তারাশঙ্কর স্মারকগ্রন্থ পিডিএফ ডাউনলোড লিংক। Tarashankar Smarakgrantha pdf download link.
Tarashankar Smarakgrantha pdf সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
নামঃ Tarashankar Smarakgrantha pdf
লেখকঃ তারাশঙ্কর
সাইজঃ ১৭.৮৮ এমবি
পৃষ্ঠাঃ ২০৬
ধরণঃ জীবনী
Tarashankar Smarakgrantha pdf সম্পাদকীয়
বাংলা কথাসাহিত্যে তৃণমূল থেকে শীর্ষদেশ পর্যন্ত সর্বপ্রান্তীয় জীবনস্বরূপ যাঁর রচনায় আন্তরিকতা ও নান্দনিকতার যুগল-মিলনে শিল্পেশ্বর্য লাভ করেছে, তিনি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। একবিংশ শতাব্দীর উষালোকে দাঁড়িয়ে আজ এ-কথা বলা বাহুল্য হবে না যে, কালের মীমাংসায় উত্তীর্ণ হয়েই তারাশঙ্কর সেই সব অভিজাতদের নামের পাশে উজ্জ্বলিত, যাবা কালজয়ী মহিমায় অভিষিক্ত।
তারাশঙ্করের বিশাল ব্যাপ্তিকে ক্ষুদ্র সম্পাদকীয়-দর্পণে প্রতিস্থাপন করা দুরূহ। অনুমান কবি–এই শতাব্দীতে বাঙালি কথাশিল্পীদের মধ্যে তারাশঙ্কবই হবেন প্রধানতম ব্যক্তি যাব বিশাল সাহিত্যভাণ্ডারের মণিমুক্তো নান্দনিকতা-স্পর্শী সাহিত্যগবেষণায় নতুন তাৎপর্যে ও ব্যঞ্জনায় উন্মোচিত হতে থাকবে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, বাংলা দেশে সমাজবিদ্যা তথা অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব-নৃতত্ত্ব, বাষ্ট্র ও রাজনীতি শাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব, ভাষাবিজ্ঞান, লোকসংস্কৃতি এবং ভাবততত্ত্ব ও ইতিহাস-চর্চায় তারাশঙ্করসাহিত্য অন্যতম জ্ঞানকোষ বা উপকরণের আকররূপে বিবেচিত হবে। সমগ্র তারাশঙ্কর সতত আবিষ্কারযোগ্য এক মহার্ণব—এই অনুধাবনের যাথার্থ্য তারাশঙ্কর-প্রসঙ্গীয় সাম্প্রতিক সাহিত্যগবেষণাতে লভ্য।
তারাশঙ্কর একাধারে শিল্পী এবং অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। ভারতীয় স্তরবহুল সমাজবিন্যাসের সর্বপ্রান্তীয় স্তর-পরম্পরা তারাশঙ্করেব কথাসাহিত্যে জীবন্ময় । লোকসংস্কৃতি ও পুরাণেব নিগূঢ় মোটিফ ও প্রত্নপ্রতিমার উন্মোচন, ভারতীয় জীবনধারার বিকাশক্রম, সমাজগতির দ্বান্দ্বিকতা, ভাবতীয় রাজনীতির উৎস ও বহুমুখী বিস্তারের জটিল প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ, সর্বোপরি জীবনপ্রত্যয় ও মানবসত্যের প্রতিষ্ঠা তারাশঙ্কব- সাহিত্যের বৈভব।
তারাশঙ্কর-সাহিত্যের গবেষণায় যে-দুটি প্রসঙ্গকে, তাঁর সীমাবদ্ধতার স্মারক হিসেবে দাঁড় করানোর বহুচর্চিত প্রয়াস পরিলক্ষিত—তা হল তাঁর স্ববিরোধী জীবনার্থ এবং শিল্পিত জীবনাংশের স্থানিক পট, যা অঞ্চলপ্রীতির বা আঞ্চলিক সাহিত্যের অভিধায় প্রচারিত। এ দুটি প্রসঙ্গে বহুচর্চিত ভ্রান্তির নিরাকরণ জরুরি। বাংলা সাহিত্যসমালোচনায় সমালোচকের মূল্যেবোধ ও রুচির একনায়কী আধিপত্য নিরঙ্কুশ প্রতিষ্ঠা প্রত্যাশা করে। Tarashankar Smarakgrantha pdf
ফলত, সমালোচকের জীবনদৃষ্টি-বিন্দুর একদেশদর্শী আলোকপ্রক্ষেপণে আলোচিত সাহিত্যকর্মটি প্রতিভাসিত হয়। এতে প্রার্থিত ভাববস্তুর প্রাপ্তিতে সমালোচক যতটুকু উচ্ছ্বসিত হন, অপ্রাপ্তি ততটুকুই তাঁকে নিন্দাবাক্য-বয়নে প্রাণিত করে। এ-কারণেই মতাবলম্বী সমালোচক ও সাহিত্যগবেষকদের সর্বাধিক নিন্দাপীড়ন জীবদ্দশাতেই তারাশঙ্করকে জীর্ণ করতে হয়েছে। যে দুটি প্রসঙ্গ নিয়ে শত- শত পৃষ্ঠার এই কূট তর্ক-বিতর্কের দলিল প্রস্তুত হয়েছে বৃহদর্থে তা তারাশঙ্করের গৌরবৈশ্বর্যেরই অংশ।
