আকাশের নীচে মানুষ pdf – প্রফুল্ল রায় Akasher Niche Manush pdf – Prafulla Roy

আকাশের নীচে মানুষ pdf - প্রফুল্ল রায় Akasher Niche Manush pdf - Prafulla Roy
আকাশের নীচে মানুষ pdf - প্রফুল্ল রায় Akasher Niche Manush pdf - Prafulla Roy

প্রফুল্ল রায় এর বঙ্কিম সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাস Akasher Niche Manush pdf আকাশের নীচে মানুষ pdf ডাউনলোড করুন ও Akasher Niche Manush pdf পড়ুন।

আকাশের নীচে মানুষ pdf - প্রফুল্ল রায় Akasher Niche Manush pdf - Prafulla Roy
আকাশের নীচে মানুষ pdf – প্রফুল্ল রায় Akasher Niche Manush pdf – Prafulla Roy

Akasher Niche Manush pdf আকাশের নীচে মানুষ pdf নমুনাঃ

এখন, জষ্ঠি মাসের এই বিকেলে গোটা আকাশ জুড়ে গলা কাঁসার রং ধরে আছে। পশ্চিম দিকের ঢাল বেয়ে গড়াতে গড়াতে সূর্যটা অনেকখানি নেমে গিয়েছিল। ঘণ্টা দেড়েকের ভেতর সন্ধ্যে হবার কথা। তবু এখনও রোদে ছুরির ধার। গরম বাতাস আগুনের ভাপ ছড়াতে ছড়াতে উল্টোপাল্টা ঘোড়া ছুটিয়ে যাচ্ছে।

নিচে ছোটনাগপুরের চাষের ক্ষেত। জায়গাটার নাম গারুদিয়া। এখানে যেদিকে যতদূর চোখ যায়, চৌকো তেকোণা ছ-কোণা আট- কোণা, নানা মাপের নানা আকারের অগুণতি জমি। বহুকালের প্রাচীন আকাশের তলায় হাজার হাজার বছরের পুরনো সব শস্যক্ষেত্র পৃথিবীর গায়ে নানারকম জ্যামিতিক নকশা এঁকে পড়ে আছে।

মাসিক বসুমতী গল্পসম্ভার pdf – পূর্ণেন্দু ঘোষ Masik Basumati Golposambher pdf

চাষের ক্ষেতগুলোর একধারে হাইওয়ে। এই সড়ক দিয়ে একদিকে রাঁচী, আরেক দিকে পাটনার বাস যায়। গেল বছর বর্ষায় দক্ষিণ কোয়েলের বন্যায় হাইওয়ে ভেঙেচুরে গিয়েছিল। ঠিকাদাররা ভাঙা সড়কে মাটি ফেলেছে, তবে এখনও পীচ-টীচ পড়ে নি। বাস, ট্রাক, সাইকেল-রিকশা কিংবা বয়েল-গাড়ি অনবরত ছোটাছুটির ফলে বড় সড়কে সবসময় ঘন হয়ে ধুলো উড়ছে। ধুলোর চিকের আড়ালে ওদিকটা ঝাপসা। হাইওয়ের ওধারে দক্ষিণ কোয়েলের একটা রোগা সরু খাত এই জষ্ঠি মাসের রোদে শুকিয়ে ধু-ধু মরুভূমির মতো দেখায়।

অনেক দূরে আকাশ যেখানে শিরদাড়া বাঁকিয়ে মাটিতে নেমেছে সেখানে ছোটনাগপুরের একটা ছোটখাটো রেঞ্জ। এধারে ওধারে ট্যারাবাঁকা চেহারার কিছু কিছু সীসম গাছ, হঠাৎ হঠাৎ এক-আধটা ঢ্যাঙা তাল, ঝোপঝাড় কি আগাছার জঙ্গল ঝাঁ ঝাঁ রোদে ঠায় দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুড়ছে।

একদিকে হাইওয়ে, আরেক দিকে ছোটনাগপুর রেঞ্জ—মাঝখানে এই গারুদিয়া তালুকের যাবতীয় জমিজমার মালিক একজন—রাজপুত ক্ষত্রিয় রঘুনাথ সিং। সড়কের ওধারে দক্ষিণ কোয়েলের পাড় ধরে যত চাষের জমি সে-সব মিশিরলালজীর। ঐ জায়গাটার নাম বিজুরি–বিজুরি তালুক। এখন এই গারুদিয়া মৌজার সব জমিতে হাল-লাঙল চলছে। পুরো চৈত্র আর বৈশাখ মাস রোদে পুড়ে পুড়ে মাটি ফুটিফাটা হয়ে আছে। দু-আড়াই মাস এক কণা বৃষ্টি পড়ে নি। বৃষ্টি দূরের কথা, এদিকের আট-দশটা তালুক বা মৌজার তিন-চার লাখ মানুষ ছিটেফোটা মেঘও দেখে নি। ফলে মাটি এখন পাথরের চাঙড়া হয়ে আছে।

