একশ এক গল্প pdf – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত Eksha Ek Galpo pdf – Achintya Kumar Sengupta

একশ এক গল্প pdf - অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত Eksha Ek Galpo pdf - Achintya Kumar Sengupta
একশ এক গল্প pdf - অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত Eksha Ek Galpo pdf - Achintya Kumar Sengupta

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত এর Eksha Ek Galpo pdf একশ এক গল্প pdf ডাউনলোড করুন এবং Eksha Ek Galpo pdf একশ এক গল্প pdf পড়ুন।

একশ এক গল্প pdf - অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত Eksha Ek Galpo pdf - Achintya Kumar Sengupta
একশ এক গল্প pdf – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত Eksha Ek Galpo pdf – Achintya Kumar Sengupta

Eksha Ek Galpo pdf একশ এক গল্প pdf সূচি

ভূমিকা, কালের ললাট, একটি আত্মহত্যা দ্বিতীয় জীবন প্রতিমা, অদৃশ্য নাটক, অন্য প্রাপ্ত, গাছ, ফুটনোট, মৃত্যুদণ্ড, আপোস, জ্যাম, তসবি, তাণ, থার্ডক্লাস, দুর্মদ, পরাবিদ্যা, পিক-আপ, বিন্দু, রক্তের ফোঁটা, সারপ্রাইজ ভিজিট, কলঙ্ক, তাজমহল মা নিষাদ লক্ষ্মী, আর্দালি নেই। আৰোগ্য একটুকু বাসা, কুমারী, দিন, মব্রিজ ওভারটাইম জারিজুরি, ছাত্রী, জানলা, বৈজ্ঞানিক, ছেলে, পাশা, রং নাম্বার, ঘুষ, সিঁড়ি, আর্টিস্ট, ঘব, ঘর কইনু বাহির, প্রাসাদশিখর, একরাত্রি, পাপ, গার্ডসাহেব, গঙ্গাযাত্রা, ভালে, সাহেবের মা, জাত-বেজাত, মুচি-রাখেন হাড়ি-হাজবা,  ফাক জমি, তদবির, ধান,

নতুন দিন, বিড়ি, মুন্সি, মেথর ধাওড়, সূর্যদেব স্বাক্ষর, অপরা, ওষুধ, কালোরক্ত কেরামত, কেরাসিন খেলাওয়ালী, ঘোড়া জনমত, টান, ডাকাত, দাঙ্গা, নুরবানু, বক্ত, বেদখল, যশোমতী, সাবেঙ, ইনি আব উনি, কাঠ, কালনাগ, চিতা, বাশবাজি যতনবিবি, সরবানু ও বোস্তাম, হাড়, পরাজয়, বৃত্তশেষ, শিলেকর ব্যাণ্ডেজ, খিল, মাটি, সাক্ষী, অপূর্ণ, ডিক, হরেন্দ্র ছুরি, ভিরক্ষী, চোর,  দুইবাব বাজা, অনবধানবশত “তসবির’ ও “তদবির গল্প দুটি বৎসরের ক্রমানুসারে সাজানো হয়নি।

Eksha Ek Galpo pdf একশ এক গল্প pdf ভূমিকা
ছোট গল্পের যদি কোন জ্যামিতিক চেহারা থাকত তবে সে সরলরেখা হত না, হত বৃত্তরেখা। গল্প যদি খালি সোজা চলে তবে হয় সে শুধু বৃত্তান্ত, কিন্তু যদি চলে বৃত্তবেখায়, তার বৃত্তের অন্তে সে হযে ওঠে সত্যিকারের ছোটগল্প। যেখানে বৃত্ত যত বেশি সম্পূর্ণ সেখানে ছোটগল্প তত বেশি সার্থক। যতদূর সোজা যাক, এক সময়ে গল্পকে মোড় ঘুরতে হবে, নিতে হবে তির্যক পাঁক, উড্ডীন বিহঙ্গের বঙ্কিম ও ত্বরিত প্রত্যাবর্তনের আকাবে; সোজা পথটা যে পরিমাণে মহব ছিল, ফিরতি পথটা হতে হবে ততোধিক ত্বরান্বিত। প্রতিক্ষেপ বা প্রতিঘাতের এই বেগবলটাই হচ্ছে ছোটগল্পের প্রাণশক্তি। অর্থাৎ, কাহিনী যেখানে এসে বাঁক নেবে, যেখানে প্রতিঘাত যত বেশি প্রবল হবে ও যত বেশি দ্রুত সে ফিরে আসবে তার পরিক্রমা শেষ করে তার প্রথম প্রারম্ভবিন্দুতে, তত বেশি সে বসোত্তীর্ণ হবে।

