লোকটা আগে আগে যাচ্ছিল – অভিজ্ঞান রায় চৌধুরী Lokta Age Age Jachchilo by Abhigyan Roy Choudhury

লোকটা আগে আগে যাচ্ছিল - অভিজ্ঞান রায় চৌধুরী Lokta Age Age Jachchilo by Abhigyan Roy Choudhury

Lokta Age Age Jachchilo লোকটা আগে আগে যাচ্ছিল অভিজ্ঞান রায় চৌধুরী পড়ুন।

লোকটা আগে আগে যাচ্ছিল - অভিজ্ঞান রায় চৌধুরী Lokta Age Age Jachchilo by Abhigyan Roy Choudhury

লোকটা আগে আগে যাচ্ছিল Lokta Age Age Jachchilo অ ভিজ্ঞা ন রা য় চৌ ধু রী

লোকটা আগে আগে যাচ্ছিল। সতর্ক পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছিল রাস্তার আলোআঁধারির মধ্যে দিয়ে লুকোচুরি খেলতে খেলতে। আমি লোকটার পিছু পিছু এগোচ্ছিলাম। মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে লোকটা চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাচ্ছিল। তারপরে আবার খুঁজে পাচ্ছিলাম। এমন একটা চেহারা যে আলাদা করে চেনার উপায় নেই, ভিড়ের মধ্যে খুব সহজেই মিশে যায়। Lokta Age Age Jachchilo

প্রশ্ন উঠতে পারে আমি কেন লোকটাকে ফলো করছিলাম!
আসলে লোকটার মধ্যে এমন কিছু ছিল যে ওর পিছু নিতে বাধ্য হচ্ছিলাম। লোকটার হাঁটাচলা যেন আমার পূর্বপরিচিত। কী করবে তা যেন আমার জানা। পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম যে কিছু একটা উদ্দেশ্য নিয়ে লোকটা এগিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল লুকিয়ে লুকিয়ে যেন কাউকে ফলো করছে। মন বলছিল একটা সাংঘাতিক কিছু হতে চলেছে। কিছুক্ষণ ফলো করার পরে উদ্দেশ্যটা আরও পরিষ্কার হল। লোকটার থেকে কিছুটা দূরে একটা ক্ষয়াটে চেহারার লম্বা লোক ধীরেসুস্থে বিড়ি টানতে টানতে হেঁটে যাচ্ছে। পরনে সস্তার প্যান্ট, রংচঙে জামা। এই লোকটাকেই যেন ফলো করছে। আগের লোকটা যখন দাঁড়াচ্ছে, আমার সামনের লোকটাও ঠিক তখনই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

দমদম রোড। রাত হয়েছে। তবে লোকের ভিড় তাতে কমেনি। একটা ছোট চপ-কাটলেটের হোটেলের সামনে কমবয়সি ছেলেমেয়েদের জটলা। লোকটা সেই ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেল। আমিও সবার অলক্ষে ওদের পিছু নিলাম। Lokta Age Age Jachchilo
সকালে মাছের বাজার বসে এখানে। এখনও একটা আঁশটে গন্ধ এখানে ছড়িয়ে আছে। ডানদিকে একটা মাংসের দোকান। সেখানে বেশ ভিড়। কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি, সামনের লোকটা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। সব কিছুর মধ্যেও লক্ষ্য হারাচ্ছে না ।
কিছুক্ষণ বাদে বড় রাস্তা ছেড়ে একটা মিষ্টির দোকানের পাশের রাস্তায় লোকটা ঢুকল।

এ রাস্তায় আলো একটু কম। লোক চলাচলও অনেক কম। দু-একটা কুকুর এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুপাশে বাড়ি। বেশিরভাগ বাড়িতে এখন আর আলো জ্বলছে না। রাত অনেক হয়ে গেছে। শহরের গতি এখানে যেন একটু শ্লথ হয়ে এসেছে। ঝিমিয়ে পড়েছে এ পাড়া। Lokta Age Age Jachchilo

