নির্বাচিত সাহিত্য সৃষ্ট চরিত্রের জীবনী নির্মাণ মামাবাবু সমগ্ৰ Mamababu Samagra pdf প্রেমেন্দ্র মিত্রের আরো এক সংযোজন। মামাবাবু সমগ্ৰ সম্পাদনা করেছেন সুরজিৎ দাশগুপ্ত।
Mamababu Samagra pdf অবতারণা
প্রেমেন্দ্র মিত্র বাংলায় কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ। এই ধারায় তাঁর প্রথম রচনা ‘পিঁপড়ে পুরাণ’। তারপরে দুঃসাহসিক অভিযানের রোমাঞ্চ আর বিজ্ঞানের জিজ্ঞাসা মিশিয়ে যে রচনা দিয়ে বাংলা ভাষায় এক নতুন জাতের সাহিত্যকৃতির প্রথম পর্যায় শুরু করেন তার নাম ‘কুহকের দেশে’। বিগত শতকের তিরিশের দশকের প্রথম দিকে মাসিক ‘মৌচাক পত্রিকায় এই উপন্যাসটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়, কিন্তু তখনও গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি।
১৯৪৮ সালে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা প্রচ্ছদে সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় মামাবাবুর দ্বিতীয় কাহিনি ‘ড্রাগনের নিঃশ্বাস’ তথা ‘ড্রাগনের নিশ্বাস’। যাঁকে কেন্দ্র করে গ্রন্থকার, প্রকাশক ও প্রচ্ছদশিল্পীর অমন সম্মিলন সেই মামাবাবুর সম্বন্ধে স্বভাবতই একটা বিশেষ কৌতূহল জাগে বাঙালি পাঠক সমাজে। কিন্তু গ্রন্থকার নিজে তখন সাহিত্য ও চলচ্চিত্র, কলকাতা ও বোম্বাই করে বেড়াচ্ছেন। তাঁর সেই অস্থিরতার সান্ধ্যপর্বে শ্রীপ্রকাশ ভবন থেকে ১৯৬৩ সালে গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় ‘কুহকের দেশে’।
ইহজন্ম pdf – নবনীতা দেব সেন Ehajonmo pdf – Nabaneeta Dev Sen
তখন মামাবাবুকে নিয়ে একটা নতুন উৎসাহের সঞ্চার হল যেমন কিশোর তেমনই বয়স্ক পাঠক মহলে। তা ছাড়া ততদিনে বিশ্বজুড়ে জেগে উঠেছে কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের জন্য একটা প্রবল চাহিদা। পাঠক সমাজের দাবিতে ষাটের দশকে প্রেমেন্দ্র মিত্র আবার লিখলেন তিনটে ছোট কাহিনি –‘মামাবাবুর প্রতিদান’, ‘আবার সেই মেয়েটি’ ও ‘অতলের গুপ্তধন’–এবং এই তিনটেকে একত্র করে ‘মামাবাবু ফিরেছেন’ গ্রন্থটি ১৯৬৮ সালে প্রকাশ করেন আলফা-বিটা নামে এক নতুন প্রকাশক, কিন্তু তার কোনও গল্পেরই শিরোনাম ছিল না।
এ যাবৎ প্রেমেন্দ্র মিত্র যে-পাঁচটা মামাবাবুর কাহিনি লিখেছেন সবগুলোই অধীত অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনা মিশিয়ে লিখেছেন। অতঃপর তিনি জ্যেষ্ঠপুত্র মৃন্ময়ের কর্মস্থল ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার টেনসা শিল্প-নগরে কিছুকাল বাস করার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনা মিশিয়ে লিখলেন মামাবাবুর ষষ্ঠ কাহিনি যা ১৯৭২ সালে শৈব্যা পুস্তকালয় গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন ‘খুনে পাহাড়’ নামে। Mamababu Samagra pdf