অন্ধকার লেখাগুচ্ছ pdf – শ্রীজাত Ondhokar Lekhaguccho pdf – Srijato

এক কথায, গল্প যদি না বল তবে সে বেঘোরে পড়ল যদি চলতে চায় সে সিধে তবেই সে অসিদ্ধ। তাই ছোটগল্প লেখবার আগে চাই ছোটগল্পের শেষ কোথায় সে বাঁক নেবে, কোন্ কোণে। আর কোন রচনায় আরম্ভেই আমরা শেষ জেনে বসি না, না উপন্যাসে, না কবিতায়, না বা নাটকে। আমাকে কতগুলি চরিত্র দাও আমি উপন্যাস শুরু করে দিতে পাবন, দাও একটা সংঘাতসঙ্কুল ঘটনা তুলে দিতে পারব নাটকের প্রথম অঙ্কের যবনিকা ভিন ক্ষেত্রেই রচনার উত্তেজনার লেখনীর দুর্বাবভাগ পথ কেটে চলে যেতে পারব এগিয়ে, কিন্তু শেষ না পেলে ছোটগল্প নিয়ে আমি বসতেই পারব না। শুধু ঘটনা যথেষ্ট নয়, শুধু চরিত্র যথেষ্ট নয়, চাই আমার সমাপ্তির সম্পূর্ণতা। সব জিনিস সমাপ্ত হলেই কোন সম্পূর্ণ হয় না কিন্তু ছোটগল্পের সমাপ্তিটা সম্পূর্তি হয়ে ওঠা চাই।

তাই ছোটগল্পের কল্পনা কৃতাবস্ত নয়, কৃতশেষ। যতক্ষণ না আমি শেষ জানি ততক্ষণ আমি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার আর সবকিছু, কিন্তু ছোটগল্প লেখক নই, ছোট ল্পের বেলায় চাই আমার শেষ, তাই হয়ত ছোটগল্প শেষ বা শ্রেষ্ঠ শিল্প। গল্পকে বৃত্ত বলেছি বটে, কিন্তু তা অত্যন্ত লঘুবৃত্ত। তার বেষ্টনী বক্র, গতি দ্রুত, পরিসর ক্ষীণ, সমাপ্তি তীক্ষ্ণ। বেশি ভাব বইবার মত তার জাযগা নেই, বেশি কথা কইবাব মত তার স্পৃহা নেই, বেশিক্ষণ অপেক্ষা করার মত তার সময় নেই। সে এসেছে চোবের মত চুপি-চুপি, চোর বলে তাকে কেউ ধরতে না পাবে। তার বেশবাস অল্প, আয়োজন সামান্য, পরিধি পরিমিত। শুধু তাকে ঘুরলেই চলবে না, কোন কেন্দ্রের উপরে কতটুকু জায়গা নিয়ে ঘুরবে তারও আগে থেকে নির্ধারণ চাই।

নরকের দ্বার pdf – অভীক মুখোপাধ্যায় Naroker Dwar pdf – Avik Mukhopadhyay

এই নির্ধারণে যত বেশি নিষ্ঠা তত বেশি রসস্ফুর্তি। বৃত্তের বাইরে অর্থাৎ উদ্বৃত্তে সে পরাঙ্মুখ। উপন্যাসে সহ্য হয় উদ্বৃত্তি, সহ্য হয় অপচয়, কবিতায় সহা হয় ইঙ্গিত, সহ্য হয় অস্পষ্টতা, কিন্তু ছোটগল্পে যেমন চাই স্পষ্টতা, তেমনি চাই সংযম, যেমন চাই সংকোচ তেমনি চাই সুব্যক্তি। জীবনের বিক্ষিপ্ত ও বিস্তৃতের মধ্যে থেকে সংক্ষেপে গ্রহণ বা এক কথায় সংকলনই হচ্ছে ছোটগল্পের উদ্দেশ্য, তার বাণ শব্দভেদী নয় লক্ষ্যভেদী। অর্থাৎ শব্দ শুনে অনুমানে সে তীর ছোঁড়ে না, সে জানে তার কি লক্ষ্য, সে লক্ষ্যভেদী। সত্যি করে বলতে গেলে, ভেদ করার চেয়ে বিদ্ধ করাই হচ্ছে ছোটগল্পের কাজ। ভেদ করা অর্থাৎ ছেদন করা বা বিদারণ করার মধ্যে শক্তির অপচয় আছে; কিন্তু লক্ষ্যমাত্র বিদ্ধ করা ঠিক তার পরিমিত শক্তির পরিচিতি।

