঙ্গল থেকে যে ভাবমূর্তিতেই আমরা তাঁকে দেখি না কেন, বুকের ভিতরের তোলপাড়টুকু উপেক্ষা করার সাধ্য নেই। তিনি সুচিত্রা সেন। তাঁর কোনও ‘নেই’ হয় না। সাদা-কালোর ফ্রেমে তিনি চিরন্তন বর্ণময়ী। প্রেমে ব্যর্থ মদ্যপ অ্যাংলো মেয়ে, অসাধারণ সেবাময়ী নার্স, ডাক্তার, চিত্রশিল্পী কিংবা অসহায় বাঈজির চরিত্রে তিনি যেমন অতিক্রম করে গিয়েছেন তৎকালীন বাঙালি নারীর যাবতীয় কনসেপ্ট, তেমনই সাধাসিধে আটপৌরে গলায় আঁচল দেওয়া সাধারণ মেয়ে হয়েও তিনি সেই পরিচিত মেয়েদেরই দুয়ারে কড়া নেড়েছেন। তাঁর বহুল আলোচিত জীবনের যে সমস্ত টুকরো বিভিন্ন কথোপকথনে উঠে আসে, সেখানেও তিনি যেন যাবতীয় পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে নিঃশব্দ বিপ্লব! Sompurno Suchitra Pdf থেকে আরো জানুন।
Anandalok 27 September 2020 pdf আনন্দলোক ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ পিডিএফ
সেইসঙ্গে প্রেম, যা বাঙালিদের উদ্বেল হৃদয় করেছে সবচেয়ে বেশি, সেখানেও সুচিত্রা যেন তুলনাহীনা শ্রীরাধা। জাগিয়ে তুলেছেন প্রতিটি পুরুষ-হৃদয়ের অবদমিত শ্রীকৃষ্ণকে। তিনি মান করেন, যা ভঞ্জন না করে রক্ষে নেই! তিনি বিরহআকুলা, যাঁর কাছ থেকে মহাপ্রভুকেও বিদায় নিতে হয় রাতের অন্ধকারে, ঘুমন্ত অবস্থায়! শরীরী, কিন্তু শরীর ছাপিয়েও তাঁর আবেদন স্বর্গীয়। এমন নিশ্ছিদ্র যাঁর ব্যক্তিত্বের রসায়ন, খ্যাতির অন্তরালে চলে গিয়েও সেই সুচিত্রা সেন কখনও অতীত হতে পারেন না। যিনি তাঁর এক আন্দোলিত জীবনেই নারীকে চিনিয়েছেন জীবনের এতগুলি ‘শেড’, তাঁকে কি ‘মহাতারকা’ না বলে থাকা যায়!
Sompurno Suchitra Pdf বইটিতে যাঁদের লেখা সংকলিত হল:
দুলেন্দ্র ভৌমিক, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল শূর, রূপক সাহা, সুমন দে, হর্ষ দত্ত, গৌতম চক্রবর্তী, সুদেষ্ণা বসু, কৌশিক পাল, ঊর্মি নাথ, সায়ক বসু, ঋষিতা মুখোপাধ্যায়, আসিফ সালাম, ধৃতিমান গঙ্গোপাধ্যায়, সিজার বাগচী, পায়েল সেনগুপ্ত, অচ্যুত দাস, কমলেন্দু সরকার, তপন বকসি, বাল্মীকি চট্টোপাধ্যায়, পরমা সেন, সুরকে বিশ্বাস, স্বপনকুমার ঘোষ, সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঋতব্রত ভট্টাচার্য
Sompurno Suchitra Pdf সম্পূর্ণ সুচিত্রায় মহানায়িকার মহাপ্রয়াণ নিয়ে লেখাঃ
বিশ্বের অধিকাংশ সমাজে দুই ধারার ঐতিহ্যবাহী কাহিনির প্রচলন রয়েছে। ‘মিথ’ ও ‘ফেব্ল’। মোটের উপর মেনে নেওয়া হয়, মিথোলজি হল প্রাগৈতিহাসিক সত্য কাহিনির সংকলন এবং ‘ফেব্ল’ আসলে জনশিক্ষার্থে প্রচলিত কল্পনাপ্রসূত গল্পের ধারা। এ ছাড়াও লেজেন্ড বা ফোকলোর প্রচলিত থাকে সব সমাজেই, যাকে আমরা লোককাহিনি বলতে পারি। এই সব গল্পেরই জন্ম হয় বহু প্রাচীন, যৌথ স্মৃতিরও অতীত কোনও সময়ে, যেখান থেকে সত্য-মিথ্যা নিরূপণ করার সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না।
