অনিল ভৌমিকের Sonar Shikal pdf সোনার শিকল pdf ডাউনলোড করুন ও Sonar Shikal pdf পড়ুন।
সোনার শিকল pdf নমুনাঃ
রিচার্ড পড়তে লাগল- দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিমা শহরের লাইব্রেরিতে, কুজকো শহরের লাইব্রেরিতে পড়াশুনো করেছি ইনকা আমলে তো লিখিত ভাষা গড়ে ওঠেনি। কাজেই ঐ আমলের ইতিহাস পেয়েছি পরবর্তী ঐতিহাসিকদের লেখা বিবরণ থেকে। অনেক পড়াশুনো করলাম। পেলাম দুটো তথ্য।
এক ইনকা সাম্রাজ্যের পতনের ৩০০ বছর পরে লাগানাতি এলাকায় প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়েছিল।
দুই পিজারো মানকা কাপানকে ইনকাসম্রাট নির্বাচিত করেছিল। এই মানকা কাপান পরে স্পেনীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। বিদ্রোহের আগে কয়েক দিনের জন্যে মানকা কাপান কোথায় গিয়েছিল কেউ জানে না। কুজকোয় ফিরে এসে বলেছিল-আমি হুয়াতানা (প্রাচীন ইনকা ভাষায় এর অর্থ মৃত্যুগুহা) থেকে ফিরে এসেছি। আমার মৃত্যু নেই। স্পেনীয়দের এ দেশ থেকে তাড়াও। কিন্তু পরে বিদ্রোহ দমন করা হয়। মানকা কাপানের মৃত্যু হয়।
রিচার্ড থামল। ব্লাসকো গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। বলল- তারপর?
রিচার্ড আবার পড়তে লাগল-প্রথম তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যুয়ান ভালভার্দের সময় লাগানাতির যে ভৌগোলিক সংস্হান ছিল, পরে ভূমিকম্পে নিশ্চয়ই সেই সংস্হানের পরিবর্তন ঘটেছে। তাই তিন পাহাড়ের অবস্হান পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো একটা পাহাড় ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। . দ্বিতীয় তথ্য থেকে আমি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছি। আমি কুজকো গেলাম। কুজকোর চারপাশে রেড ইন্ডিয়ানদের গ্রামে গ্রামে আমি ঘুরতে লাগলাম ‘মৃত্যুগুহা’র সন্ধানে। কিন্তু কেউই ‘হুয়াতানা’ বা ‘মৃত্যুগুহা’র সন্ধান দিতে পারল না। দু’বছর কেটে গেল এই অনুসন্ধানে। পরে হঠাৎই চিকামো উপত্যকায় এক অতি বৃদ্ধ রেড ইন্ডিয়ানের সন্ধান পাই। দোভাষীর সাহায্যে তার কাছে জানলাম, প্রাচীন ভাষায় ‘হুয়াতানা’ শব্দের অর্থ ‘মৃত্যুগুহা’।
তবে বর্তমানে কেউ এই শব্দ ব্যবহার করে না। এখন বলে ‘কুয়েচুয়ে’। সেটা আছে কাছেই, চিকামো উপত্যকায় এক পাহাড়ের গায়ে। এবার ‘কুয়েচুয়ে’ বা মৃত্যুগুহায় যাবো স্থির করলাম। কিন্তু কে নিয়ে যাবে? যে কোনো রেড ইন্ডিয়ানকে ‘কুয়েচুয়ে নিয়ে যাবার কথা বললেই ভয়ে তাদের মুখ সাদা হয়ে যায়। অনেক কষ্টে বেশি অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে একটি রেড ইন্ডিয়ান যুবককে রাজী করালাম। সে বলল- ‘আমি শুধু গুহাটা দেখিয়ে দিয়েই চলে আসবো।’ আমি তাতেই রাজী হলাম।