কী আমার শেষ ঠিক করলুম, কী আমার চরিত্র ছকে নিলুম, তার পর এঁকে ফেললুম আমার বৃত্ত। যতদুর সংকুচিত করা সম্ভব ততদূর ঘনিয়ে নিলুম বক্রিমা। বাস, এর বাইরে আর পদার্পণ নেই। অবাস্তব সব বাদ দিয়ে দিয়ে এসেছি, ফেলে ফেলে এসেছি অকারণ ভাব। (এত মৃদু যে কুসুমহার সেও ভাব হয়ে ওঠে) এখন এক পা গণ্ডীর বাইরে যাওয়াই জলের মাছ ডাঙায় ওঠা, বাবণের ছোঁয়া লেগে সীতার পাতালে তলানো। এই যে স্খলন এইটেই ছোটগল্পের পক্ষে অধর্ম, অসংযম, অভিচার। পদ্মপাতায় নিটোল যে সম্পূর্ণ শিশিরবিন্দু, আপনার বৃত্তের মধ্যে সে সংহত, তেমনি হবে ছোটগল্প আপনার বৃত্তের মধ্যে বিধৃত পরিমিত; অকিঞ্চিৎকর চাঞ্চলো তার ভাবকেন্দ্র যাবে টলে, সে তার ধর্ম হারিয়ে হযে উঠরে হযত উপন্যাসের অংশবিশেষ।

এই পরিমাণবোধ হচ্ছে ছোটগল্পের নিরিখ। সংস্কৃত সাহিত্যে যাকে বলেছে ‘লাঘরাণিত’ অর্থাৎ ‘বিস্তবদোষশূন্য’–চাই সেই সংযম, সেই নিবৃত্তি। আমার যদি গাছ দরকার তবে তাতে আমি পাতা দেব না, যদি পাতা দরকার তবু আমি ছায়া বিছাব না তার তলায় । ঘোড়া যদি বা একটা ছোটাই তবে সেই সঙ্গে তার ল্যাজও ধাবিত হয়েছিল কিনা এ খবরে আমার দরকার নেই। যদি সোনার প্রজাপতি উড়ে বসে আমার কাদামাখা জুতোর উপর তবে দরকার নেই জানিয়ে সেই জুতো আমার চীনেবাড়ির না বাটা কোম্পানির থেকে কেনা। চাই নির্মম শাসন, ব্রতোদ্‌্যাপনের নিষ্ঠা। প্রত্যেক আর্টই সজ্ঞান সক্রিয় সৃষ্টি। থিয়েটারের রঙ মাখাব চেয়ে তোলাই কঠিন, তবু মেজে ঘষে তুলে ফেলতে হবে রঙ, প্রগল্ভ কৃত্রিমতা। ব্যূহ-নির্গমের পথ না জেনে ব্যুহ প্রবেশের স্পাটা কঢ়তার নামান্তর।

তাই লেখবার আগে জেনে নিতে হবে কি লিখতে হবে না। বহিপ্রবেশের আগে জেনে নিতে হবে বাহনির্গমের কৌশল। ছোটগল্প সেই লিখতে জানে যে লেখাব মাঝে থাকতে পাবে না লিখে। স্তব্ধতা অনেক সময় বাক্যের চেয়ে মুখর, সংযম অনেক সময় সংগ্রামের চেয়ে প্রবল, তেমনি ছোটগল্পের বেলায় অল্পতাই হচ্ছে বলতা, নির্ভূষণতাই অলঙ্কার। তার প্রয়োগফল সামান্য কিন্তু যোগফল বৃহৎ। এই সম্পর্কে ব্যাঘ্রাক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সাদৃশ্যটা কল্পনা করা যেতে পারে। উপমাটা যদিও সম্ভোগ্য নয় তবু সার্থক উপমা। ধরুন আপনাকে বাঘে কামড়ে ধরেছে, মুখে করে টেনে নিয়ে চলেছে ছুটে। যদি আপনার তখনও জ্ঞান থাকে, আপনি কি দেখবেন, বর্তমানে ও ভবিষ্যতে, সেই দোদুল্যমান মুহূর্তে?