শুধু কালেক্টিভ সাবকনশাসে ভেসে থাকে ওইসব কাহিনির নির্যাস, আমাদের চেতনা বর্ণময় করে তোলে। বঙ্গভাষী সমাজের সৌভাগ্য, গজদন্তমিনারে বসবাসকারী রূপবতী রাপুনজেলের লোককথা আমাদের জানা সময়ে পরিচিত গণ্ডির মধ্যেও জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আমরা চোখের সামনে যেন জন্ম হতে দেখেছি একটি মিথের, যা ‘সত্য’, যা ‘একক’ এবং সাম্প্রতিককালে যা আর ঘটবে বলে মনে হয় না। Sompurno Suchitra Pdf সংকলনটি পড়ুন।
এই বিষয়টিকে ইতস্তত করে স্বীকৃতি আমরা দিয়ে ফেলেছি, কিন্তু একটা প্রশ্ন কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে। বাঙালির যৌথ চিন্তাধারায় ‘মিথোস’ পদ্ধতিতে এই কাহিনি প্রোথিত হয়ে গেলেও এর মধ্যে ‘লোগোস’-এর সংস্থান কতখানি? পুরোটাই আবেগজর্জরিত কল্পকাহিনির রূপ নিচ্ছে, নাকি বোধ ও যুক্তির ভিত্তিতে সংস্থিত? কতটা মিথ আর কতটাই বা ফেল? বাঙালির শহুরে লোককথা কেন্দ্রে কীভাবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করলেন সুচিত্রা সেন নাম্নী আশ্চর্য নারী? Sompurno Suchitra Pdf রয়েছে আরো বিস্তারিত।
তিনি বাঙালির রোম্যান্টিকতার প্রাণপ্রতিমা, উত্তমকুমারের সঙ্গে যুগলে তিনি প্রেমের আদর্শ রূপ, তিনি দর্শকের আকুতি, মেয়েদের না বলা কথার অবয়ব, পুরুষের চেতনায় তীব্র অভিঘাত। তবে সে আর এমন কী কথা? চিত্রতারকারা এমনটাই হয়ে থাকেন। এভাবেই অভিনেতারা দর্শকের হৃদয়ে ক্যাথারসিসের বীজ বপন করেন, অ্যারিস্টটলের সময় থেকে তা-ই হয়ে আসছে। অভিনয়ের সঙ্গে পরবর্তীকালে যুক্ত হয়েছে তারকাসুলভ গ্ল্যামার ও বিশেষ দেহভঙ্গিমার মোক্ষম মিশেল, যার ফলে ‘স্টার’ শব্দটি গ্রিক হিরোর ধারণায় আরও কিছু উপাদান ন্যস্ত করে জনমানসে জাঁকিয়ে বসেছে। সুচিত্রার মধ্যে এই তারকাসুলভ সব গুণই ছিল, যদিও অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর ক্ষমতা সীমিত। অর্থাৎ সুচিত্রা সেনের কিংবদন্তি হয়ে ওঠা শুধু বাঙালির ভাবমোক্ষণের দ্বারা প্রভাবিত নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু তাঁর মধ্যে অবশ্যই বিদ্যমান।