রাজপুত রঘুনাথ সিং-এর একটা ছ-কোণা ক্ষেতে এখন বয়েল-টানা লাঙল চালাচ্ছে ধর্মা বা ধম্মা। তাঁদের গাঁও-মহল্লার মানুষজন অবশ্য ধৰ্ম্মাই ডাকে। এ ডাকটা খাতির বা স্নেহবশতঃ। সে একাই না, চারদিকের অন্য সব জমিতেও লাঙল ঠেলছে ধাওতাল, রামনাগিন, ঢোড়াইলাল, বুধেরি, এমনি আরো অনেকে। তাদের সঙ্গে শক্তসমর্থ মেয়েরাও জমিতে নেমেছে। লাঙলের ফলায় মাটি উপড়ে ফেলার পর তা থেকে কোদা (এক ধরনের আগাছা) কিংবা আগের সালের ফসলের শুকনো শেকড়-বাকড় বেছে একধারে জড়ো করে রাখছে।

অনিলিখা ও গন্ধরহস্য – অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী Anilikha O Gondha Rahassa by Abhijnan Roychowdhury

রাজপুত রঘুনাথ সিং-এর তালুকে ধর্মা একজন বেগার খাটা ভূমিদাস। সে শুধু একাই না, তার ডাইনে-বাঁয়ে সামনে-পেছনে যারা এখন মাটি চষছে তারাও তা-ই। কিন্তু এই ভূমিদাসদের জীবন বা সমাজের ইতিহাস এখন না।
ধর্মার বয়েস তেইশ-চব্বিশ। গায়ের রং পোড়া তামার মতো। চৌকো মুখ, চওড়া মাংসল কাঁধ, পাথরের চাঙড়ার মতো বিশাল বুক, হাত দুটো কাঁধ থেকে জানু পর্যস্ত নেমে এসেছে, আঙুলগুলো মোটা মোটা এবং থ্যাবড়া, হাতের পাঞ্জা দুটো প্রকাণ্ড। তার কাঁধ পর্যন্ত ঝাঁকড়া চুল, মুখে খাপচা খাপচা পাতলা দাড়ি-গোঁফ। পরনে হাতকাটা লাল গেঞ্জি আর ডোরা-দেওয়া ইজের। ঘামে ময়লায় সেগুলো চিটচিটে। গলায় কালো কারে রুপো-বাঁধানো বাঘনখ ঝুলছে।

বাঁ হাতের শক্ত মুঠে চেপে লাঙলের ফলা যতটা সম্ভব মাটির গর্ভে ঢুকিয়ে বয়েল দুটোর পিঠে ছপটি হাঁকায় ধর্মা, আর থেকে থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, ‘উর-র-র, উ-র-র, উর-র-রা—’
জষ্ঠি মাসে রোদের হল্কায় তেজী বয়েল দুটোর চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে থাকে। তবু জন্তু দুটো প্রাণপণে লাঙল টানে।এদিকে লাঙলের ফালের ঘা লেগে পাথুরে মাটি থেকে আগুনের ফুলকি ছুটতে থাকে যেন।

যাই হোক না, মানুষ বা জন্তুর এখন রেহাই নেই। রঘুনাথ সিং দিন সাতেক আগে পাটনা গেছেন। তালুকের আর বাজার-গঞ্জের লোকজনরা বলাবলি করছিল, তিনি নাকি এবার এখানকার ‘এম্লে’ (এম-এল-এ) হবেন। সেই সব ব্যাপারেই দরকারী কাজে তাঁর পাটনা যাওয়া। ধর্মারা শুনেছে তিনি এম্নে বনার ‘বাত পাকী’ করে ফিরে আসার পর চাষের জন্য পালামৌর কিছু এঁরাও, সাঁওতাল আর অচ্ছুৎ ক্ষেতমজুব আনা হবে। ওরা ফুরনের কিষাণ। চাষের মরসুমে ফী বছরই ওদের আনা হয়। মরসুম ভর কাজ করে। আবাদের কাজ শেষ হলেই ওদের বিদায় করা হয়। ফের ওরা আসবে সেই ফসল কাটার সময়।

ক্ষেতিবাড়ি থেকে ধান, গেঁহু, বজরা, মুগ, মসুর, কলাই বা রবিচাষের ফসল কেটে রঘুনাথ সিংয়ের খামারে তুলে দিয়ে, ফিরে যাবে। কিন্তু যতদিন না রঘুনাথ সিং পাটনা থেকে ফিরছেন এবং ওঁরাও সাঁওতাল বা ভূমিহীন কিষাণরা আসছে ততদিন ধর্মাদের এবং তাদের লাঙল-টানা জন্তুগুলোর জিরেন নেই। রঘুনাথ সিং হুকুম দিয়ে গেছেন, এ ক’দিনে অন্তত আধাআধি জমি চষে ফেলতেই হবে। কেননা আষাঢ়ে ‘বারিষ’ নামলে একদিনও দেরি করা হবে না; সঙ্গে সঙ্গে বীজ রোয়া শুরু করতে হবে।

Akasher Niche Manush pdf download link
Download / Read Online

Be the first to comment

Leave a Reply