বর্তমানে দেখবেন বাঘ ও তার বেগ, ভবিষাতে অবধারিত মৃত্যু, আশেপাশের গাছপালা ঝোপঝাড় নয, নীল নির্মল আকাশ নয়, নয় বা আর কোন নিসর্গ শোভা। আক্রমণ থেকে সংহার, এই দুই অন্তঃসীমাব মধ্যেকার যে পথ সে পথ যত দীর্ঘ বা বক্রই হোক না কেন তার অস্তিত্ব আর সমাপ্তি সেই সংহারে। তেমনি ছোটগল্পের সে পথ তাতেও উদ্যোগ থেকে নির্ভুল উপসংহারের মাঝখানে কোনদিকে তাকাবার জো নেই, কোথাও বিশ্রাম করবার স্থান নেই, বিস্ময়কে বাঘের মতন কামড়ে ধরে একোদ্দিষ্ট হয়ে ছুটে আসতে হবে স্থিরীকৃত লক্ষ্যস্থলে। শরবো বা লক্ষিত বিষয়ে বিদ্ধ করতে হবে শরমুখ। আরও একটা উপমা নেওয়া যেতে পারে। ধরুন, এক জায়গায় বোমা পড়ছে, আপনি পালাবেন, এমন সময়ে এল একটা এরোপ্লেন, বললে, চলুন শিগির।

আপনি হতবুদ্ধি হয়ে তাড়াতাড়ি নিতে গেলেন আপনার ক্যাশবাক্সটা, জামাকাপড় ভর্তি আপনার স্যুটকেস, আপনার প্রয়োজনীয় পাথেয়, কিন্তু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখলেন এরোপ্লেন গেছে চলে, আপনাকে নিতে সে এসেছিল কিন্তু আপনার ভার নিতে সে আসে নি, তাই আপনার আর পালানো হল না। সোনার তরী গেল চলে, আপনি পারে পড়ে রইলেন। কিন্তু যে জিনিস গুছোতে কালক্ষেপ করে নি, চলে গেছে তখনকার সেই অবস্থাতেই এক বস্ত্রে, সেই পেল মুক্তি, পৌঁছতে পানল তার স্বদেশে। উপন্যাসের বেলায় আমাদের দু-চোখ খুলে রাখতে হবে কিন্তু ছোটগল্পের বেলায় হতে হবে আমাদের এক চক্ষু হরিণ, ব্যাধকে রাখতে হবে সর্বদা চোখের দিকে, যাতে দ্রুতবেগে পৌঁছে যেতে পাবি নিরাপদ আশ্রয়ে। দু’চোখ খুলতে গেলেই দৃষ্টিপ্রমে পড়ব গিয়ে ব্যাধের শবসীনায়।

এই যে একরোখা হয়ে ছোটা প্রাবন্তবিন্দু থেকে পরিশেষবিন্দুতে, এর মাঝে ফুটবে বসের এককত্ব এবং সেইখানেই কবিতার সঙ্গে ছোটগল্পের মিল। অর্কেস্টা তো নয়ই, বাজবে একতারা এবং তার সঙ্গে থাকবেও না কোন সঙ্গীত। বিষয়ে ও ব্যঞ্জনায় থাকবে শুধু এক খুব। আগাগোড়া এক ব্যবহার, এক বিধি। চলবে না বসের কোন দ্বৈধ উপাদানের কোনে মিশেল। বিষয় আমার যাই হোক, আঙ্গিক আমার যে প্রকাবের হোক, সংক্ষিপ্ত সাবভাগ নিয়ে আমার কারবার, এবং যা সাব তাতে কখনও ভেজাল থাকতে পারে না। তারপরে সবচেয়ে যা বিস্ময়ব, গল্পের যা শৃঙ্গভাগ, তা হচ্ছে বিস্ময়-উৎপাদন। এক কথায় যাকে বলা যায় বিস্খাপন।