ন্যায্যতার দাবিতে বলতে হয়, অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর উত্তম-অবতারে বাঙালির প্রেমের শ্রেষ্ঠ ভাবসম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন বটে, কিন্তু তিনি রমা সেনের সুচিত্রা-অবতারের রহস্যলাঞ্ছিত গরিমার কাছে পৌঁছতে পারেননি। সুচিত্রা অধরা, উত্তমকে যেন চেষ্টা করলে ধরা যায়। উত্তমের প্রাণহীন মুখের ছবি আমরা দেখেছি, সুচিত্রার বেলায় শুধুই ধোঁয়া। অতএব বাঙালি নিজেকে বলেছে, বুঝহ সন্ধান। অন্তরালবর্তিনীর না-দেখা মুখের জাদু আমাদের বিভোর করে রেখেছে। এ যেন এক বিপরীতমুখী ‘দ্য পিকচার অফ ডোরিয়ান গ্রে’। অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী ডোরিয়ানের একটি পোর্ট্রেট আঁকা হয়েছিল। গথিক উপন্যাসের উপজীব্য অলৌকিক মায়ার ফলে পোর্ট্রেটের বয়স বাড়ত, আসল ডোরিয়ানের নয়। সুচিত্রা সেনের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। বয়স বাড়ল না রুপোলি পরদায় জীবিত তাঁর চিরকালীন মুখটির, কিন্তু বন্ধ দরজার আড়ালে তিনি নিজে গতযৌবনা হয়েছেন নিশ্চয়ই। তাঁর সে-চেহারা কেউই দেখেনি।
১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত পরদায় ও ফোটোগ্রাফে তাঁর যে চেহারাটি লোকের চোখে-চোখে, স্বপ্নে-স্বপ্নে ফিরেছে, তা ওখানেই থমকে গেল। মৃত্যুর পরও দেখা গেল না ‘আসল’ সুচিত্রার মুখ। প্রতিচ্ছবিই হয়ে উঠল সত্য। ফেল যেন মিথ, মিথই ফেল। লোগোস এসে মিথোসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আটকে দিল পথের মাঝখানেই। এই পথ যদি না শেষ হয়? তা হলে পথ চলতেই থাকে। তার তো কোথাও পৌঁছনোর দায় নেই। Sompurno Suchitra Pdf ডাউনলোড করুন।
যেমন দায় নেই সুচিত্রা সেনের। তিনি সেই যে ‘অ্যারাইভ’ (১৯৫৪ সালে তাঁর নয়টি ছবি মুক্তি পেয়েছে, তার মধ্যে চারটি সুপারহিট, দু’টি ভাল ব্যবসা করেছে। ভাবা যায় আজকের দিনে?) করেছেন উল্কার মতো, আর কোথায়ই বা পৌঁছনোর দায় থাকবে তাঁর? তিনি তাই দাঁড়িয়ে রয়েছেন একই জায়গায়, চারপাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে জীবনের ধারা। টেনিসনের বিখ্যাত লেডি অফ শ্যালটের মতোই তিনি কিন্তু বাস্তবের মধ্যে বাস করেও বাস্তব থেকে বিচ্যুত। লেডি অফ শ্যালট ছিলেন অভিশপ্ত জীবনের অধিকারিণী, সোজাসুজি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে তাঁর খুব বড় ক্ষতি হবে তা জানা ছিল না। তিনি বাইরের জগৎ দেখতেন, কিন্তু এক আয়নার মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত প্রতিচ্ছবি হিসেবে।
আর সেই সঙ্গে তিনি একটি তাঁতে কাপড় বুনতেন, সেই কাপড়ে ফুটিয়ে তুলতেন বাইরের দৃশ্যাবলি। সেই তাঁত বোনা বন্ধ করা যাবে না। বাইরের দিকে না তাকিয়েও বাইরের দৃশ্য নিয়ে কাজ করে যাওয়ার মর্মান্তিক পরিস্থিতি থেকে কীভাবে নিস্তার পাওয়া যাবে, তাও জানতেন না লেডি অফ শ্যালট। যেদিন তিনি বাইরে দিয়ে চলে যাওয়া স্যার ল্যান্সলটের দিকে সোজা তাকালেন, জানালার বাইরে দেখলেন, সেদিনই তাঁর উপর নেমে এল অভিশাপের খড়্গঙ্গ। Sompurno Suchitra Pdf ডাউনলোড করুন।