অবশেষে ১৯৮৩ সালে বিদ্যোদয় লাইব্রেরী প্রাইভেট লিমিটেড থেকে মামাবাবুকে নিয়ে উল্লিখিত চারটি গ্রন্থকে একত্রে সংকলন করে প্রকাশিত হল ‘মামাবাবুর কাহিনী সমগ্র’। ওই সংকলনটিতে রচনাগুলির সূচি ছিল এইরকম—‘কুহকের দেশে’, ‘ড্রাগনের উ নিঃশ্বাস’,’পাহাড়ের নাম করানী’, ‘অতলের গুপ্তধন’, ‘মামাবাবুর প্রতিদান’ ও ‘আবার সেই মেয়েটি”। বলে রাখা ভালো যে ওই সংকলনের অন্তর্ভুক্ত ‘পাহাড়ের নাম করালীই ১৯৭২ সালে ‘খুনে পাহাড়’ নামে গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয়েছিল। Mamababu Samagra pdf
কিন্তু ১৯৮৩-র ‘কাহিনী সমগ্র’ থেকে বোঝা যায় না যে ১৯৬৮-র ‘মামাবাবু ফিরেছেন’ গ্রন্থটির শিরোনামহীন গল্প তিনটেই ১৯৮৩-র ‘কাহিনী সমগ্র’-তে নাম পেয়েছে এইভাবে—‘মামাবাবুর প্রতিদান’, ‘আবার সেই মেয়েটি’ ও ‘অতলের গুপ্তধন’। কিন্তু তাতে ‘মামাবাবু ফিরেছেন’-এর পরম্পরা রক্ষিত হয়নি। এই ২০০৭-এর সংকলনে যেমন —১৯৬৮-র কাহিনী-পরম্পরা পুনরুদ্ধার করা হল তেমনই রক্ষা করা হল ১৯৮৩-তে দেওয়া শিরোনামগুলিও ।
‘মামাবাবু ফিরেছেন’-এ কাহিনি তিনটে শুরু করার আগে ছিল একটি অস্বাক্ষরিত ভণিতা। সেটিকে মূল সংকলনের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া গেল না বলে নিচে উদ্ধৃত করলাম—-
মামাবাবু ফিরেছেন
মামাবাবু কুহকের দেশে গিয়েছিলেন অনেক কাল আগে। ড্রাগনের নিশ্বাসে যে দেশ ছারখার হয়ে যেতে বসেছিল সে দেশে গিয়েও ভয়ঙ্কর এক রহস্য উদ্ঘাটিত করেছিলেন। তারপর বহুকাল তাঁর আর কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায় নি। মামাবাবু তা বলে সত্যিই ঘুমিয়ে কাটাননি এতদিন। কি যে তিনি করেছেন এবার জানবার সময় হয়েছে। মামাবাবু ফিরেছেন। ফিরেছেন কথাটা তাঁর বেলায় অনেকভাবে খাটে। এত দিনের অজ্ঞাতবাস থেকে তিনি আবার গল্পের রাজ্যে ফিরেছেন। এক কালে বেশীর ভাগ ছোটরাই যাঁকে চিনত ভালবাসত তিনি এবার ফিরেছেন বড়দের জগতে। তিনি আরো অজানা দূর-দূরান্তর থেকে নতুন সব ভিন্ন ধরনের গল্প নিয়ে ফিরেছেন। মামাবাবু ফিরেছেন। Mamababu Samagra pdf
এখানে ভণিতাটির বানান, যতিচিহ্ন ইত্যাদি অপরিবর্তিতই রাখা হয়েছে।
এখানে মন্তব্য করতে চাই যে ‘অতলের গুপ্তধন’ গল্পটির সঙ্গে একই লেখকের ‘সূর্য কাঁদলে সোনা’ উপন্যাসটির একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ঐতিহাসিকতায় এবং তা আবিষ্কারে এক দুর্লভ আনন্দ পাওয়া যাবে।
১৯৮৩-র ‘কাহিনী সমগ্র’-তে ছিল না এমন একটি গল্পও ২০০৭-র এই সংকলনে যোগ করা হল—‘পরচুলা সাহেব ও মামাবাবু’–এটি প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয়েছিল লেখকের মৃত্যুর পরে মুক্তপত্র পাবলিকেশনস কর্তৃক ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত ‘ঘনাদা ও দুই দোসর মামাবাবু ও পরাশর’-এ। Mamababu Samagra pdf