গল্পের সেই তির্যককোণে একটি অভাবিত বিস্ময় থাকবে লুকিয়ে, এই বিস্ময়ই গল্পের প্রাণবস্তু। ইংরিজিতে খড় ছাড়া যেমন ইট হয় না, তেমনি এই বিস্ময় ছাড়া হতে পাবে না ছোটগল্প। পাঠককে চমকে দিতে হবে খোঁচা মেরে, এই আঘাতের থেকে ফুটবে আনন্দ, এই চমকের থেকে উদ্ভাসন। এই বিস্ময় বাইরে থেকে আমদানি করা আকস্মিক কোন চমক হবে না, এই বিস্ময়, রুধিবে যেমন যন্ত্রণা, তেমনি গল্পের মধ্যেই নিহিত ও অনুস্যুত হয়ে থাকবে। এই বিস্ময় হবে যত অন্ধকারে যত অপ্রত্যাশিত অবহেলিত হলে, ততই খুলবে তার শোভা, জমবে তার রস। এই বিস্মযশৃঙ্গ যদি পাঠক আগের থেকেই আভাসে বুঝতে পাবে তবে ছোটগল্পের আসব যাবে ভেঙ্গে, পথশ্রম হবে পণ্ডশ্রম। এই চমক দেখাটুকুই যখন ছোটগল্পের রসাধাব তখন তাকে সযত্নে সমস্ত কৌতূহলের থেকে সংরক্ষিত করাই হচ্ছে কৌশল।

পুকুরের মধ্যে মাছ, মাছের পেটে কৌটো এবং সেই কৌটোর মধ্যে প্রাণ তেমনি করে এই বিস্ময়টুকু রাখতে হবে লুকিয়ে এবং যখন তার দ্রুত উদ্ঘাটন হবে তখন বহু বিদ্যুদ্দীপ্তি এক সঙ্গে জ্বলে উঠেই মিলিয়ে যাবে না, স্থির হয়ে থাকবে আকাশের চিৎ স্থাযিতায়। ক্ষণিক একটি মুহূর্ত এক মুহূর্তে এসে উপনীত হবে। তবে আমরা কী পেলাম- বাক বা বৃত্তরেখা, শেষের প্রতি আরম্ভের শাণিতার ধাবমানতা, বিস্তর বর্জন বা ভাবলাঘর। রসের এককত্ব এবং অপ্রত্যাশিত বিস্ময়-সৃষ্টি। এবং সর্বশেষে চাই সেন্স অব কর্ম বা আকাবচেতনা এই আকাবের পরিমিতি থেকেই রসের সমগ্রতা আসে। আকারে যদি শৃঙ্খলা না থাকে, আনুপাতিক সৌষ্ঠব না থাকে, তবে রসে পড়ে ব্যাঘাত। প্রসঙ্গ হয়ে ওঠে পবিশিষ্ট। অনেক গল্প শুধু এই বিন্যাসের সামঞ্জস্যের দোষে, প্রমিত সংস্থাপনার অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।

গল্পের আর সব উপাদান পেলেই আমরা রচনায় প্রবৃত্ত হই, কিন্তু আকার সম্বন্ধে আমাদের কোন পরিমাণজ্ঞান থাকে না। পরিমাণ জানলেই চলে না, পরিণাম সম্বন্ধেও সচেতন হওয়া দরকার। গল্পের ধর্মনাশ হয় শুধু অসংযমে বা বসদ্বৈধে নয, বেশিরভাগ হয় এই কেন্দ্রচ্যুতিতে। তাই বসসমগ্রতাব জনোই চাই যথার্থ আঙ্গিক, লিখনশৈলী, পর্যাপ্ত ও সমীচীন ভাষা শিল্পে রূপ না হলে বস হয় না। এই বসস্কৃতির জন্যেই রূপদক্ষতার প্রয়োজন। সৌষ্ঠব না থাকলে ঐশ্বর্যকে ধরবে কী করে? গত চল্লিশ বছরেরও উপর গল্প লিখছি, ১৯২১ সাল থেকে ১৯৬৫–লিখে চলেছি সমস্ত খণ্ডকালকে ছুঁয়ে-ছুঁয়ে, ক্রমবাহিতার সঙ্গে তাল রেখে। ‘দুইবার বাজা’ ‘কল্লোল’- কালে লেখা, প্রথম সাড়া জাগানো গল্প, একটি কণ দরিদ্র বাঘ যুবকের জীবনের স্বপ্ন ও সংগ্রামের কাহিনী।

