সিদ্দিক আহমেদ এর Swarnabaj pdf এ প্রবল প্রতাপশালী ঈসা খানের উথ্থান ও মধ্যযুগের কূটনীতি ভরা রোমাঞ্চকর মহাকাব্যিক যাত্রা উঠে এসেছে এই বইয়ে। Swarnabaj pdf ডাউলোড করুন।
Swarnabaj pdf – Siddique Ahmed ভূমিকা
‘স্বর্ণবাজ’ সম্ভবত আমার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে লেখা উপন্যাস। প্রায় এক যুগ আগে লেখা শুরু করেছিলাম বলে মনে পড়ছে। বারো ভূঁইয়াদের নেতা ঈসা খাঁ-র জীবনের আলোকে এই উপন্যাস লিখতে গিয়ে আমি প্রতি পদে পদে চমৎকৃত হয়েছি। প্রথমে ভেবেছিলাম সবমিলিয়ে একখানা বই হবে। কিন্তু এর কাঠামোগত বিস্তৃতি আমার সে-সিদ্ধান্তে যবনিকা টানতে বাধ্য করেছে। বলা বাহুল্য, ঈসা খানের জীবনের তিনটি প্রধান অংশের এটি প্রথম খণ্ড। অনুজপ্রতিম সুলেখক ও প্রকাশক জুটি মুবিন এবং নাবিদকে ধন্যবাদ তাড়া দিয়ে বইয়ের কাজ শেষ করিয়ে নেওয়ার জন্য।
মধ্যযুগ সবসময় আমাকে তাড়িত করে, ভাবিত করে। প্রযুক্তির ছোঁয়া সবে লেগেছে দুনিয়ার হালে। মানুষ আধুনিকতার দ্বারে, তবে বন্যতা তখনও ছেড়ে যায়নি তাদের। মানুষ সেসময় বিবেকের চেয়ে যেন আবেগ দিয়েই বেশি চালিত হয়েছে। আর সেই আবেগের কারণে বদলে গেছে এক একটি জনপদের ভাগ্য তথা ইতিহাস। কী অদ্ভুত বিচিত্র এক সময়! মানুষের জীবন যেন ঝুলে ছিল তলোয়ারের ডগায়; একটু ভুল, সাথে সাথে জীবনাবসান।
সেই অদ্ভুত সময়ের অনুভূতিগুলোই আমি ধরতে চেয়েছি। ধরতে চেয়েছি সেসময়ের সমাজ এবং প্রথা। যুদ্ধের রণকৌশল থেকে অন্দরমহলের আদিমতা— সবই ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছি একেবারে নিজের মতো করে। তবে সচেতনভাবে ইতিহাসকে অবিকৃত রাখার প্রয়াস ছিল। কল্পনার ঘোড়া যে ছোটাইনি তা বলতে পারব না। তবে সে ঘোড়া ইতিহাসের চৌহদ্দি পার হয়নি। Swarnabaj pdf
বহু আগে লেখা শুরু করেছিলাম বলে লেখায় কাঁচা হাতের ছাপ ছিল। আমি এবং আমার স্ত্রী সম্পাদনা-পর্যায়ে ঘষেমেজে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সেই কাঁচা হাতের ছাপটুকু সরিয়ে ফেলতে। তবুও কিছুটা রয়ে গেল বোধহয়। থাকুক না! কিছু জিনিসে একটু পুরোনো ছাপ থাকাটা বোধহয় মন্দ নয় ।
‘স্বর্ণবাজ’ লিখতে গিয়ে আমাকে অসংখ্য বইপত্র, সিনেমা, তথ্যচিত্র এবং ব্লগের সহায়তা নিতে হয়েছে। সেসব তোলা থাক শেষ বইয়ের জন্য। আপাতত পাঠককে স্বাগত জানিয়ে যাত্রা শুরু করি মধ্যযুগের ধুলোময় পথে। Swarnabaj pdf