সামনের প্রথম লোকটা এখনও নির্বিকার ভাবে হেঁটে চলেছে। সে এখনও জানে না যে তার পিছু পিছু আরও দুজন আসছে। তার পিছনে প্রায় কুড়ি হাত দূরে ওই লোকটা, যাকে আবার আমি ফলো করছি। কেন জানি না মনে হচ্ছে আমি সামনের প্রথম লোকটাকেও চিনি। একইসঙ্গে কী হতে চলেছে তাও জানি। যেটা ভাবছি, ঠিক সেটাই কি হতে চলেছে?
সামনের প্রথম লোকটা একটা ছোট পানের দোকানে পান খেতে দাঁড়াল। সামনের লোকটাও সঙ্গে সঙ্গে একটা বন্ধ দোকানের ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। প্রথম লোকটা যখন রাস্তায় পানের পিক ফেলে এগোল, ঠিক তখনই আবার আমার সামনের লোকটাকে দেখতে পেলাম।

আরও কিছু দূরে হাঁটার পরে ডানদিকে একটা আধবোজা ডোবা পড়ল। তার পাশে ডাঁই করে ফেলা নোংরা-আবর্জনা। সেটা পেরোনোর পরেই রাস্তা আরও নির্জন হয়ে গেল। ঠিক তখনই যে জিনিসটা আশঙ্কা করেছিলাম, ঠিক সেটাই হল। হঠাৎ করে আমার সামনের লোকটা খানিকটা ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল প্রথম লোকটার উপরে। তারপরে ছোরার মতো ধারালো কিছু একটা দিয়ে বারবার কোপাতে শুরু করল। সামনের লোকটা প্রতিরোধ করার সময়ও পেল না। রাস্তায় পড়ে গেল। খুনি তখনও রক্তাক্ত দেহটাকে কী যেন অজানা আক্রোশে ছোরা দিয়ে কোপাতে লাগল।

আমার এগিয়ে গিয়ে কিছু করার সাহস হল না। অবশ্য কেন জানি না, মনে হচ্ছিল আমিও যেন সেটা দেখে আনন্দ পাচ্ছি। মনের গভীরে কী একটা অজানা কারণে তৃপ্তি অনুভব করছি। মনে হচ্ছে এটাই ঠিক। এই লোকটার ঠিক এরকম হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এরকম অন্যায়কে সমর্থন করা কি উচিত? না এগিয়ে গিয়ে লোকটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা উচিত? Lokta Age Age Jachchilo

কী করব ভাবছি, ঠিক এমন সময় খুনি হঠাৎ পিছন ঘুরে তাকাল। আর তখনই আমার সঙ্গে চোখাচোখি হল।
আমি ওর থেকে কুড়ি হাত দূরে। ওর সঙ্গে চোখাচোখি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে শিহরনে আমার শরীর যেন অবশ হয়ে গেল।

খুনিকে আমি চিনি। খুব ভালো করে চিনি। আমি কিছুক্ষণ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপরেই বুঝতে পারলাম আমার এখন কী করা উচিত। নিজেকে বাঁচানো।
ছুট দিলাম। দিকভ্রান্তের মতো ছুটতে শুরু করলাম। পাড়ার একটা কুকুর আমাকে দেখে চিৎকার করে উঠল। আমাকে লক্ষ্য করে খানিকটা ছুটেও এল। অন্য সময় হলে সে কুকুরে ভয় পেতাম। কিন্তু এখন ভাবার সময় নেই। ছুটতে থাকলাম। স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম আমার পিছন পিছন কেউ ছুটে আসছে। বেশ খানিকটা দূরে এসে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম। কেউ নেই।

কলিং বেল শুনেই আন্দাজ করছিলাম বাইরে কে আসতে পারে। দরজা খুলে দেখলাম অনুমান ঠিক । বাইরে রঞ্জন দাঁড়িয়ে। চুল কমে গিয়ে মাথার সামনের দিকটায় খানিকটা টাক দেখা যাচ্ছে। মুখে বয়সের ছাপ পড়েছে। কিন্তু এখনও দেখেই বোঝা যায় ও যথেষ্ট ফিট। নিয়মিত শরীরচর্চা করা মেদহীন চেহারা।
আমাকে দেখে খানিকক্ষণ যেন ওর মুখ থেকে কোনো কথা বেরোল না। তারপর বলে উঠল—এ কী করেছিস চেহারা? মনে হচ্ছে যেন গত দশ বছরে তোর বয়স বছর কুড়ি বেড়ে গেছে। Lokta Age Age Jachchilo