কারণ স্ববিরোধিতা তারাশঙ্করের স্বধর্ম এবং সাহিত্যজীবনে তারাশঙ্কর আদ্যন্ত ধর্মচ্যুত হননি কখনও। শ্রেণীচেতনা ও ধর্মবিশ্বাস এবং রাজনীতি- ভাবনা ও সমাজবীক্ষণে তারাশঙ্কর যা, তারই অকপট প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর সাহিত্যে। দ্বান্দ্বিকতা ও স্ববিরোধিতা, বিজ্ঞানবুদ্ধি ও ভাববাদমুখিতা তারাশঙ্করের জীবনবোধের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজেই তারাশঙ্করকে প্রকৃত স্বরূপে বিবেচনা করতে হলে, তাঁর যথার্থ অবস্থান থেকেই তাঁকে পুনরাবিষ্কার করতে হবে। কেননা, বস্তুবাদী ও ভাববাদী বিপরীত দৃষ্টিবিন্দুর মিথস্ক্রিয়ায় তারাশঙ্করের সমাজবোধ সংগঠিত। বিস্ময়করভাবে, তাঁর স্বোপার্জিত এই স্ববিরোধী প্রত্যয়ের একাংশ বিজ্ঞান-নিষ্ঠ, অপরাংশ ভাববাদ-সংলগ্ন।
রাঢ়বঙ্গের জলবায়ু-পরিস্রুত গৈরিক যে ভূমিখণ্ডে শেকড় প্রোথিত করে তারাশঙ্করের মানসবৃক্ষের উত্থান—সেই বীরভূমের পারিবেশিক বাস্তবতা তথা খরদাহ উষরতা আর অজয়-ময়ূরাক্ষী-কোপাই-র দুকূলপ্লাবী মৌসুমী পেলবতার মধ্যেও দ্বিধা বা দ্বৈতরূপের অস্তিত্ব সক্রিয়। বীরভূমের চরমভাবাপন্ন প্রতিবেশেই সম্ভব হয়েছে বিপ্রতীপ সাধনমার্গ শাক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মমতের অবাধ বিস্তার। তারাশঙ্করের স্বগৃহেও ছিলো পরস্পরবিরোধী ‘একাল ও সেকাল’-রূপী দুই জীবনধারার সহাবস্থান। পিতা ও পিসিমা তারাশঙ্করের ‘সেকালে’র আদর্শ-উৎস, আর ‘একালে’র জীবনধর্মের প্রতিভূ জননী প্রভাবতী।
গ্রিকদেবতা জেনাসের সম্মুখ ও পশ্চাতের সম্পূর্ণ বিপরীত দুই মুখ-এর আদলে না-হলেও ‘সেকাল আর একালে’র সন্ধিক্ষণের দ্বন্দ্বময় যুগপরিবেশ এবং এর সপ্রাণ প্রভাবকে তারাশঙ্কর মা-বাবার সম্মিলিত ‘অর্ধনারীশ্বর মূর্তি’র রূপকে চিহ্নিত করতে দ্বিধান্বিত হননি। এ-কারণেই কালান্তর-স্পৃষ্ট সমাজের বিপর্যস্ত পক্ষের উত্তরসুরি হিসেবে আত্মশ্রেণীর বিপর্যয়কে, পরাভূতের আত্নজ হতাশ্বাসকে গোপন করার উৎকট প্রয়াস নেই তাঁর রচনায় । অমোঘ বলেই নতুন কালের অভ্যুদয় তাঁর কথাসাহিত্যে দীর্ণ বেদনায় সম্ভাষিত। এই দ্বান্দ্বিকতা ও স্ববিরোধিতার কারণেই তাঁর কালজয়ী রচনাগুলি নান্দনিকতা ও জীবনময়তায় উত্তীর্ণ ।
১৯২৯-১৯৭১ সময়পর্বে তারাশঙ্করের সাহিত্যজীবনের উন্মেষবিকাশ ও পরিণতি । প্রারম্ভ-পর্যায়েই নির্ণীত হয়ে গিয়েছিল তাঁর সুচিহ্নিত যাত্রাপথ ; সাহিত্যসাধনার মাধ্যমে দেশসেবার প্রেরণা এবং ঔপনিবেশিক ভারতের শৃঙ্খলমুক্তির আকাঙ্ক্ষাই ছিল তাঁর যাত্রাপথের পাথেয়। ১৯৪৭ সালের আগস্ট ১৫, একাংশ-ভারতের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে জীবনের মধ্যস্তরেই পূর্ণ হয়ে যায় তাঁর আবাল্য-লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তাঁর জীবনের এ-এক সংকটকাল; একদিকে স্বপ্ন বাস্তবায়নের অনির্বচনীয় আনন্দ-উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে স্বপ্নহীনতার জগতে আকস্মিক অনুপ্রবেশের বিহ্বলতা!