এবার মামাবাবুর কাহিনির সূত্রে বানানের কথা। নিশ্চয়ই পাঠকের চোখে পড়বে যে এই ‘অবতারণা’র বানানের সঙ্গে বক্ষ্যমান গ্রন্থের বানানের কোনও সামঞ্জস্য নেই। কারণ প্রেমেন্দ্র মিত্রর স্বত্বাধিকারীরা চেয়েছিলেন ‘বাবার বানান’ বজায় রাখতে। কিন্তু ১৯৮৩-র ‘কাহিনী সমগ্র’তেই রয়েছে বিচিত্র বানানের বিপুল সম্ভার-কর/করো, কোর/কোরো, কখনও/কখনো, করব/করবো, খুশি/খুশী, গেছলাম/ গেছিলাম/গিয়েছিলাম, ত/তো, পুরন/পুরানো/পুরোনো, লুকন / লুকানো/ লুকোনো, শৌখিন/ শৌখীন/সৌখীন ইত্যাদি। তা হলে কোন বানান রাখা হবে? তখন আমায় বলা হল ‘বাবা যে-বানান বেশি ব্যবহার করেছেন’। তবে ১৯৪৭-৪৮ থেকে প্রেমেন্দ্র মিত্রর হাতের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় এবং তাতে দেখেছি, বিভিন্ন পর্বে তিনি বিভিন্ন রকম বানান ব্যবহার করেছেন, সাধারণত তিনি ঈ-কার পছন্দ করতেন, বাড়তি ও-কার পছন্দ করতেন না, শখ-এর চেয়ে সখ-এর প্রতি তাঁর বেশি পক্ষপাত ছিল।
অবশ্য তাঁর শেষ দিকের বহু গ্রন্থেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের, এমন কী আনন্দবাজার পত্রিকার বানান বিধি পালনেরও দৃষ্টান্ত দেখা যায়, তবে সেগুলি সম্পাদক/প্রকাশক কর্তৃক সংশোধিত হওয়াও সম্ভব। শেষ পর্যন্ত বানান ও যতিচিহ্নের ব্যাপারে অনুসরণ করেছি ১৯৮৩-র ‘কাহিনী সমগ্র’র অন্তর্গত ‘কুহকের দেশের বানান ও যতিচিহ্নকে। মামাবাবুর পূর্ববর্তী সংকলনে ভাগ্নে-লেখক মামাবাবুকে কখনও ‘তুমি’ কখনও ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করেছে, এই সংকলনে এই অসংগতি দূর করার চেষ্টা করেছি। Mamababu Samagra pdf
আরও একটা কথা আছে খোদ মামাবাবুর নাম নিয়ে। ১৯৮৩-র ‘কাহিনী সমগ্র’-র অন্তর্গত ‘কুহকের দেশে’-তে মামাবাবুকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘মিঃ রায়’ বলে আর ভাগ্নেকে মানে লেখক নিজেকে ‘মিঃ সেন’ বলে। কিন্তু পরের কাহিনীগুলোতে মামাবাবুকে কখনও “মিঃ রায়’, কখনও ‘মিঃ সেন’ বলা হয়েছে। বক্ষ্যমান সংকলনে এই নাম-বিভ্ৰাট ঘোচাবার জন্য ‘কুহকের দেশে’র আদর্শে সবখানেই ‘মিঃ রায়’ ব্যবহার করেছি মামাবাবুর জন্য আর ভাগ্নে বা লেখকের জন্য ব্যবহার করেছি ‘মিঃ সেন’। অবশ্য ‘মামাবাবু ফিরেছেন বইটিতে ‘মিঃ সেন’ হয়ে গেছেন ‘মিঃ হাজরা’। এই নাম বদলের ব্যাখ্যা আছে ‘মামাবাবুর প্রতিদান’ গল্পটিতে। Mamababu Samagra pdf
যদিও মোটামুটিভাবে ১৯৮৩-র ‘কাহিনী সমগ্র’ অনুসারেই এই ২০০৭-এর সংকলন প্রস্তুত করা হয়েছে, তবু দুটি গ্রন্থের বহুস্থলেই পাঠভেদ হুঁশিয়ার পাঠকের চোখে পড়বে, কারণ ১৯৮৩-র ‘কাহিনী সমগ্র’-র পাঠেই ছিল বিস্তর ছাড়, এবং সেগুলিকে অন্য প্রকাশকের প্রকাশিত গ্রন্থের সঙ্গে তুলনা করে সংশোধনের চেষ্টা করেছি। এখানে নিজস্ব সংগ্রহ থেকে ‘মামাবাবু ফিরেছেন’-এর ফোটোকপি করে দেওয়ার জন্য ড. রামরঞ্জন রায়কে কৃতজ্ঞতা জানাই।
আশাকরি মামাবাবুর অনুরাগীরা ২০০৭-এর এই মামাবাবু সংকলনটিকে অধিকতর নির্ভরযোগ্য সংস্করণ রূপে গ্রহণ করবেন।
সুরজিৎ দাশগুপ্ত ২০০৭ ইং ১৪১৪,
Mamababu Samagra pdf এতে আছে
কুহকের দেশে ১৩
ড্রাগনের নিঃশ্বাস ৮৫
মামাবাবুর প্রতিদান ১১৯
আবার সেই মেয়েটি ১৩৩
অতলের গুপ্তধন ১৪৯
পাহাড়ের নাম করালী ১৭১
পরচুলা সাহেব ও মামাবাবু ২৪৭
Mamababu Samagra pdf download link
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.