তবু যে কোন মানুষই বুঝি জীবনে দু-বার রাজা হয়, একবার যখন সে বিয়ে করে, আরেকবার যখন সে মবে। ভাই গল্পের অনবত্ত দুবার রাজা হল। আর সেই ছোট ছাত্র- ছেলেটিকে তো স্বচক্ষে দেখা, যে পেন্সিল দিয়ে বালি কাগজের খাতায় তার মৃত দিদির কথা ভেবে কবিতা লিখেছিল- বঙদি বা বড় তারা। মুনসেফি নিয়ে বাংলাদেশের দূর মফস্বলে, গ্রামে-শহরে, পুবে-গঞ্জে, চৌকিতে- মহকুমা ঘুরেছি- দু যুগেরও বেশি তার কত দৃশ্য, কত শোভা, ঘটনার কত বিচিত্র সম্পদ। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি হয়েছি, নতুন জায়গার দূরত্ব ও চরিত্র ভেবে মন বিষয় হয়ে গেছে, কিন্তু সেই জায়গায় পৌঁছে দেখেছি, গল্পের কত শত উপাদান। চিরজন্মের যে পরিচিত সেই সাহিত্যের সঙ্গেই সাক্ষাৎকার হয়েছে।

দেখেছি শুধু নদী-নালা খাল-বিল মাঠ যেত গাছ-গাছালি নয়, দেখেছি মানুষ, কত রকমের মানুষ, আর কত তার মহিমা। শুধু শহরে সভা শিক্ষিতেরাই নয়, গ্রামের চাষাভূষা হাড়ি-মুচি ডোম ডোকল সাবেও খালাসি মেঘন-বাঙঙ সবাইকে ডেকে এনেছি সমান পঙক্তিভোজে। দেখেছি যা কিছু মানবীয় ভাই মাননীয় ভাই প্রাণের পরম আদবের ধন, পরম সন্ধানের বস্তু। প্রকৃতিও আছে বইকি, অব্যাহত হয়ে আছে। জন্ম হয়েছিল নোয়াখালিতে, কত কারণেই ভূগোলে ও ইতিহাসে সে স্থান প্রসিদ্ধ, আর তারই উত্তাল ভাঙন নদীর ছবি এঁকেছিলাম ‘কন্দ্রের আবির্ভাবে’। তবু মানুষের মত কিছু নয়, প্রকৃতিরও উজ্জীবন এই মানুষে। একটা মানুষ কম করে পাঁচটা উপন্যাস, পঞ্চাশটা ছোটগল্প ও পাঁচশটা কবিতা বয়ে নিয়ে বেড়ায়—কে তা উদ্ধার করে?

মানুষের হৃদয়ের একটা টুকরো কুড়িয়ে পাওয়াই যেন এক সাম্রাজ্যের রাজা হয়ে যাওয়া। নইলে ‘চুরি’ গল্পের গৌরীয়া কী দিয়েছিল? একটা টুকরোর চেয়েও কম—একটি কটাক্ষ একটু হাসি। তাই বুঝি অনন্ত কালের বৈভব হয়ে রয়েছে। নেত্রকোনা বেল স্টেশনের নির্জন পথের ধারে মুদিখানায় তাকে দেখেছি। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে পালিয়ে এসেছে দেশ ছেড়ে, একটা ধাবাল চুরি সঙ্গে রাখে আত্মরক্ষার জন্যে অথচ তার কালো চোখে যে ছুরি ঝিলিক মারে তার রক্তের নিমন্ত্রণ আরেক ভাষায়। তার দোকানে অনেক বাজে খদ্দেরের ভিড় হতে পারে, তাই বলে মহকুমার হাকিমসাহেব এসে শুকনো মুখে মোড়া পেতে বসে থাকবে? কিন্তু গৌরীয়ার ভাগ্যে তো এ পরমপ্রাপ্তি। তবু সে কিনা বলছে: ‘তুমি বাড়ি যাও বাবুসাহেব। আমি ছোট আছি কিন্তু তুমিও ছোট হবে এ দেখতে আমার বুক ফেটে যাবে।’