আমি আশপাশ দেখে ওকে ঘরে ঢুকে আসতে বললাম। Lokta Age Age Jachchilo
যেভাবে জোরে জোরে বলছিল, তাতে আমার আশেপাশের ফ্ল্যাটের লোকেরা অবাক হতে পারে। এমনিতেও আমার ফ্ল্যাটে কেউ আসে না। চাই না সবাই ওকে লক্ষ করুক।
আমার মুখের মধ্যে ভীতির ছাপটা ও বোধহয় লক্ষ করেছিল। বলে উঠল—কী ব্যাপার? ভয় পেয়েছিস মনে হচ্ছে? Lokta Age Age Jachchilo

তারপর সোফায় বসে চারদিকে দেখে বলে উঠল—এ কী হাল করেছিস নিজের? ঘরের অবস্থাও তো তথৈবচ!—বলে ঘরের মেঝের উপরে এককোণে পড়ে থাকা স্তূপাকার বই আর ফেলে রাখা জামাকাপড়ের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলে উঠল— কাজের লোক নেই?
–না, কাজের লোক রাখিনি। একাই থাকি। যা দরকার পড়ে, নিজেই করে নিই। নিজের কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকি। Lokta Age Age Jachchilo

সে তো তোকে দেখেই বুঝতে পারছি। দশ বছরে অনেক কিছু পালটে গেছে। আগে সবসময় কীরকম ফিটফাট থাকতিস। এমন কোনোদিন দেখিনি যেদিন তুই অফিসে সুট-টাই পরিসনি ! আর এখন?—একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও ফের বলে উঠল; তা একটু চা হবে কি?
—হ্যাঁ, অবশ্যই। দিচ্ছি। গ্রিন টি তো? Lokta Age Age Jachchilo

ও সায় দিল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ওর জন্য গ্রিন টি করে নিয়ে এলাম। Lokta Age Age Jachchilo
ও তখন ঘুরে ঘুরে ঘরের চেহারা দেখছিল। চারদিকে বিশৃঙ্খলা, হয়তো কিছুটা দৈন্য। সেটা অনুভব করেই ফের সোফায় এসে বসে চায়ে চুমুক দিয়ে ও বলে উঠল—আর কতদিন এভাবে অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকবি অতীন! অনেক বছর কেটে গেছে। এবার তো নর্মাল লাইফে ফিরে আয়। তোর মতো একজন ব্রিলিয়ান্ট সায়েন্টিস্ট-এর কেরিয়ার এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে না। তুই যে মেমারি এনহান্সারটার উপরে কাজ করছিলি, ওটার রাইটস কিন্তু আমার চাই। ফোনে বলছিলি যে তার কাজ নাকি শেষের দিকে। ডিটেলস বল।
–আগে তো বোস, তার পরে বলছি।

ও বসার পরে ফের বলে উঠলাম— তুইও তো অনেক বছর বাদে এলি। সে দিনের পরে আর কোনো দেখা সাক্ষাৎ নেই।
—সত্যি বলছি অতীন, ওই দিনের ঘটনাটা এমনভাবে আমার ভেতর দিয়ে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল, তারপরে আর এখানে আসার সাহস পাইনি। দেখতে দেখতে প্রায় দশ বছর হয়ে গেল, তাই না! তা তুই মেমারি এনহান্সারটার উপরে ফোনে কী বলছিলি, সেটা বল। Lokta Age Age Jachchilo

—হ্যাঁ, বলছি। তুই তো জানিস এ বিষয়ে আমার বেশ কিছু মৌলিক গবেষণা ছিল। কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু দশ বছর আগের ওই ঘটনার পরে আমি চাকরি ছেড়ে দিই। স্বাভাবিক হয়ে উঠতে বেশ কিছু বছর লেগে যায়। দুবছর আগে আবার কাজ শুরু করি। আসলে মনের গভীরে কোথায় যে কী স্মৃতি কীভাবে লুকিয়ে থাকে সেটা তো এখনও আমাদের কাছে ক্লিয়ার নয়। কিন্তু অনেক কিছুই থাকে, যার হৃদিশ আমরা পাই না। ধর, তুই তোর কোনো বিশেষ দিনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত মনে করতে চাস। সেটাই যদি মনের গভীর থেকে তোর সামনে তুলে আনা হয়, তাহলে কীরকম হয়? ধরে নে সেরকমই কিছু একটা আবিষ্কার করেছি।
সে বিশেষ দিনটা কি তুই তোর ইচ্ছেমতো নির্বাচন করতে পারবি?

