Unishe December Morshumer Shitaltama Rat pdf উনিশে ডিসেম্বর মরশুমের শীতলতম রাত pdf যার লেখক অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাসটি রহস্য গোয়েন্দা আর হরর কাহিনীর সংমিশ্রণে লিখিত উপন্যাসটি আকারে ছোট হলেও পাঠকের মনকে আকৃষ্ট করার মতো ক্ষমতা রাখে। যারা হরর বা গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে পছন্দ করেন তাদের জন্য উপন্যাসটি একটি উপযোগী ও এক বর্ষায় করার মত উপন্যাস। পাঠক কাহিনীতে একবার প্রবেশের পরে আর শেষ না করে বের হবার মত অবস্থা থাকবে না। লেখকের লেখনি শৈলী ও শব্দচয়ন পাঠককে বিমোহিত করে রাখবে। তাহলে দেরি না করে এখনই উপন্যাসটি পড়া শুরু করে দিন Unishe December Morshumer Shitaltama Rat pdf by Arijit Bhandhopadhay
Unishe December Morshumer Shitaltama Rat pdf সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
নামঃ উনিশে ডিসেম্বর মরশুমের শীতলতম রাত
লেখকঃ অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
সাইজঃ ২ এমবি
পৃষ্ঠাঃ ৪৭
ধরণঃ অন্যান্য লেখক
Unishe December Morshumer Shitaltama Rat pdf নমুনাঃ
মাতৃ-জঠর থেকে বেরোনোর মাস কয়েকের মধ্যেই শিশুটির শিল্প প্রতিভা প্রকাশ পেয়েছিল আশ্চর্য রকমভাবে। সবাই বলত এ-ছেলে নির্ঘাত আগের জন্মে নামকরা কোনো আঁকিয়ে ছিল। জন্মান্তরের কালক্রমেও সে ক্ষমতা বিস্মৃত হয়নি। যে সব জিনিস জন্মে অবধি সে কখনও চোখে দেখেনি, সেসবই ড্রইং খাতায় ফুঁটিয়ে তুলত অবলীলাক্রমে। সকলে ধন্য ধন্য করত।
আর বাপ-মা গর্ব করে বলত, তাদের আদরের বলাই, মা সরস্বতীর আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়েই ভূমিষ্ঠ হয়েছে। হাতেখড়ির দিন বলাইয়ের দাদামশাই সুবল চক্রবর্তী যখন তাকে কোলে নিয়ে মা সরস্বতীর বিগ্রহের সামনে বসে, তার হাতে চক-পেন্সিল ধরিয়ে নতুন কেনা শ্লেটের উপর দাগ কাটাতে উদ্যত হলেন, তখন ঘটে গেল এক তাজ্জব ব্যাপার। সে ছেলে তৎক্ষণাৎ সকলকে অবাক করে দিয়ে, তার কম্পিত শিশু হাতে নিপুণভাবে সেই প্লেটের উপর ফুটিয়ে তুলল মা সরস্বতীর বাহনটির অবয়ব। একদৃষ্টে অনেকক্ষণ ধরেই সে সামনে রাখা বিগ্রহের হংস বাহনের দিকে চেয়ে ছিল। তারই প্রতিফলন ঘটে গেছে শ্লেটের উপর।
এমন ঘটনা এর আগে কেউ কখনও দেখেওনি, শোনেওনি। সুবলবাবু হতভম্ব হয়ে তার নাতির মুখের দিকে চেয়ে বসে থাকলেন কিছুক্ষণ। উপস্থিত সকলের চোখ ছানা বড়া। বলাইয়ের মা বন্দনা দেবী এই অকল্পনীয় দৃশ্য দেখে কেঁদেই ফেললেন। মুখে আঁচল চাপা দিয়ে পাথর হয়ে বসে রইলেন সোফার উপর। পুরুত মশাই হঠাৎই ঘণ্টা ধ্বনি সহ সজোরে মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করলেন। শাঁখ বেজে উঠল তাল দিয়ে। তাঁর ভাব দেখলে মনে হল, উত্তর কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের, চক্রবর্তী পরিবারের এই বৈঠকখানায় আজ দেবী স্বয়ং এই ক্ষুদ্র শিশুটির ভিতরে প্রকট হয়েছেন। শঙ্খ, কাঁসর ঘণ্টা, উলুধ্বনি আর উচ্চ গ্রামে মন্ত্রোচ্চারণ, এই চতুর্মুখী আক্রমণের ঠেলায় দেবশিশু বলাই কেঁদে উঠল ভ্যাঁ করে।
পুজো শেষে সুবলবাবু ঠাকুরমশাইকে যথাযত দক্ষিণা দিয়ে খুশি করলেন। প্রসাদ বিতরণ শেষ হল। কিন্তু পরিবারের সকলের মনের অস্থিরতা কাটল না। কেউ বলল সাক্ষাৎ বাগদেবীর আশীর্বাদ পড়েছে এই শিশুর উপর। কেউ বা আবার চোখ গোল করে এই ঘটনাটিকে অলৌকিক ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করল। কেউ বা বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলল ‘এ-ছেলে বড় হয়ে মোনালিসা-টোনালিসার মতো কিছু একটা একে জগৎ জোড়া নাম করবে’। সুবলবাবু দৃঢ়চেতা মানুষ। এককালে শহরের বুকে দাপটের সঙ্গে ব্যাবসা করেছেন। বয়েসের ভারে দাপট খানিকটা কমলেও, চেহারায় খুব একটা ছাপ পড়েনি এখনও। আজও মেরুদণ্ড শক্ত। বাড়ির ঝি চাকর থেকে শুরু করে, মায় ছেলে, ছেলের বউ পর্যন্ত সুবলবাবুর সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস পায় না।
এই সুবলবাবু একসময় নকশাল আন্দোলনের একজন স্বক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে শোনা যায়। যাদবপুর বিজয়গড় এলাকায় একচেটিয়া কাজ করতেন। পুলিশের এনকাউন্টার থেকে কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। তারপর বহু বছর আর তাঁর টিকি দেখা যায়নি। বেশ কয়েক বছর পরে, বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন অনেকটা সামলে উঠেছে, সুবলবাবু আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। ব্যাবসা শুরু করেন, সংসারী হন, এর পর থেকে আর কখনও রাজনীতির ছায়া মাড়াননি।
কাজেই সুবলবাবু যথেষ্ট দৃঢ়চেতা মানুষ। নাতির এই অস্বাভাবিক আচরণ তাঁর মনে বিশেষ কোনো রেখাপাত করতে পারে না। শুধু এটাই না, কোনো অপার্থিব বিষয়ই তাঁর মনে এখনও রেখাপাত করতে পারে না। তবে এ-কথা অস্বীকার করার উপায় নেই আজকের এই ঘটনা, তাঁর মতো মানুষকেও বাকরুদ্ধ করে ফেলেছিল কয়েক মুহূর্তের জন্য।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.