পরদিন সকালে দু’জনে হাঁটতে লাগলাম। চিকামো উপত্যকার উদ্দেশ্যে। বেলা দশটা নাগাদ চিকামো উপত্যকায় পৌঁছলাম। উপত্যকার পাশের পাহাড়টার কাছাকাছি এসে রেড ইন্ডিয়ান যুবকটি দাঁড়াল। নিঃশব্দে আঙুল দিয়ে গুহাটা দেখিয়ে কয়েকবার মাথাটা ওঠা-নামা করে এক দৌড়ে পালিয়ে গেল। ওকে খেতে ডাকলাম। কিন্তু ও আর পিছু ফিরে তাকাল না।
শিলং জেলের ডায়েরি pdf – সুরমা ঘটক Shilong Jeler Diary pdf – Surama Ghatak
আমি কাছেই একটা নিঃসঙ্গ ‘কাঠবাদাম গাছের তলায় বসে সঙ্গের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর গুহাটায় ঢোকার জন্যে তৈরি হলাম। একটা পাহাড় প্রায় খাড়া উঠে গেছে। তারই গায়ে ছোট্ট একটা গুহা। পাথরের খাপে পা রেখে রেখে আস্তে আস্তে গুহার মুখের কাছে উঠে এলাম। দেখলাম ভেতরটা অন্ধকার। ডান হাতে পিস্তলটা শক্ত করে ধরলাম। বাঁ হাতে টর্চটা জ্বেলে হামাগুড়ি দিয়ে গুহার ভেতরে ঢুকলাম। অস্বীকার করবো না, বেশ ভয় ভয় করছিল। যে গুহার নাম শুনলে রেড ইন্ডিয়ানদের ভয়ে মুখ শুকিয়ে যায়, সেই গুহায় একা একটা মাত্র পিস্তল সম্বল করে ঢুকছি। অন্ধকার একটু সয়ে আসতে টর্চের আলোয় দেখলাম একটু দূরে একটা পাথরের বেদীমতো। বেদীর ওপর একটা বাসমতো কী যেন। একটা মৃদু খস্থস্ শব্দ হতে ওপরের পাথুরে দেয়ালে টর্চের আলো ফেললাম।
মুহূর্তে ভয়ে আমি হিম হয়ে গেলাম। পাথুরে দেয়াল জুড়ে থিকথিক করছে কালো বিছে। এখানকার সাংঘাতিক পাহাড়ী বিছেগুলোর শরীর কালো লোমে ঢাকা। তীব্র বিষ এদের। একটা বিছের কামড়ে যদি মৃত্যু নাও হয়, শরীরের যে জায়গায় কামড়াবে সে জায়গাটা চিরদিনের মতো অসাড় হয়ে যাবে। দুটো বিছে কামড়ালেই মৃত্যু অবধারিত। বিছেগুলোর গায়ে টর্চের আলো পড়তে ওগুলো নড়াচড়া করছিল। তাতেই মৃদু খস্থস্ শব্দ হচ্ছিল।
আমি আর এগোলাম না। গুহার দু’পাশে আলো ফেললাম। দু’পাশের পাথুরে দেয়ালেও কালো কালো অসংখ্য লোমশ বিছে বসে আছে। একটু দূরেই কয়েকটা মানুষের কঙ্কাল। তার মানে এই গুহায় ঢুকে কেউ জীবন নিয়ে ফিরে যেতে পারেনি। গৃহা থেকে বেরিয়ে এলাম। বাইরের তীব্র রোদে চোখ দুটো জ্বালা করে উঠল। ফিরে এলাম রেড ইন্ডিয়ানদের গ্রামে যেখানে আমি আস্তানা নিয়েছিলাম। একটু পরেই সেই পথপ্রদর্শক রেড ইণ্ডিয়ান যুবকটি এল। ও তো আমাকে জীবন্ত দেখে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইল। আমি আগেই ওকে বলে রেখেছিলাম, আমার মৃত্যুগুহায় যাওয়ার কথা ও যেন কাউকে না বলে। ও ইঙ্গিতে জানাল ও এই কথা কাউকে বলেনি। রিচার্ড থামল। ব্লাসকো গলা চড়িয়ে বলল-থেমো না। পড়ে যাও।
– পরদিনই কুজকো গেলাম। অনেক খুঁজে খুঁজে একটা চীনা লোকের চামড়ার দোকান পেলাম। তাকে দিয়ে সারা শরীর মাথা ঢাকা পড়ে এরকম একটা চামড়ার পোশাক করালাম। চীনা লোকটা বলল-এই পোশাক দিয়ে কী হবে? বললাম- কালো বাঘ শিকার করতে যাবো। সেই পোশাক বাক্সে ভরে নিয়ে এলাম চিকামো উপত্যকায়।
সোনার শিকল pdf ডাউনলোড করুন
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.