বিদ্যাসাগর জীবনচরিত ও ভ্রমনিরাস (Vidyasagar-jibancharit O Bhramnirash pdf) শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন এর অমর সৃষ্টি। লেখক বিদ্যাসাগরের জীবন আলেখ্য চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিদ্যাসাগর জীবনচরিত ও ভ্রমনিরাস (Vidyasagar-jibancharit O Bhramnirash pdf) পাঠকদের চাহিদার ও গবেষণার কথা চিন্তা করে আপনাদের জণ্য পিডিএফটি দেওয়া হল।
বিদ্যাসাগর জীবনচরিত ও ভ্রমনিরাস (Vidyasagar-jibancharit O Bhramnirash pdf) নমুনাঃ
মহাত্মা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় সামান্য বীরসিংহ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করিয়া কিরূপে কলিকাতায় আগমন করিয়া নানা শাস্ত্রে পারদর্শী হুইয়াছিলেন এবং ভারতবর্ষের বিশেষতঃ বঙ্গদেশের মুখ উজ্জ্বল করিয়াছেন, এই সকল বিষয় জানিবার জন্য সাধারণকে ব্যগ্রচিত্ত দেখিয়াও সাধারণের নিকট উপহাসাম্পদ হইবার আশঙ্কায় এই জীবনচরিত মুদ্রিত ও প্রচারিত করিতে সাহস করি নাই।
কিন্তু ডাক্তার শ্রীযুক্ত বাবু মহেন্দ্রনাথ সরকার সি, আই, ই, ও আমার কনিষ্ঠ সহোদর শ্রীযুক্ত ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও আত্মীয় শ্রীযুক্ত যজ্ঞেশ্বর মুখোপাধ্যায় ও শ্রীযুক্ত আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতির ঘরে, উৎসাহে ও অনুরোধে মুদ্রিত ও প্রচারিত করিলাম। পাঠকবর্গের প্রতি আমার সবিনয়ে প্রার্থনা যে তাঁহারা যে সমস্ত ভ্রম প্রমাণ ও অন্যায় দোষ দেখিবেন তজ্জন্য স্বীয়গুণে ক্ষমা করিবেন। তাঁহারা এই জীবনচরিত পাঠে কিছু মাত্র প্রীতি লাভ ও উপকার বোধ করিলে শ্রম সফল বোধ করিব।
বিদ্যোৎসাহী, দেশহিতৈষী, অবলা বন্ধু, দয়াময়, আজম-বিশুদ্ধচরিত, পূজ্যপাদ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জ্যেষ্ঠাগ্রজ মহাশয়ের জীবনচরিত লিখিতে দেশ বিদেশের অনেক কৃতবিদ্য লোক, সাধারণের নিকট যশস্বী হইবার মানাতে এত হইয়াছেন; পরম্পরায় ইহা শ্রবণ করিয়া, স্বল্পবুদ্ধি আমিও, ঐ সনে যশস্বী লেখকগণের তার জীবনচরিত লিখিতে প্রবৃত্ত হইয়া, নিশ্চয় সাধারণের নিকট উপহাসাম্পদ হইব। অথবা পাঠকবর্গ আমাকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তৃতীয় সহোদর বলিয়া জানিতে পারিলে, অবজ্ঞা না করিতেও পারেন। যেহেতু বাল্যকাল হইতে আমি তাঁহার নিতান্ত অনুগত ভৃত্য। তাঁহার জন্মভূমির কীর্ত্তিপ্তস্তস্বরূপ বীরসিংহ বিদ্যালয়, বালিকা- বিদ্যালয়, রাখাল স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয় ও নিরুপায় লোক সকলকে মাসহুরা বিলি, বিধবাবিবাহাদি কার্য্য সমূহ, আর সন ১২৭২/৭৩ সালের বিষয় দুর্ভিক্ষ সময়ে প্রত্যহ সহস্রাধিক দরিদ্র লোকের প্রাণ রক্ষাদি কার্য্য আমার তত্ত্বাবধানে ছিল। Vidyasagar-jibancharit O Bhramnirash pdf