কিন্তু বিস্ময়টা কি শুধু প্রত্যাখানে? না, বিস্ময়টা একটু হাসিতে। যখন এস.ডি.ও. বদলি হয়ে চলে যাচ্ছে তখন রাস্তায় চোখাচোখি হতেই গৌরীরা অল্প একটুখানি হাসল। কিন্তু সে কি হাসি? না এক শাশ্বত কান্নারই অনুলিখন? ‘হরেন্দ্র’-কেও দেখেছি নেত্রকোনায়। কোর্টে পাখা টানত। ছ ফুট লম্বা, শুকনো দড়ি-পাকানো চেহারা। নিবস্তন মাথা ধরায় ভুগছে। রোগের বুঝি প্রতিকার হয় যদি সে বেগুনিকে বিয়ে করতে পাবে। কিন্তু বেগুনির বাবা সমাজ মানে, বিনাপণে মেয়ের বিয়ে দেবে না অথচ ছ কুড়ি টাকা পণ দিতে পারে হবেন্দ্রর সেই সাধ্য নেই। তারপর গুণ্ডারা এসে যখন বেগুনিকে সমাজের বাইরে এনে ফেলে দিল তখনও হবেন্দ্র তাকে বিযে করতে পেল না। ‘কাউকে রাজি করাতে পারলাম না হুজুর’। হরেন্দ্রর সেই কান্না উপবাসী বুভুক্ষু মানুষেরই নিরুপায যন্ত্রণার অভিব্যক্তি।

‘সাহেবের মা’-ও সেই মামনসিং-এর মেয়ে। সেখানেই দেখেছি চাষী গবিব মুসলমান মেয়ের নাম সাহেবের মা রাখে, কখনও বা ইংরেজের মা, বিলাতের মা। সাহেবের মার ছেলে মারা গেছে কিন্তু যেহেতু সে সাহেবের মা, কে তাকে শিখিয়ে দিল ইনস্পেকশনে আসা ছোকবা এস.ডি.ও সাহেবই তার হারানো ছেলে। এস.ডি.ও – র বাংলোতে এসে তার স্বপ্ন ভাঙল, দেখল সাহেবের এক সত্যিকার মা আছে, “পিবতিমের মত সুন্দর’, তাকেই সাহেব মা ডাকে। ফিরে গেল সা হেবের মা কিন্তু তার ছেলে সাহেবের জনো রেখে গেল একটা কাগজের ঠোঙায় কটি গুঁড়ো-গুঁড়ো চিনিরবাতাসা।

‘অপূর্ণ’-র কিশোর দেবেন্দ্রকে দেখেছি খুলনার ফুলতলাম। টেবিলের নিচে সাবরেজিস্ট্রারের পায়ের কাছে বসে দু হাতের থাবড়ায় সে মশা মারত। দুষ্টুমিতে টলটল করা চোখে এমন একটা ভাব ছিল যেন কোন এক নদীর পার থেকে এসেছে, আবার চলে যাবে অন্য পারে হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। আশ্চর্য, শই সে গেল একদিন, তার ক বছরের জমানো মাইনের দৃশো টাকারও বেশি—একটা আধলার জনোও সে ফিরল না।

‘আরোগ্য’র কিশোর সবলকে বারুইপুরের লাইনে দেখেছি। বিনাটিকিটে ট্রেন চড়ে সে ধরা দিত যাতে জেলে গিয়ে বিনা পয়সায় ভাব টি-বি-র চিকিৎসা হয়। বিনা টিকিটের জন্যে জেল তো বেশি দিনের হয় না, তাই ডাক্তার বললে বেশিদিনের জন্যে আসার মত কিছু ব্যবস্থা করতে। সরল পকেট মারতে শুরু করল। ক্রমান্বয়ে জেলে গিয়ে গিয়ে তার বোগ সারাল কিন্তু নতুন ব্যাধি পকেট-মারাও সারল কি?

‘ওষুধ’ গল্পের আক্কেলালির জ্বর সারল না। সাবল না, গাঁযে সেই ওষুধ নেই। আকলালির বাবা হুকুমালি জোরদার তালুকদার, গ্রাম্য ডাক্তারকে হুকুম করেছে শহর থেকে ইনজেকশান নিয়ে আসতে। ইনজেকশানের বাক্স খুলতে দেখা গেল ভেতরের খোপে অ্যামপিউল নেই, আছে কাগজের টিপলে। সবাই ভাবলে হুকুমালি এবার ডাক্তারের মাথা নেবে। কিন্তু কী করল হুকুমালি? এক তোড়া টাকা দিল ডাক্তারকে।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত এর Eksha Ek Galpo pdf একশ এক গল্প pdf ডাউনলোড করুন এখান থেকে এবং Eksha Ek Galpo pdf একশ এক গল্প pdf পড়ুন এখান থেকে

Be the first to comment

Leave a Reply