‘Out flew the web and floated wide
The mirror crack’d from side to side;”
কিন্তু মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের আয়না শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায়নি। তাঁকে আর্তুরিয়ন লেজেন্ডের সেই বন্দিনি দ্বীপবাসিনী নারীর সঙ্গে তুলনা করা মোটেই ঠিক হয় না। কোনও বাহ্যিক কারণে নয়, তাঁর অন্তরালবাস পুরোপুরি নিজ ইচ্ছায়। তাঁর নিজের বেছে নেওয়া পথে। ব্যস্ততম রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্যাচুর মতো তিনি অচঞ্চল থেকেছেন, সাড়া দেননি বাহিরের ডাকে। একটি মতে, তাঁর এই গার্বোয়েস্ক স্বেচ্ছানির্বাসন আসলে আধ্যাত্মিক সাধনার অংশ। শ্রীরামকৃষ্ণ মঠে তিনি যেতেন অন্তরালবর্তিনী থাকার সময়েও। স্বামী অভয়ানন্দ (ভরত মহারাজ) তাঁকে ঈশোপনিষদের প্রথম শ্লোকের ভাষায় “মা গৃধঃ’ বলে পরামর্শদান করেছিলেন। এ কারণেই তিনি ‘ত্যাগ’ করেন: “তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা’।
এই বিশেষ শ্লোকটির ব্যাখ্যায় শংকরাচার্য ‘শোকমোহাদিসংসারধর্ম’ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাধনা করার পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন। সুচিত্রা সেনও শোনা যায় শেষজীবনে ভক্তিমতী হয়ে উঠেছিলেন, ঠাকুরঘরে কাটাতেন অনেকক্ষণ। তবে যা-ই হোক, আধ্যাত্মিকতার চরম প্রকাশ অসূর্যম্পশ্যা হওয়ার মধ্যে দিয়ে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সংসারধর্ম থেকে মুক্ত হতে গেলে কি সংসারের মুখের উপরে দুয়ার এঁটে মুখ ফিরিয়ে থাকা বাধ্যতামূলক, বিশেষত সেই মানুষটি যখন সন্ন্যাস নিচ্ছেন না? অন্য একটি মতে, চলচ্চিত্রজগৎ তাঁকে বীতশ্রদ্ধ করেছিল। তিনি কোনও সম্পর্ক রাখতে চাননি সেই দুনিয়ার সঙ্গে। সেখানকার মানুষজনদেরও তাঁর খুব পছন্দ ছিল না।
সহ-অভিনেতা ও অন্যান্যরা অনেকে তাঁকে দাম্ভিক মনে করেছেন। তিনি বিশেষ কারও সঙ্গে মিশতেন না, তা-ও অজানা নয়। অন্য একটি কারণ কি এই যে, উত্তমকুমারের সঙ্গে তাঁর পরদার জুটি তখন প্রায় ভাঙার মুখে? সাতের দশকে তিনি অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে জুটি বাঁধার চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু সেই রসায়ন কোথায়? শেষ ছবি ‘প্ৰণয় পাশা’ (নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) বাংলার দর্শক গ্রহণ করেনি। তবে কোথাও না বেরনোর কারণ হিসেবেও এই অনুমানটিকে যথাযোগ্য মনে হয় না। যিনি সত্যই গতস্পৃহ হয়েছেন, যাঁর আর মোহ নেই জাগতিক বিষয়ে, যিনি ত্যাগ করেছেন রুপোলি পরদার জগৎ ও তৎসংলগ্ন জনপ্রিয়তা, তিনি কেন বাইরে বেরলেন না সাধারণ নারীর মতো?