–না, সেখানেই একটু সমস্যা। ওটা নিয়ন্ত্রণ করতে আমি এখনও শিখিনি। কিন্তু যে ড্রাগটা আবিষ্কার করেছি, তাতে হঠাৎ হঠাৎ করে কোনো কোনো দিনের প্রত্যেকটা ঘটনা চোখের সামনে স্পষ্টভাবে ছবির মতো ফুটে ওঠে। যেসব ঘটনা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিলি, সেটাই মনে পড়ে যাবে। বুঝতেই পারছিস এ আবিষ্কার কতটা গুরুত্বপূর্ণ!
-কার উপরে পরীক্ষা করেছিস?
—নিজের উপরেই। তবে এ ধরনের ড্রাগের উপরে অনেক ক্লিনিকাল ট্রায়াল করতে হবে।
—হ্যাঁ, সে তো করতেই হবে। সেটা তো তুই নিজে করতে পারবি না। আমাদের মতো বড় সংস্থার সাহায্য লাগবে। তা তোর উপরে কিছু সাইড এফেক্ট হয়নি?
একদম হয়নি, তা বলতে পারি না। সে কথায় পরে আসছি। তবে বড় কিছু অসুবিধে যে হয়নি, সেটা তো দেখতেই পাচ্ছিস।

এতটুকু শুনে বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠল রঞ্জন, আমার ওই ড্রাগটা চাই। তোর যা টাকা লাগে আমি দেব। কিন্তু রাইটস আমার চাই। দিতেই হবে। আর কাউকে জানাসনি তো? ওয়ার্ক উইথ আস। ইউ উইল বি এ মিলিয়নেয়ার এগেন। Lokta Age Age Jachchilo
আমি হাসলাম। এটাই রঞ্জনের স্বভাব। খুব অ্যাগ্রেসিভ। যেটা ও চাইবে, সেটা ও জোর করে হাসিল করেই নেবে। যেন তেন প্রকারণে। বিবেক, আদর্শ, ভালোবাসা- এসব কথার কোনো অর্থ নেই ওর কাছে।

বলে উঠলাম—দাঁড়া, সে প্রসঙ্গে আসছি। তার আগে তুই জিজ্ঞেস করছিলি না যে আমি ভয়ে ভয়ে আছি কেন, সে কথাটা একটু বলে নি।
—হ্যাঁ, সেটাই তো শোনা হল না। মনে হল যেন ভয় পেয়েছিস। কী জন্য?
—তুই কি শুনেছিস যে কলকাতায় পরপর তিনটে খুন হয়েছে? Lokta Age Age Jachchilo
—হ্যাঁ, শুনেছিলাম। কাগজেও তো বেরিয়েছে। তবে তিনটে না, দুটো সম্ভবত। খুনি যে একজনই সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত। একইরকম ভাবে ছোরা দিয়ে বারবার কোপ মেরে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেরকম তো অনেকই হয়। অনেক খবর পাওয়াও যায় না।

কোথায় হয়েছে জানিস? Lokta Age Age Jachchilo
—কোথায়? কাছাকাছি কোথাও?
—একটা এই পাড়াতেই। এখান থেকে কিছুটা দূরে।
–সো হোয়াট? তার সঙ্গে তোর ভয়ের কী সম্পর্ক?
যে করেছে, তাকে আমি দেখেছি। সেও আমাকে দেখেছে।
—সে কী? নিশ্চিত সে ব্যাপারে? পুলিশকে জানিয়েছিস?

—হ্যাঁ, নিশ্চিত। খুব ভালো করেই দেখেছি। চিনতে আমার ভুল হয়নি। তাকে আমি ভালো করে চিনি। সেজন্যই পুলিশে জানাতে পারিনি। সে বড্ড আপনার।
রঞ্জন একটু পিছিয়ে এসে বসল। ও ভুরু কুঁচকে কিছু যেন ভাবছে। কোটের পকেট থেকে কিউবান সিগারের প্যাকেটটা বার করে একটা সিগার বার করে নিল। লাইটার দিয়ে জ্বালাতে যাচ্ছিল। কী ভেবে আমাকে বলে উঠল—তুই এখন খাস না তো? Lokta Age Age Jachchilo