বিশেষতঃ আমি বাল্যকাল হইতে পিতামহী, মাতামহী ও জননী দেবীর প্রমুখাৎ তাঁহার বাল্যকালের আচার ব্যবহার রীতি নীতি সকল বিশিষ্টরূপ অবগত হইয়াছি। অদ্যাপি সেই সকল কথা আমার স্বতিপথে জাজল্যমান রহিয়াছে। বিশেষতঃ অগ্রজ মহাশয় কাশীধামে বৃদ্ধ পিতৃদেবের শেষাবস্থার শুদ্রবাদি কাৰ্যে প্রায় ভাগবৎসর আমার নিযুক্ত রাখিয়াছিলেন। তথায় পিতৃদেবের প্রমুখাৎ এবং আমি সকালে সংস্কৃত কালেজে অধ্যয়ন করি, তৎকালে কালেজের ব্যাকরণের অধ্যাপক পুজ্যপার গঙ্গাধর তর্কবাগীশ, সাহিত্যধ্যাপক জন্ম-গোপাল তর্কালঙ্কার, অলঙ্কারের অধ্যাপক প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ, বেদান্তের অধ্যাপক শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতি, দর্শনের অধ্যাপক নিমচাদ শিরোমণি ও জয়- নারায়ণ তর্কপঞ্চানন মহাশয়দের প্রমুখাৎ দাদার বাল্যকালের পাঠাবস্থায় যে সকল বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়াছি, তাহা আমার হৃদয়পটে অঙ্কিত রহি যাচ্ছে।
এজন্য আমি আশা করি পাঠকবর্গ আমার লিখিবার রীতি নীতি বিষয়ে যে সকল দোষ অবলোকন করিবেন, তাহা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অনুগত ভৃত্য ও সহোদর বলিয়া আমার তদ্দোষ সমূহ ক্ষমা করিতে পারেন, এই সাহসে দুস্তর কার্য্যে প্রোৎসাহিত হইয়া লিখিতে প্রবৃত্ত হইলাম।
হুগলি জেলার অন্তঃপাতী তারকেশ্বরের পশ্চিম ও জাহানাবাদ মহ কুমার পূর্ব্ব প্রায় ও ক্রোশ অন্তরস্থিত বনমালিপুর গ্রামে ভুবনেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বাস করিতেন। তিনি সঙ্গতিপন্ন ও সংস্কৃত শাস্ত্রে হুপণ্ডিত ছিলেন। তাঁহার পাঁচ পুত্র; সকলেই সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত; তৃতীয় পুত্রের নাম, রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রামজয় ঘাটাল মহকুমার অন্তঃপাতী বীরসিংহ গ্রামবাসী বিখ্যাত পণ্ডিত উমাপতি তর্কসিদ্ধান্তের দুর্গানাম্নী কনিষ্ঠা কন্যার পাণিগ্রহণ করেন। কালক্রমে রামজয়ের দুইটা পুত্র ও চারিটী কন্যা জন্মিয়াছিল। পুত্রদ্বয়ের জ্যেষ্ঠের নাম ঠাকুরদাস, কনিষ্ঠের নাম কালিদাস। মঙ্গলা, কমলা, গোবিন্দময়ী ও অন্নপূর্ণা কন্ঠা চারিটীর নাম। ভুবনেশ্বর বার্ধক্যনিবন্ধন মানবলীলা সম্বরণ করিলে পর, তাঁহার পুত্রগণের বিষয় বিভাগ উপলক্ষে পরস্পর বিষম মনান্তর ঘটিল। রামজয় ধার্ম্মিক ও উদারস্বভাব ছিলেন। Vidyasagar-jibancharit O Bhramnirash pdf