এই দুইয়ের মর্মান্তিক- পীড়নে ক্ষত-বিক্ষত তারাশঙ্কর মৃত্যু-কামনাও করেছেন আন্তরিকভাবে! স্বপ্ন- প্রত্যাশাহীন মানুষ বাঁচতে পারে না, স্বাধীনতা-প্রাপ্তিতে চরিতার্থ তারাশঙ্কর বেঁচে থাকবেন কী নিয়ে? এই জিজ্ঞাসা-জটিল মনোসংকটই সম্ভব করেছে তারাশঙ্কর – সাহিত্যের অনিবার্য পর্বান্তর। ফলত, ১৯২৯-১৯৪৭ এবং ১৯৪৮-১৯৭১ এই দুই কালপর্বে বিভাজিত হয়ে গেছে তারাশঙ্করের সুদীর্ঘ সাহিত্যজীবন।
যিনি ১৯৪৭ সনে মৃত্যুকামনা করলেন স্বপ্নপূরণের বিহ্বলতায় তিনিই শেষাবধি সাহিত্যজীবনে সক্রিয় থাকলেন পরবর্তী চব্বিশ বছর! দ্বিতীয় পর্বের তারাশঙ্কর প্রথম পর্বের তুলনায় বাস্তবিক কারণেই নিষ্প্রভ হয়ে রইলেন। সমকালের উত্তাপ থেকে নিজেকে আড়াল করে তিনি ইতিহাস ও নিকট রাজনৈতিক-অতীতের পুনরাবৃত্তিতে নিমগ্ন হলেন; কড়চা-কথকতা, কথা-উপকথা-কাহিনীর বিমিশ্র বাস্তবকে রোম্যান্সের পরিচর্যায় শিল্পরূপ দিতে প্রয়াসী হলেন। শাসকদলের সান্নিধ্য, নিম্ন-উচ্চ আইনসভার মনোনীত সদস্যপদ, সর্বভারতীয় সরকারি সাহিত্যিক মুখপাত্রের গৌরব-আনন্দ তাঁকে স্বাধীনতার অনুষঙ্গে প্রাপ্ত দারিদ্র্য, বেকারত্ব আর বাস্তুসমস্যার সপ্রাণ সমকাল থেকে নিরাপদ-নিশ্চিত দূরত্বে স্থাপন করে তৃপ্ত করল।
Tarashankar Smarakgrantha pdf review
এই পর্বে আরোগ্য নিকেতন, কীর্তিহাটের কড়চা কিংবা অরণ্য-বহ্নি-র মতো তারাশঙ্করীয় সামর্থ্যের বিরলদৃষ্ট প্রকাশ ঘটলেও, আশুতোষ-উপাখ্যানের ‘কথক’ পরিচয়ই এ-পর্বে তাঁর স্বোপার্জন। তবু, কেবল পর্ব-বিভাজনের নিরিখে তারাশঙ্কর- বিচার খণ্ডিত হতে বাধ্য। তাঁর অখণ্ড সাহিত্যিক-জীবনের পরিপ্রেক্ষণীতে বিচার করলে দেখা যাবে——তারাশঙ্কর এমন বেশ কিছু অত্যুজ্জ্বল গল্প-উপন্যাস সৃজন করেছেন, যা তাঁকে মহৎ শিল্পস্রষ্টা ও অণুসূক্ষ্ম জীবনদ্রষ্টার অসামান্য গৌরবে অভিষিক্ত করেছে। কালের বিসর্পিল গতিভঙ্গির এবং সমাজের রূপ-রূপান্তর ও মানুষের শ্রেণীগত বিবর্তনের শিল্পসাক্ষ্য সৃজনে তাঁর কালজয়ী প্রতিষ্ঠা তর্কাতীত ও অবিসংবাদিত।
তাঁর জন্মোত্তর শতবর্ষে, আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলির নিদর্শনরূপে এই স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হল।
Tarashankar Smarakgrantha pdf ডাউনলোড লিংক
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.