অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় শামুকখোল PDF বইটি অনলাইনে খুজে পেয়েছি এবং অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় Shamukkhol pdf শামুকখোল pdf আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি।
Shamukkhol pdf শামুকখোল pdf নমুনাঃ
অতএব, মৃত্যুকেই সে মনস্থ করল একসময়। জীবনের পীড়ন থেকে মুক্তি পেতে যা কিছু সম্ভাব্য উপায়ের কথা তার স্মরণে এসেছিল, তার মধ্যে, মৃত্যুই ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ এবং মহান। যদিও মৃত্যুকে একমাত্র কল্পনা দ্বারাই অনুভব করা যায়। কেন-না মৃত্যুর আগমন সঙ্কেত কখনও পৌঁছলেও সেই মুহূর্তে মানুষকে আদ্যন্ত যা আলোড়িত করে তার নাম জীবন। এমনকী মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণিসমূহ, একেবারে কীটাণুকীট পর্যন্ত এই বোধের অন্তর্গত। সকলকেই ত্রস্ত করে জীবনের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা।
দেবী মা – ত্রিদিবেন্দ্র নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় Devi Maa by Tridibendra Narayan Chattapadhyay
তবু, মৃত্যুকেই মনে হয়েছিল তার, এক নিরপেক্ষ আশ্রয়। কিংবা, হতে পারে, মৃত্যু এক নারী, যার ক্রোড়ে কোনও পক্ষাবলম্বন থাকে না, থাকে না কোনও প্রতারণা। এমনটা ভেবেছিল সে। কিংবা অনুভব করেছিল অন্য অনেকের মতো, যারা জীবন সম্পর্কে ক্রমশ হয়ে ওঠে নির্মোহ এবং মৃত্যুর ওপর আস্থাশীল।
জীবন পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই, অন্তত বয়ঃক্রমের প্রাকৃতিক সম্পূর্ণতার আগেই, মৃত্যুকে আরাধ্য করাই মনস্থ করে যারা, তাদের জীবনের ঘটনাবলির মধ্যে গুরুত্বে ভারসাম্যহীনতা লক্ষ করা যায়। যা কিছুই ঘটল, কোনও কিছুই, হৃদয়ে ঘটিয়ে দিল অসহায় উন্মাদ ধাক্কা—একজন তার সম্পর্কে ভাবতে পারে–হয়, এমন হয়, জীবন মানেই সুখ-দুঃখের গলাগলি, আনন্দ ও যন্ত্রণার সহাবস্থান। অতএব, থামা যাবে না, চলতে হবে। আর একজন ভাবতে পারে বিপরীত।
ভাবতে পারে, এ-দুঃখ সহনীয় নয়। ভাবতে পারে, এমনটা ঘটলে জীবন থেমে থাকে নিরবধিকাল। প্রাণ গড়িয়ে যায় মৃত্যুর দিকে। এবং তারা মৃত্যুর আরাধনা করে। অতএব, দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে ঘটনার লঘুত্ব বা গুরুত্ব। দর্শনের ওপর নির্ভর করে— ঘটনার অভিঘাতে, পরবর্তী পর্যায় হিসেবে জীবন আরাধ্য হবে, না মৃত্যু।
মৃত্যুকে মনস্থ করার নেপথ্য কারণ হিসেবে স্পষ্ট ভাবে সে এক নারীকেই নির্বাচিত করেছে। সেই নারীর প্রতি ঘৃণা, যা তাকে প্ররোচিত করেছে এমনই ভাবতে পৃথিবীর সমস্ত নারীই ঘৃণ্য। কিন্তু ভাবনার প্রসার ঘটালে সে দেখতে পেত তার চারপাশের আরও অনেক দৈন্যকেও। হয়তো সে জানে, কিন্তু স্বীকার করতে চায় না ৷ কেন-না নিজস্ব দৈন্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ জড়িয়ে থাকে অক্ষমতাও। অক্ষমতাকে স্বীকার করে নিতে নিরন্তর অসুবিধা, কারণ নিজের মধ্যে প্রতিপালন করা অহং ও সান্ত্বনা তাতে ক্ষুণ্ন হয়ে থাকে। সে-ও জীবন ও জগৎ সম্পর্কে বিতৃষ্ণার প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে গেছে নারী। যে- নারী তার অন্তঃস্থ হয়ে অংশ নিচ্ছে ভাবনায়। যে-নারী তার সঙ্গে সঙ্গে চলেছে নিরবধিকাল। যে-নারীকে সে-ঘৃণা করেছে আদ্যন্ত। অথচ ভেবে ভেবে এ বিষয়ে সে নিশ্চিত হল একরকম। মৃত্যু নারী। এবং মৃত্যুর কোনও প্রতারণা নেই।
এই বিশ্বাসে দীক্ষা নেওয়া ছাড়া তার অন্য উপায়ও ছিল না, কারণ, আজন্মকাল বহু সম্পর্কের বহু নারীকে সে কখনও সুবর্ণমণ্ডিত দেখেনি। দেখেনি নির্ভেজাল। দেখেনি সরল, নিপাট—যেমন তাদের দেখলেই মনে হয়। নারীকে সে দেখেছে প্রতারক। জেনেছে, অনুভব করেছে, প্রতারক। নারী প্রতারক। নারী লোভী। মিথ্যাচারী। কিন্তু তার যুক্তিবোধ কোনও ব্যতিক্রমকে সামনে রাখতে চায়। কেন-না সাধারণের ব্যতিক্রম সাধারণকে প্রতিষ্ঠিত করে। অসত্যে পরিপূর্ণ, মিথ্যার ব্যাধিগ্রস্ত, ঘৃণ্য নারীকুলকে সে, অতএব, প্রতিষ্ঠা করে এই বলেই যে মৃত্যু নারী এবং মৃত্যুর মধ্যে কোনও অসত্য নেই, মিথ্যা নেই, কোনও প্রতারণা নেই। মৃত্যু অমোঘ, সুন্দর, মহান। কিন্তু সহজ নয়।
হ্যাঁ, মৃত্যু সহজ নয়। মৃত্যুকে গভীর আগ্রহে ও নির্ভরতায় গ্রহণ করার পরও তার মনে হয়েছে, মৃত্যু সহজ নয়। দোষ যদি থেকে থাকে কিছু আদৌ, এই মৃত্যুর, তা হল তার সহজ না থাকাই। অথচ, মনের গভীরে, পরম মমতায়, এইটুকুর জন্য সে দায়ী করে জীবনকেই। যেন কারওকে মৃত্যুর কাছে হস্তান্তরিত করা হবে কিনা এ বিষয়ে মৃত্যুই নেয় না শেষ সিদ্ধান্ত। নেয় জীবন। শেষ সিদ্ধান্ত নেয় জীবন, কেন-না, জীবন পক্ষপাতী বলে, পক্ষপাতদুষ্ট বলে, নিরপেক্ষ নয় বলেই, যখন- তখন মৃত্যুর হাতে তুলে দেয় সেই সব মানুষকে, যে মৃত্যুকে কামনা করেনি। যে সর্বাঙ্গীণ কামনা করেছে জীবনকে। মৃত্যুবাসনা যে আদৌ সম্ভব তা সে কল্পনাও করে না। এমন মানুষ, হয়তো তার সংসারের প্রতি দায়িত্ব অসীম।
শামুকখোল pdf Download link
Download / Read Online
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.