অকিরিৎকর বিষয়ের জন্য প্রাণসম সোদর বর্গের সহিত বিরোধ করা অতি গর্হিত কর্ম্ম বিবেচনা করিয়া, দুই পুত্র ও চারিটী কন্তা রাখিয়া কাহাকেও কোন কথা প্রকাশ না করিয়া সন্ন্যাসীর বেশে তীর্থ পৰ্যটনে প্রস্থান করেন। কিছু দিন পরে, তাঁহার পত্নী দুর্গা- দেবীর বনমালিপুরে অবস্থিতি করা নিতান্ত অসহ হইল; সুতরাং পুত্রষর ও কস্তা চতুষ্টয়কে লইয়া পিতৃভবন বীরসিংহায় আগমন করেন। তাঁহার পিতা উমাপতি তর্কসিদ্ধান্ত সমাদর পূর্ব্বক নিরাশ্রয়া স্বীয় দুহিতা ও তাঁহার সপ্ততিগণকে স্বীর সহনে রাখিলেন। Vidyasagar-jibancharit O Bhramnirash pdf
তৎকালে তাহার জোষ্ঠ দৌহিত্র ঠাকুরদাসের বয়ঃক্রম দশ বৎসর ও কনিষ্ঠ কালিদাসের বয়ঃক্রম সাত বৎসর, তর্কসিদ্ধান্ত উভয় দৌহিত্রের লেখা পড়া শিক্ষার নির্মিত বীরসিংহ নিবাসী গ্রহাচার্য্য পণ্ডিত কেনারাম বাচস্পতিকে নিযুক্ত করিলেন। আচার্য্য মহাশয় তৎকালে এ প্রদেশের মধ্যে জ্যোতিষ শাস্ত্রে অদ্বিতীয় পণ্ডিত ছিলেন। তিনি স্বপ্ন দিবসের মধ্যে ভ্রাতৃদ্বয়কে বাঙ্গালা ভাষা, শুভঙ্করী অঙ্ক ও জমিদারী সেরেস্তার কাগজ শিক্ষা দিয়া, পরে সংক্ষিপ্তসার ব্যাকরণ অধ্যয়ন করাইতে প্রবৃত্ত হইলেন। উমাপতি তর্কসিদ্ধান্ত নিতান্ত অথর্ব্ব হইলে, সাংসারিক কার্য্যের ভার পুত্র রামসুন্দর ভট্টাচার্য্যের হস্তে অর্পণ করেন। উক্ত রামসুন্দর ভট্টাচার্য্যের পত্নীর সহিত দুর্গাদেবীর মনান্তর ও বচসা হইতে লাগিল। Vidyasagar-jibancharit O Bhramnirash pdf
রামসুন্দর স্ত্রৈণতা বশতঃ স্ত্রীপুরুষে এক দিবস দুর্গাদেবীকে বলেন যে তোমার দুইটা পুত্র ও চারিটী করাকে আমরা অতঃপর প্রতিপালন করিতে পারিব না, তুমি পথ দেখ। স্পষ্টাক্ষরে ইহা বলায়, দুর্গাদেবী নিতান্ত নিরুপায় ভাবিয়া, কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া, পরিশেষে বৃদ্ধ পিতা তর্কসিদ্ধান্তকে সবিশেষ অবগত করিলেন। তিনি বলিলেন, আমি সকলই বিশেষরূপ অবগত আছি। অতঃপর তোমার উহাদের সহিত একত্র সদ্ভাবে বাস করা চলিবে না। পৃথক স্থানে বাস করা নিতান্ত আবশ্যক। দুর্গাদেবী তাহাতে সম্মত। হইলেন। পরদিন তর্ক- সিদ্ধান্ত গ্রামস্থ ভদ্রলোকদিগকে আহ্বান করিয়া বলিলেন যে, রামসুন্দরের ও বধু মাতার সহিত দুর্গার এক গৃহে বাস করা দুষ্কর, অতএব আমি স্বতন্ত্র স্থানে ইহার গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া নিব স্থির করিয়াছি। তাহাতে গ্রামস্থ লোকেও সম্মত হইলেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.