মনীষ মুখোপাধ্যায় এর Norok pdf নরক pdf ডাউনলোড করুন ও Norok pdf নরক pdf পড়ুন।
Norok pdf নরক pdf সূচিপত্র
নরক
চুবুর-ব্রোল-ওয়া
Norok pdf নরক pdf নমুনাঃ
সাদা সুগন্ধি ধোঁয়ায় ঘর ভরে আছে, কিছু ধোঁয়া ধূপের, বাকিটা একজনের পাইপ থেকে বেরোচ্ছে। ভদ্রলোকের চোখে কালো রে-ব্যানের এভিয়েটর চশমা। তিনি চোখে দেখতে পান বলে মনে হচ্ছে না। এর কারণ, তাঁর পাশে রাখা আড়াই ফুটের টেবিলটার ওপর রাখা হুইস্কির গ্লাসটা, তিনি যতবারই ধরতে চাইছেন, একটু হাতড়াতে হচ্ছে তাঁকে। একটা বিরাট কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে, লোকটার চেয়ারের ঠিক পাশে। ফারনেসের গনগনে আগুনের তাপে বাইরের প্রবল ঠান্ডা ঘরে ঢুকতে পারছে না।
ক্যাঁচ… শব্দ হল ঘরের লক খোলার, আর একজন প্রবেশ করল ঘরে। আসার কথা আরও দু’জনের। ভদ্রলোকের ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলা শোনা গেল, “ডেভিড এলে?”
আগন্তুক বলল, “ইয়েস স্যার।”
আবার ভদ্রলোক বললেন, “ধীরাজ আর বিশু পোদ্দার কতদূর?” ডেভিড যার নাম সে উত্তর দিল, “বলতে পারব না স্যার, তবে এতক্ষণে তো এসে যাওয়ার কথা।” ভদ্রলোক মুখটা ব্যাজার করলেন, বললেন, “সব ওয়ার্থলেস্।” ডেভিড ভয়ে ভয়ে মাটিতে শুয়ে থাকা কুকুরটার দিকে দেখল। বলা তো যায় না, এখন সে শুয়ে আছে, কখন উঠে এসে বসাল
এক কামড়! ডেভিডের এই অস্বস্তি ভদ্রলোক যেন আঁচ করতে পারলেন, উনি হাসি মুখে বললেন, “কিছু করবে না। রেক্স এমনিতে খুবই ঠান্ডা, যতক্ষণ না আমার কেউ ক্ষতি করার চেষ্টা করে। জাতে জার্মান কিনা!” কুণ্ডলী পাকানো কুকুরটা বোধহয় বুঝতে পারল, কথা হচ্ছে তারই ব্যাপারে, সামনের পা-এর দিকে মাথাটা গুঁজে দিল নিজের।
পাইপের এরিনমোর তামাক ছাইদানে ঝাড়তে ঝাড়তে কান খাড়া করলেন ভদ্রলোক, “ওই বোধহয় ওরা এল।” বললেন তিনি। তাঁর অনুমান সঠিক। দরজা ঠেলে ঢুকল আরও দু’জন। এরাই হল ধীরাজ আর বিশু পোদ্দার। জুলুকের এই বাংলোয় তাদের হঠাৎ কেন তলব করা হল তারা কেউই বুঝতে পারছে না। সমস্বরে ধীরাজ আর বিশু জিজ্ঞেস করল, “স্যার কেমন আছেন?” ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, “তোমরা বোসো।” তাঁকে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তার ধার কাছ দিয়েও গেলেন না তিনি। “তোমরা কি কেউ ড্রিঙ্ক নেবে?” প্রশ্ন করলেন তিনি। বাইরের প্রচণ্ড ঠান্ডায় এসে সবারই অবস্থা খারাপ। বিশু পোদ্দার বাদে বাদবাকি দু’জন পানীয় গ্রহণে সম্মত হল।
বিশু পোদ্দার বৈষ্ণব। সে মাছ, মাংস, মদ কিছুই খায় না। পড়াশোনাও বাকি দুজনের চেয়ে বেশি। কিন্তু এই তিনজন একই কাজ করে, ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তারা চুরি করে আনে নানারকম অ্যান্টিক জিনিসপত্র।
এই কারণেই তাদের এই পাহাড়-পর্বত ঘেরা দুর্গম জায়গায় ডেকে আনা হয়েছে। যিনি তাদের ডেকেছেন, অর্থাৎ এই অন্ধ ভদ্রলোক, তাঁর নাম সোমনাথ হাজরা। কোনো একসময় এই সোমনাথ হাজরার পূর্বপুরুষদের ছিল অ্যান্টিকের ব্যাবসা। ব্রিটিশ সরকারের সময় তাদের ছিল বিরাট সব হাই প্রোফাইল কাস্টমার। সেসবই আজ ইতিহাস। তবে সোমনাথ হাজরা আজও তাঁর পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন।
তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম এখন কেউই এই ব্যাবসা করে না। এমনকি হাজরাসাহেবের একমাত্র ছেলে অমিত সেটেলড্ ইউ এস এ-তে। আজন্ম অন্ধ ছিলেন না সোমনাথ হাজরা সাহেব। বছর কুড়ি আগে একটা অ্যাক্সিডেন্টে তিনি সারা জীবনের মতো হারিয়ে ফেলেন স্ত্রী মিতাকে এবং নিজের মহামূল্য চোখ দুটো।
তামাং বলে একটি স্থানীয় ছেলে এই বাংলোটায় কাজ করে, কিছুক্ষণ আগে সে নামিয়ে রেখে গেছে দুটো ফুল পেগ হুইস্কি আর শুয়োরের মাংস ভাজা। খুব তৃপ্তি করে ডেভিড আর ধীরাজ সেটা খাচ্ছে। বিশু পোদ্দার সরু চোখে তাকিয়ে আছে অন্ধ মানুষটার দিকে, অপেক্ষা করছে মনে মনে, কী বলতে পারেন এই ভদ্রলোক। ডেভিড আর ধীরাজ, সোমনাথ হাজরার কাজ এই প্রথমবার করলেও বিশু আজ থেকে চেনে না এই অ্যান্টিকের ব্যবসায়ী সোমনাথ হাজরাকে। বড়ো আশ্চর্য রকম মানুষ এই সোমনাথ হাজরা, অদ্ভুত অদ্ভুত পুরোনো জিনিস সংগ্রহ করার বাতিক এই ভদ্রলোকের। মনে মনে ভাবে বিশু। একবার খুব সমস্যায় পড়েছিল বিশু, স্যারের জন্য। তাকে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল বাঁদরের বাঁ-পায়ের হাড়।
অনেক কষ্টের পর এক সাঁওতালি ছেলে নিজের জীবন বাজি রেখে জঙ্গল থেকে তাকে জোগাড় করে দিয়েছিল এই দুর্লভ জিনিস। এর বদলে সে নিয়েছিল নগদ দশ হাজার। যেটা হাজরাসাহেবের কাছে কোনো ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু ছেলেটা অবাক হয়ে বলেছিল, আর সে কোনো দিনও এরকম ঝুঁকি নেবে না। এসব জিনিস নাকি জাদুকরদের লাগে, আর লাগে তান্ত্রিকদের।
Norok pdf download link
Download / Read Online
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.