–না, না, ওসব কবে ছেড়ে দিয়েছি।
সিগারে একটা টান দিয়ে ও সোফায় হেলান দিয়ে বলে উঠল—কতটা নিশ্চিত? কী করে দেখলি?
–আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। সারাদিন ফ্ল্যাটের মধ্যে বন্দি থাকি। রাত হলে একটু বেরিয়ে একবার পাক খেয়ে আসি। সেরকমই বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ মনে হল একজন, তার হাঁটাচলা যেন আমার খুব চেনা। আমার আগে আগে যাচ্ছে। খুব সতর্ক পদচারণ। যেন কিছু করতে চায়। কী মনে হল জানি না। সাবধানে ফলো করলাম ।
—কিন্তু কীভাবে দেখলি খুনটা? Lokta Age Age Jachchilo

বেশ কিছুক্ষণ ফলো করার পরে একটা অন্ধকার গলির মধ্যে আমার সামনেই লোকটা অন্য একটা লোককে ছোরা দিয়ে আক্রমণ করল। বারবার কোপাতে থাকল। অন্য লোকটা চিৎকার করারও সুযোগ পেল না। মাটিতে পড়ে গেল। Lokta Age Age Jachchilo
–তা তুই কী করলি?

—আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ওই ঘাতক তখনই আমার দিকে ফিরল।
–তার মানে সেও তোকে ভালোভাবে দেখেছে? Lokta Age Age Jachchilo
—হ্যাঁ, সেটাই তো ভয়। কিছুটা ফলোও করেছিল। কোনোরকমে পালিয়ে আসি। তবে দেখে থাকলে এ বাড়ি খুঁজে আসাও অসম্ভব নয়। পরের দিন কাগজে খবরটা পড়ি ।
—হুঁ। বুঝতে পারছি কেন তুই ভয় পাচ্ছিস। মেকস এ লট অফ সেন্স নাউ। লোকটাকে তারপরে আর কখনও দেখেছিস?

চুপ করে থাকলাম। সব প্রশ্নের উত্তর সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া যায় না।
উলটে প্রশ্ন করে উঠলাম।—যে তিনজন খুন হয়েছে, তারা কারা জানিস ?
ধুর। কোথায় কে খুন হচ্ছে, আমার পক্ষে অত খবর রাখা সম্ভব নাকি? এখন যা ব্যস্ত থাকি। এই কোম্পানির সিইও হওয়ার পর থেকে কাজের বাইরে নিশ্বাস ফেলারও সময় পাই না। মাঝেমধ্যে মনে হয় না হওয়াই ঠিক ছিল।
—কিন্তু তুই তো এরকমই হতে চাইতিস? Lokta Age Age Jachchilo

—হ্যাঁ, সে হয়তো একসময় চাইতাম। হয়তো একসময় এর জন্যে তোর সঙ্গে আমার বেশ রেষারেষিও ছিল। কিন্তু এখন মনে হয়, জীবনটাকেও একটু সময় দিয়ে উপভোগ করি। তা তুই যা বলছিলি, যারা খুন হয়েছে তাদের ব্যাপারে তুই কিছু জানিস?

বলে উঠলাম—মনে পড়ে সেদিনের কথা?
— কোনদিন?
—ওই যে অ্যাক্সিডেন্টের দিনটা। উলটো দিক থেকে উলটো লেনে চলে আসা একটা ট্রাক আমাদের গাড়িকে ধাক্কা মেরেছিল, মনে আছে? প্রথম যে লোকটা খুন হয়েছিল, সে ছিল তার ড্রাইভার। ওর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল—কী বলছিস? তোর লোকটাকে মনে আছে? Lokta Age Age Jachchilo

-তা থাকবে না? যার জন্য আমার স্ত্রী-কন্যা মারা গেল, আমি গুরুতর অসুস্থ হয়ে ছয় মাস হাসপাতালের ইন্টেন্সিভ কেয়ারে পড়ে থাকলাম, তার কথা আমি ভুলে যাব? লোকটা কয়েক মাস পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায়, আমার পুরো জীবনটা কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তছনছ করে দিয়ে। লোকটার নাম ছিল শ্যামল বাগচী।
–না, না, শ্যামল শর্মা।
—ঠিক বলেছিস। হ্যাঁ, বাগচী নয়, শ্যামল শর্মা। তোরও মনে আছে দেখছি।
–আমার এই লোকের নাম খুব মনে থাকে। চেহারা ভুলে যাই। গুড। ভালোই হয়েছে। ঠিক শাস্তি পেয়েছে। বাকি দুজনকেও তুই চিনিস নাকি?

—হ্যাঁ, না হলে বলছি কী? মজার কথা হল, আর-একজন যে খুন হয়েছে, সে ছিল ওই ট্রাকটার মালিক। কী অদ্ভুত রকম কোইনসিডেন্স!
—বলিস কী রে? কী অদ্ভুত ব্যাপার। ওই ট্রাকটার মালিক! তুই বলছিলি, যে খুন করে তাকে তুই চিনিস। আমিও চিনি নাকি?
—অবশ্যই। তুই খুব ভালো করেই চিনিস। বলছি। আয় আমার সঙ্গে। তার ছবি দেখাচ্ছি।
—এ বাড়িতে তার ছবিও আছে? ওর গলায় এবার অবাক হওয়ার সুর।
—হ্যাঁ, আছে বইকি। দাঁড়া দেখাচ্ছি।

বলে সোজা উঠে দেওয়াল থেকে আমার বিয়ের ছবিটা নামিয়ে এনে দেখিয়ে বলে উঠলাম—যাকে দেখেছি, তাকে ঠিক এরকম দেখতে। ঠিক এরকম। ঠিক আমার মতো।
রঞ্জন যেন চমকে উঠল—কী বলছিস? কী আবোল তাবোল বলছিস? তুই যে বলছিলি, তুই খুনিকে শুধু ফলো করছিলি? তার মানে, তু-তুই?
—হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিলাম। কিন্তু যখন আমার দিকে ফিরে তাকাল, তখনই বুঝলাম সে আমিই । একদমই আমি। আমার মতো নাক, আমার মতো চোখ, আমার মতো চওড়া ভুরু। আমার মতো নাকের পাশে জরুল। ঠিক এরকম। হয়তো ওই ফলো করার অনুভূতিটাই আমার ড্রাগের সাইড এফেক্ট।

রঞ্জন সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলে উঠল—তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? তোর কথা শুনে ঠিক স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
ওর মুখ সম্পূর্ণ বিবর্ণ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন ওর সব রক্ত শুষে নিয়েছে।
ফের বলে উঠল—অতীন, আজ আসি। তুই ডেকেছিলি বলে, ওই ড্রাগটার কথা জানিয়েছিলি বলে এসেছিলাম। কিন্তু অনেক কাজ ফেলে এসেছি। এবারে যেতে হবে।
—যাওয়ার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি?
—হ্যাঁ, বল।

-অনেক সময় অনেক বছর পরেও কিছু কথা মনে পড়ে যায়। বিশেষ করে আমার ওই ড্রাগটা খাওয়ার পর থেকে আমার কাছে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেদিন তুইও তো আমাদের সঙ্গে লোকটা আগে আগে যাচ্ছিল। Lokta Age Age Jachchilo
গাড়িতে কিছুটা পথ ছিলিস। আমরা একসঙ্গে পুরী যাচ্ছিলাম। ইনফ্যাক্ট বেড়াতে যাওয়াটা তোরই প্ল্যান। পথে হঠাৎ তোর একটা ফোন এল। তুই বললি—তোর মামা মারা গেছেন। বাড়ি থেকে তোর মা ফোন করেছিলেন। ঠিক কি না? সেজন্য তুই নেমে পড়লি। বাড়ি ফিরে গেলি।
—হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমার মেজোমামা। সেদিন হঠাৎ মারা যান। এ খবর শোনার পরে তখন কি আর বেড়াতে যাওয়া যায়?

—ঠিক সেজন্য তুই বেঁচে গেলি। কী লাক! তাই না? আমার মনে পড়ে গেল সেদিন যখন মাঝে পথে নেটওয়ার্ক ছিল না, তুই বারবার জিজ্ঞেস করছিলি, আমার ফোনে নেটওয়ার্ক আছে কি না। যেন অপেক্ষা করছিলি ওই ফোনটার জন্য। অপেক্ষায় ছিলিস, তাই না? মনে আছে তুই মাঝেমধ্যে উত্তেজিতও হয়ে পড়ছিলি। গালি দিচ্ছিলি ফোন কোম্পানিকে, নেটওয়ার্ক না থাকার জন্য। অন্য কোনোদিন তো সামনে বসেও সিটবেল্ট পরতিস না, সেদিন কিন্তু পিছনে বসেও সিটবেল্ট পরে ছিলি। হয়তো ভাবছিলি যদি আগেই কিছু হয়ে যায়। যদি ট্রাকটা আগেই এসে ধাক্কা মারে। কি, ঠিক কি না? সব ছবির মতো মনে পড়ে গেল। একেই বলে ডেভিল লাইস ইন দ্য ডিটেলস।—আমি থামলাম।
ওর মুখটা ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