প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ে যায় আর-এক অভিনেত্রীর কথা, যিনি জনপ্রিয়তার শিখরে থাকার সময় সব ছেড়ে অনামী জীবনে ফিরে গিয়েছিলেন। নটী বিনোদিনীও পেয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের আশ্রয়। বিনোদিনী দাসীর সঙ্গে ১৮৮৪ সালে দেখা হয় শ্রীরামকৃষ্ণের। তাঁর আশীর্বাদেই মোড় ঘুরে যায় খারাপ পাড়া থেকে আসা সেই অভিনেত্রীর, যিনি কলকাতার মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছিলেন অভিনয়ের গুণে। সেকালের হিসেবে বিনোদিনী কম বড় তারকা ছিলেন না! তাঁর হিট নায়কের সংখ্যাও কম নয়। ন্যাশনাল থিয়েটার ও স্টার থিয়েটারের স্টেজ মাতানো বিনোদিনী দাসী সব ছেড়েছুড়ে সাধারণ জীবন যাপন করতেন।
১৯৪১-এ ৭৯বছর বয়সে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি খুবই সাধারণভাবে জীবনযাপন করেছিলেন। ধরে নিতে বাধা নেই, তেমন সাধারণ জীবন মহানায়িকার পক্ষে অতিবাহিত করা সম্ভব ছিল না। ফোটোগ্রাফ ও চলচ্চিত্রের সুবাদে জনতা তাঁকে চিনত। তাঁর স্টার ভ্যালুও নিশ্চয়ই অনেক বেশি। তাই তিনি অন্তরালে থেকেছেন। তবে অন্যদিকে একথাও শেনা যায়, তিনি যে পুরোপুরি ঘরে বসে থেকেছেন, তা নয়! রাতের দিকে অন্ধকারের আড়ালে, বা ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে, বা বোরখা পরে তিনি নাকি বেরিয়েছেন অনেকবার। মর্নিং ওয়াক করতেন নিয়মিত একটা সময়ে। বা ইভনিং ওয়াক হতে পারে। কিন্তু তাঁর সে-বয়সের ছবি পাওয়া যায়নি। কেউ কি দেখেনি তাঁকে? বা দেখেও তাঁর অন্তরালে থাকার ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছবি তোলেনি? এই সর্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমের যুগে চোরা ক্যামেরায় তাঁকে ধরে রাখতে পারল না কেউ, তা পুরোপুরি বিশ্বাস হয় না।
এবিপি আনন্দের দু’টি প্রচেষ্টায় তিনি সামান্য ধরা পড়েছিলেন, প্রামাণ্যভাবে সেই ছবি বাইরে বেরতে পারেনি। বাঙালি শ্রদ্ধা জানিয়েছিল তাঁর ইচ্ছেকে। কিন্তু আবারও মনে একটি প্রশ্ন জাগে। সুচিত্রা সেনের ভক্তমণ্ডলীর গড় বয়স কত? এ সময়ের কমবয়সি, পথচলতি জনতা কি তাঁকে মনে রেখেছে, বা তাঁর প্রতি সেভাবে নিবেদিত, যেভাবে পাঁচ ও ছয়ের প্রবীণেরা ছিলেন? উত্তর সম্ভবত ‘না’। তাঁর দাহকার্যের সময় বাইরের জনতার মুখে শ্মশানবন্ধু হয়ে আগত এখনকার তারকাদের নামাঙ্কিত জয়ধ্বনি হয়তো সেটাই প্রমাণ করে। Sompurno Suchitra Pdf সংকলন সংগ্রহের রাখার মত একটি ম্যাগাজিন বই।
দেশ ম্যাগাজিন ২ আগস্ট ২০২৪ পিডিএফ Desh 2 August 2024 pdf link