গ্রীষ্মের খরতপ্ত এক দুপুর। হঠাৎ হঠাৎ ঝড়ো বাতাস তার উপস্থিতি জানান দিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম আকাশে কিছু তুলোট সাদা মেঘ লাগামছাড়া হয়ে ধীরে ধীরে পাক খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রৌদ্রোজ্জ্বল সেই খোলা আকাশের নিচেই ইছামতী নদীর পাড় জুড়ে ফেলা হয়েছে উইয়ের ঢিবির মতন সারি সারি তাঁবু। নদীর পাড়ে হাজার হাজার ধূসর আর সাদা রঙের তাঁবুগুলো মাকড়সার জালের মতন ছড়িয়ে আছে। সেই জালের ঠিক কেন্দ্রে টকটকে লাল বিশাল তাঁবুটা আলাদাভাবে চোখে পড়ে। সেটা বঙ্গের বিদ্রোহী সুলতান সোলায়মান খানের শাহি নিয়ন্ত্রক তাঁবু। এখানে বসেই তিনি তাঁর যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যুদ্ধ থেকে সাধারণ বিচার, সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা হয় এখান থেকে। তাঁবুটাও দেখবার মতন। আয়তনে সেনাছাউনির সবচেয়ে বড়োটারও চারগুণ।
উচ্চতায় অন্যগুলোকে বহু আগেই হার মানিয়েছে। এর লাল লম্বা বর্শার ফলার মতন মাথাটা যেন মন্দিরের চুড়োর মতন আকাশ ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। সুউচ্চ চুড়োটাই যেন প্রকাশ করছে তাঁবুটার সর্বৈব ক্ষমতার মহিমা এর সামনের বড়ো খোলা অংশটাকে কাঠের মজবুত বেড়া দিয়ে ঘিরে নিরাপত্তা বলয়ের মতন তৈরি করা হয়েছে। বলয়ের চারপাশে নিরাপত্তার জন্য মজুত রয়েছে বেশ কিছু সৈন্য। তারাও দায়িত্ব পালনে সদা সতর্ক। আজ শাহি তাঁবুটার চারপাশে অন্যদিনের চাইতে চাঞ্চল্য তুলনামূলক বেশি। তাজ খানের দূত এসেছে, এ খবর সৈন্যশিবিরে চাউর হতে সময় লাগেনি। বাতাসের চেয়ে দ্রুতগতিতে খবর ছুটেছে কান থেকে কানে । ফলে লাল নিয়ন্ত্রক তাঁবুর নিরাপত্তা বলয়ের চারপাশে পা ফেলার জায়গা নেই।
অসংখ্য সৈনিক উঁকিঝুঁকি মেরে ঘটনা অনুধাবনের চেষ্টা করছে। তীব্র দাবদাহের কারণে সবাই ঘর্মাক্ত এবং ক্লান্ত, তাতে অবশ্য কারওরই উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। ফিশফিশানির গুঞ্জনে ভরে উঠেছে বাতাস। কানাকানি সর্বত্র। নিরাপত্তা রক্ষায় যেসব সৈন্য রয়েছে, তারা উৎসুক সৈন্যদের মোকাবেলা করতে একবারে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। ঘেমে-নেয়ে উঠেছে তাদের সুঠাম শরীর। Swarnabaj pdf
সৈন্যরা সবাই জানে, তাজ খান আর দরিয়া খানের সাথে সুলতান সোলায়মান খানের একটা বড়ো ধরনের যুদ্ধ শুরু হতে চলেছে। শূর শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন সোলায়মান খান। তিনি শূরদের বঙ্গ ছাড়া করবার প্রতিজ্ঞা করেছেন। আর এই বিদ্রোহের খবর কানে যাওয়া মাত্র তাঁকে দমন করতে হাজির হয়ে গেছেন এই দুই শূর সেনাপতি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দু’পক্ষের খণ্ডযুদ্ধও শুরু হয়ে গেছে। অবশ্য এগুলো মূল যুদ্ধের আগে মহড়ার মতো ব্যাপার, তাই কেউ এতদিন তেমন গা করেনি। তবে আজ হঠাৎ তাজ খানের দূত আসার খবরে সবাই বেশ নড়েচড়ে বসেছে। সবাই পূর্বাভিজ্ঞতা থেকে অনুমান-অনুধাবন করতে পারছে, দূত সম্ভবত মূল যুদ্ধের ইশতেহার নিয়েই এসেছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.