ও তাড়াতাড়ি দরজার দিকে এগিয়ে গেল। Lokta Age Age Jachchilo
আমি ফের বলে উঠলাম—মেমারিটা খুব অদ্ভুত জিনিস। অনেক কিছু আমাদের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই। মনে পড়ে গেলেই অনেক কিছু মিলে যায়। অনেক পাজল সলভ হয়ে যায়।

আমি ওকে লক্ষ্য করে ফের বলে উঠলাম— Lokta Age Age Jachchilo
—তৃতীয় খুনটা কার জানতে চাইলি না? অবশ্য সেটা জানবিই বা কী করে! এখনও তো হয়নি। কিন্তু আমি তাকে ঠিক দেখেছি। তাকে দেখতে ঠিক তোরই মতো। মাথার সামনের দিকে সামান্য টাক। সরু গোঁফ। বড় নাক। বাঁ চোখের পাশে সামান্য কাটা দাগ। হুবহু তোর মতো চেহারা। দেখেছি রক্তাক্ত শরীরে নিচে রাস্তায় পড়ে আছে। আর আমার সামনের সেই লোকটা তখনও ছোরা দিয়ে তার শরীর ফালাফালা করে দিচ্ছে।

হাতের আধপোড়া সিগারটা ঘরের মধ্যে ছুড়ে ফেলে ও দরজা দিয়ে কোনোক্রমে বেরিয়ে গেল। নিচের দিকে ছুটে নেমে গেল সিঁড়ি দিয়ে। লিফটের জন্যও অপেক্ষা করল না। ধুপধাপ শব্দ পেলাম। লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। মাঝেমধ্যে থামছে আর দেখছে আমি পিছু নিচ্ছি কি না। আমি এখন জানি রঞ্জনই ছিল সেদিনের ষড়যন্ত্রের পিছনে প্রধান মাথা। ও-ই টাকা দিয়ে সব কিছু করিয়েছিল। শুধু পজিশনের লোভে। আমার অ্যাক্সিডেন্ট না হলে ও কিছুতেই আমার উপরে যেতে পারত না। আজ ওই কোম্পানির প্রধানও হতে পারত না। Lokta Age Age Jachchilo

ও ভাবছে ও পালিয়ে বেঁচে যাবে। নাহ, অত সহজে না। ঠিক একদিন আসবে যেদিন ওই লোকটা আবার রঞ্জনের পিছু নেবে। আমিও থাকব তার পিছু পিছু। আলো আর ছায়ার মধ্যে দিয়ে ওদের শুধু ফলো করে যাব। আমার জীবনের আলো- আঁধারির মতো সব কিছুর আড়ালে থেকে।
আমার কোনো ভূমিকা থাকবে না। আমার হাতে কিছুই থাকবে না। ছোরাটা থাকবে আমার সামনের লোকটার হাতে। ও-ই সব অপরাধ করবে। আমি শুধু হব নীরব দর্শক। শুধুই নীরব দর্শক। রঞ্জনের মতো। Lokta Age Age Jachchilo

হয়তো আজও এটা করতে পারতাম। কিন্তু না, আমি সেটা চাইনি। আমি চাই ও ভয় পাক। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকুক। চেনা পাড়ার মধ্যে দিয়ে হাঁটার সময়ও ও যেন বারবার পিছনে ঘুরে তাকায়। আর প্রত্যেকবার তখন পিছনে ফিরে ও যেন দেখতে পায় ওর দশ বছর আগের অপরাধকে। Lokta Age Age Jachchilo
আমার সাত বছরের মেয়ে দোয়েল ফিরে আসবে না। আমার স্ত্রী পায়েলও কোনোদিন ফিরে আসবে না। শুধু সঙ্গে আছে কিছু স্মৃতি। কিছু দিন, কিছু মুহূর্ত ।
আমি ওদের ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বুঝতে পারলাম বহৃদিন বাদে ফের কাঁদছি।

Lokta Age Age Jachchilo pdf download link
Download link

Be the first to comment

Leave a Reply