আধ্যাত্মিকতা বা বহির্জগতের প্রতি বীতরাগ হওয়া তাই সুচিত্রা সেনের বাঙ্ময় অথচ নীরব জীবনযাপনের সম্পূর্ণ অর্থ বহন করে না। একটা বিশেষ সময়ে আটকে থাকার স্বেচ্ছা-প্রচেষ্টা কি অল্প হলেও গ্রিক মিথের সেই নিজরূপমুগ্ধ বালকটিকে মনে করিয়ে দেয় না? একটি জলাশয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে নার্সিসাস এমনই মুগ্ধ হল যে, সে চোখ ফেরাতে পারল না নিজেরই জলতল-প্রকাশ থেকে। রমা দাশগুপ্ত জানতেন তিনি সুন্দরী, একথা জানিয়েছেন তাঁরই ছেলেবেলার বন্ধুরা। সুচিত্রা সম্পর্কে একটি বিষয়ে যদি একমত হওয়া যায়, তা হল এই যে তিনি অপরূপা। তাঁর সৌন্দর্যের তুলনা বিরল। বৈদ্যজাতীয় মেয়েরা সুন্দরী হয় না, এমন একটি অভিযোগের জবাবে এই প্রতিবেদকের দিদিমা বলতেন, ‘বাঙালিকে স্বপ্ন দেখার জন্য আমরা (অর্থাৎ বদ্যিরা) একটা সুচিত্রা সেন দিয়েছি। আগামী একশো বছর আর কিছু না দিলেও চলবে’।
সত্যি, দাশগুপ্ত বাড়ির মেয়ে আর সেনবাড়ির বউয়ের রূপ এখনও বাঙালিকে মুগ্ধতা থেকে মুক্তি দেয়নি। স্বয়ং সুচিত্রাও একথা জানতেন। হয়তো কোনও নার্সিসিস্টিক মনোভাব থেকেই সুচিত্রা সব ছেড়েও আর সাধারণ জীবনে ফিরে যেতে পারেননি। লোকসমক্ষে যাননি। চার দেওয়ালে আবদ্ধ হয়ে প্রায় ৩৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানতেন, ‘বিল্বমঙ্গল’-এ গিরিশ ঘোষের লেখা কথা ক’টির সত্যতা: দেহপট সনে নট সকলই হারায়। Sompurno Suchitra Pdf তারকা জগতের মহানায়িকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অ্যাাচিভার্স ম্যাগাজিন জুলাই ২০২৪ পিডিএফ Achievers Magazine July 2024 pdf
প্রায় সারাজীবন ধরেই নিজেকে সমর্পণ করে গিয়েছেন সুচিত্রা সেন। কখনও স্ত্রী, কখনও মা, কখনও তারকা, আবার কখনও ভক্ত হিসেবে…
সুচিত্রা সেনকে ‘মহানায়িকা’ বললে সম্ভবত তাঁকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা হয় না। বরং ‘মহাতারকা’ অভিধাটি তাঁকে বেশি মানায়। আমরা কখনওই স্ত্রী-পুরুষের ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হতে পারি না। এই কারণেই হয়তো ‘মহানায়িকা’ শব্দটির জন্ম। কিন্তু সুচিত্রা সেন সর্ব অর্থেই সুপারস্টার। তাঁর গ্ল্যামার, অননুকরণীয় ভঙ্গিমা, হাসির বিচ্ছুরণ এমনই যে, তিনি নায়িকার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে নিজের একটি উজ্জ্বল জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছিলেন। একমাত্র উত্তমকুমার ছাড়া তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার আশাও কেউ করতে পারেননি! তখনও নয়, এখনও নয়। তিনি বাস্তব জীবনে ধরাছোঁয়ার বাইরে, তিনি রহস্যময়ী, তিনি পুরোপুরি অধরা মাধুরী, অথচ তিনি পরদায় আমাদের পাশের বাড়ির মেয়ে। এই দু’টি বিপরীত মেরু তিনি মিলিয়েছিলেন অবলীলায়।
তাই বাঙালির মনে তাঁর স্থান শাশ্বত। পুরুষশাসিত সিনেমার জগতে তিনি ‘মিসেস সেন’। একসময় তাঁর কথাই শেষ কথা ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। এদিক দিয়েও তিনি নারীর নির্দিষ্ট স্থান ভেঙে এক নতুন কক্ষপথে বিচরণ করেছেন। রিনা ব্রাউনের (সপ্তপদী) চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, “ও আমাকে টাচ করবে না!” তখন হয়তো জানতেনও না, সেই সামান্য সংলাপ পরবর্তীকালে তাঁর জীবনের অমোঘ এক সত্য হয়ে উঠবে। আর তাই, কেউ ছুঁতে পারল না তাঁকে। শেষ দেখাও দেখতে পেল না। ঠিক যেমনটা তিনি চেয়েছিলেন! অনেক অনুরোধ, অনেক আকুতি, অনেক মিনতির পরও তাঁকে টলানো যায়নি। দেশের সিনেমা জগতে শ্রেষ্ঠ সম্মানও (দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার) সেই ইচ্ছের সামনে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে।
কিশোর ভারতী ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ পিডিএফ Kishor Bharati 5 December 2023 pdf
শুধুমাত্র সশরীরে দিল্লি গিয়ে পুরস্কার গ্রহণ করবেন না বলে, তিনি সেই সম্মান সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি নিজ ব্যক্তিত্ব দিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাংলা চলচ্চিত্র মহলকে শাসন করে গিয়েছেন। আর সেই কারণেই হয়তো তাঁর স্বেচ্ছায় অন্তরিন জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সকলে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত!
নানা দিক নিয়ে আলোচনা রয়েছে Sompurno Suchitra Pdf সংকলনটিতে। Sompurno Suchitra Pdf সংকলনটি পড়ার মাধ্যমে সুচিত্রা সেন সম্পর্কে যাদের জানার আগ্রহ আছে তারা তার সম্পর্কে বিস্তারিত তো জানতে পারবেন এই সেই সাথে তার নানা অজানা দিকগুলোও জানতে পারবেন।
Sompurno Suchitra Pdf এ সুচিত্রা সেনের ফিল্মেগ্রাফি
হিট, সুপারহিট, সুপারডুপার হিট, ব্লকবাস্টার… সুচিত্রা সেনের ২৫ বছরের বর্ণময় কেরিয়ারে এই শব্দগুলি ঘুরে ফিরে এসেছে বারংবার। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে ৬০-টিরও বেশি ছবি, সেগুলি বক্স অফিসে কীরকম ফলাফল করেছিল, তারই তালিকা রইল Sompurno Suchitra Pdf এ।
১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত, বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে ৬০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সুচিত্রা সেন। তাঁর অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে যেমন আছে বাণিজ্যসফল ছবি, ঠিক তেমনই আছে বেশ কয়েকটি ফ্লপ ছবিও। বক্স অফিসের সাফল্য বিচারের সময় এখানে যে ছবিগুলি পাঁচ সপ্তাহ কিংবা তার চেয়েও কম সময় ধরে চলেছে, সেগুলিকে ‘ফ্লপ’, ৬-৭ সপ্তাহ ধরে চলা ছবিগুলিকে ‘অ্যাভারেজ’, ৮-১০ সপ্তাহ ব্যাপী সিনেমা হলে রাজত্ব করা ছবিগুলিকে ‘সুপারহিট’, ১১-১৫ সপ্তাহে ‘সুপারডুপার হিট’ ধরা হল। আর যে ছবিগুলি দর্শক ১৫ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেখেছেন, সেগুলি পেল ‘ব্লকবাস্টার’-এর তকমা। এই বিচারে মহানায়িকার কেরিয়ারের ১৩টি ছবি সুপারহিট, ১৯টি ছবি সুপারডুপার হিট ও তিনটি ছবি ব্লকবাস্টার। Sompurno Suchitra Pdf নায়িকার চলচ্চিত্রের বিশ্লেষণ তো থাকবেই।
আনন্দমেলার Sompurno Suchitra Pdf সংকলনটি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.