অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এর নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে pdf ডাউনলোড করুন। দেশভাগজনিত বহু সমস্যার অনবদ্য মানবিক দলিল নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে। পথের পাঁচালীর পর নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে বাংলা সাহিত্যের ধারাকে মূল থেকে সরাতে সক্ষম হয়েছে যা ছিন্নভিন্ন দেশভাগের স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে।। Nilkantha Pakhir Khoje pdf writen by Atin Bandyopadhyay
নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে Nilkantha Pakhir Khoje pdf নমুনাঃ
সোনালী বালির নদীর চরে রোদ হেলে পড়েছে। ঈশম শেখ ছইয়ের নিচে বসে তামাক টানছে। হেমন্তের বিকেল। নদীর পাড় ধরে কিছু গ্রামের মানুষ হাট করে ফিরছে। দূরে দূরে সব গ্রাম মাঠ দেখা যাচ্ছে। তরমুজের লতা এখন আকাশমুখো। তামাক টানতে টানতে ঈশম সব দেখছিল। কিছু ফড়িং উড়ছে বাতাসে। সোনালী ধানের গন্ধ মাঠময়। অঘ্রানের এই শেষ দিনগুলিতে জল নামছে খাল-বিল থেকে। জল নেমে নদীতে এসে পড়ছে। এই জল নামার শব্দ ওর কানে আসছে। সূর্য নেমে গেছে মাঠের ওপারে।
বটের ছায়া বালির চর ঢেকে দিয়েছে। পাশে কিছু জলাজমি। ঠাণ্ডা পড়েছে। মাছেরা এখন আর শীতের জন্য তেমন জলে নড়ছে না। শুধু কিছু সোনাপোকার শব্দ। ওরা ধানখেতে উড়ছিল । আর কিছু পাখির ছায়া জলে। দক্ষিণের মাঠ থেকে ওরা ক্রমে সব নেমে আসছে। এ সময় একদল মানুষ গ্রামের সড়ক থেকে নেমে এদিকে আসছিল – ওরা যেন কি বলাবলি করছে। যেন এক মানুষ জন্ম নিচ্ছে এই সংসারে, এখন এক খবর, ঠাকুরবাড়ির ধনকর্তার আঘুনের শেষ বেলাতে ছেলে হয়েছে।
Nilkantha Pakhir Khoje pdf
ঈশম শেষ কথাটা শুনেই হুঁকোটা ছইয়ের বাতায় ঝুলিয়ে রাখল। কলকে উপুড় করে দিল। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে বাইরে বের হল। উপরে আকাশ নিচে এই তরমুজের জমি আর সামনে সোনাল। বালির নদী। জল, স্ফটিক জলের মতো। ঈশম এই ছায়াঘন পৃথিবীতে পশ্চিমমুখো হয়ে দাঁড়াল। বলল, সোভান আল্লা। শেষে আর সে দাঁড়াল না। নদীর পাড় অতিক্রম করে সড়ক ধরে হাঁটতে থাকল। ধনকর্তার পোলা হইছে—বড় আনন্দ, বড় আনন্দ। সব খুদার মেহেরবানি। সড়কের দু’ধারে ধান, শুধু ধান—কত দূরে এইসব ধানের জমি চলে গেছে। ঈশম চোখ তুলে দেখল সব!
বিকেলের এইসব বিচিত্র রঙ দেখতে দেখতে তার মনে হল, পাশাপাশি এইসব গ্রাম—তার কত চেনা, কতকালের মেমান সব -নিচে খাল, মাছেরা জলে লাফাচ্ছে। সে সড়কের একধারে গামছা পাতল। নিচে ঘাস, গামছা ঘাসের শিশিরে ভিজে উঠছে। সে এসব লক্ষ করল না। সে দু’হাঁটু ভেঙে বসল। খালের জল নিয়ে অজু করল। সে দাড়িতে হাত বুলাল ক’বার। মাটিতে পর পর ক’বার মাথা ঠেকিয়ে আকাশ দেখতে দেখতে কেমন তন্ময় হয়ে গেল। অঘ্রানের শেষ বেলায় ঈশম নামাজ পড়ছে। সূর্য অস্ত যাচ্ছে বলে ওর ছায়াটা কত দূরে চলে গেছে। খালের জল কাপছিল। এর ছায়াটা জলে কাঁপছে। কিছু হলদে মতো রঙের ফড়িং উড়ছে মাথার উপর। সূর্যের সোনালী রঙে ওর মুখ আশ্চর্যরকমের লাল দেখাচ্ছিল।
Nilkantha Pakhir Khoje pdf
যেন কোন ফেরেস্তার অলৌকিক আলো এই মানুষের মুখে এসে পড়েছে। সে নামাজ শেষ করে হাঁটতে থাকল। এবং পথে যাকে দেখল তাকেই বলল, আঘুনের শেষ ফজরে ধনকর্তার পোলা হইছে। ওকে দেখে মনে হয় তরমুজ খেত থেকে অথবা সোনালী বালির চর থেকে একটি খবর সকলকে দেবার জন্য সে উঠে এসেছে। সে সড়ক অতিক্রম করে সুপারি বাগানে ঢুকে গেল। বৈঠকখানাতে লোকের ভিড়। বাইরে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। সে প্রায় সকলকেই আদাব দিল এবং ভিতরে ঢুকে নিজের জায়গাটিতে বসে তামাক সাজতে থাকল।
সোনালী বালির নদীতে সূর্য ডুবছে। কচ্ছপেরা ধানগাছের অন্ধকারে ঘাপটি মেরে আছে। এইসব কচ্ছপ এখন একটু শক্তমতো মাটি পেলেই পাড়ে উঠে ডিম পাড়তে শুরু করবে। অনেকগুলি শেয়াল ডাকল টোডারবাগের মাঠে। একটা দুটো জোনাকি জ্বলল জলার ধারে। জোনাকিরা অন্ধকারে ডানা মেলে উড়তে থাকল। পাখিদের শেষ দলটা গ্রামের উপর দিয়ে উড়ে গেল। নির্জন এবং নিরিবিলি এইসব গ্রাম মাঠ । অন্ধকারেও টের পাওয়া যায় মাথার উপর দিয়ে পাখি উড়ে যাচ্ছে। সে জানে ওরা কোথায় যায়। ওরা হাসান পীরের দরগাতে যায়। পীরের দ্রগায় ওরা রাত যাপন করে। শীতের পাহাড় নেমে এলে ওরা তখন দক্ষিণের বিলে চলে যাবে। ঈশম এবার উঠে পড়ল। ঈশম ডাকল, ঠাইনদি আমি আইছি।
দরজার বাইরে এসে ছোটকর্তা দাঁড়ালেন। —ঈশম আইলি?
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.